PAK vs ENG: রূপকথার গল্পের মত ছিলো পাকিস্তানের ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপের যাত্রাপথ। প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর যখন সবাই ধরে নিয়েছে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় হচ্ছেই পাকিস্তানের, দৈবের অদৃশ্য চালে নেদারল্যান্ডস হারিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা’কে। আর বাংলাদেশ’কে নিজেদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হারিয়ে সেমিফাইনালের রাস্তা পরিষ্কার করে ফেলেন বাবর আজম, মহম্মদ রিজওয়ান’রা। নিউজিল্যান্ড’কে হারিয়ে যখন ফাইনালে পৌঁছেছিলো পাকিস্তান, তখন মনে করা হচ্ছিলো ক্রিকেট ঈশ্বর’ও যেন চাইছেন সিন্ধুর তীরেই আসুক ট্রফি’টি। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন বর্তমান পাক দলের বিশ্বকাপ অভিযানের সাথে ১৯৯২ সালের পাকিস্তান দলের যাত্রাপথের মিলের কথা। সেইবার’ও হোঁচট খেয়ে শুরু করে পাকিস্তান দল,হারে ভারতের কাছে। কিন্তু ঠিক সময় ঘুরে দাঁড়িয়ে ইমরান খানের হাতেই ট্রফি তুলে দেন পাকিস্তান খেলোয়াড়’রা। এইবার’ও সেই চিত্রনাট্য দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। কিন্তু আশাহত হতে হয়েছে। ফাইনালে পাকিস্তান’কে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলার সময় হঠাৎ হাঁটুতে চোট পান শাহীন আফ্রিদি, সেই ঘটনা’ই ম্যাচের অভিমুখ বদলেছে বলে জানান বাবর আজম। শাহীনের চোট পাওয়ার ঘটনা নিয়ে লাইভ টিভি’তে এবার বাকবিতণ্ডায় জড়ালেন ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ ওয়াসিম আক্রম।
শাহীনের চোটে বদলালো ম্যাচের ভাগ্য-

টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে টসে জিতে আগে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান’কে ব্যাট করতে পাঠান ইংরেজ অধিনায়ক জস বাটলার। ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এর সামনে বড় রান করতে পারেন নি কোনো পাক ব্যাটার। একমাত্র শান মাসুদ ৩৮ এবং অধিনায়ক বাবর আজম ৩২ রান করেন। হোঁচট খেতে খেতে পাকিস্তানী ইনিংস এসে পৌঁছায় ১৩৭ এ। টি-২০ বিশ্বকাপের মত প্রতিযোগিতায় ১৩৭ কখনোই যথেষ্ট রান নয়। তবুও বল হাআতে দারুণ লড়লেন শাহীন আফ্রিদি, হ্যারিস রউফ’রা। শুরুতেই হেলস কে আউট করে দেন শাহীন। জস বাটলার’কে ফিরিয়ে দেন হ্যারিস রউফ। প্রথমে ইংল্যান্ড সহজে জিতবে মনে হলেও ধীরে ধীরে বোলারদ্র দাপটে ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান। যখন মনে করা হচ্ছে এবার বোলিং-এর ফাঁস আরও চাপতে চলেছে পাক দল তখু’ই ঘটে অঘটন। শাদাব খানের বলে হ্যারি ব্রুকসের ক্যাচ ধরতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পান শাহীন শাহ আফ্রিদি (Shaheen Shah Afridi)। সেই হাঁটুর চোটেই দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন, চোট সারিয়ে ফিরে ছন্দে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু আসল সময়ে আবার ভোগালো হাঁটুর চোট। মাঠের বাইরে বেরিয়ে যেতে হয় পাকিস্তানের সেরা বোলার’কে। এই ঘটনা’র পরেই ম্যাচে ফেরে ইংল্যান্ড। ইফতিকার আহমেদের পাঁচ বলে ১৩ রান নিয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেন বেন স্টোকস। ম্যাচ হেরে অধিনায়ক বাবর আজম বলেন, “শাহীনের চোটের জন্যই আমরা ম্যাচে পিছিয়ে পড়লাম।” এবার এই ঘটনা নিয়ে বয়ান দিলেন ওয়াসিম আক্রম’ও (Wasim Akram)।
লাইভ টিভি’তে মেজাজ হারালেন আক্রম-

টি-২০ বিশ্বকাপের সময় পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলের ‘প্যাভেলিয়ন’ নামক স্পোর্টস শো’টি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। ওয়াসিম আক্রম (Wasim Akram) ছাড়াও বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াকার ইউনিস (Waqar Younis), শোয়েব মালিক (Shoaib Malik) এবং মিসবা উল হক। পাকিস্তান বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার পর আলোচনা হচ্ছিলো নানা বিষয় নিয়ে। এরই মধ্যে সাবিত রহমান নামে এক দর্শকের একটি ট্যুইট আক্রম’কে পরে শোনান সঞ্চালক। আর তাতেই চটে লাল হয়ে যান তিনি। সাবিত লিখেছিলেন, “ নওয়াজ শরীফ যেরকম ফেরার, সেই রকম আরেকজন ফেরার হলেন শাহীন আফ্রিদি।” চোট পেয়ে নিজের ওভার শেষ করতে পারেন নি, তা উল্লেখ করে সাবিত লেখেন, “ শাহীন, তোমার উচিৎ ছিলো বাকি পাঁচটি বল করা। কিন্তু তুমি তো মাঠ ছেড়ে পালালে। বিশ্বকাপের থেকে বড় আর কোনও মঞ্চ হয় না, সেখানে যদি মাঠ থেকে তোমার মৃতদেহ বেরোয়, সেটাও ময়দান ছেড়ে পালানোর থেকে ভালো। তুমি যদি মাঠে প্রাণ হারাতে তোমায় শহীদ বলা হত। অন্তত ফেরার বলা হত না।” তরুণ বোলারের প্রতি এই অপমানজনক মন্তব্য মানতে পারেননি আক্রম (Wasim Akram)। রাগে ফেটে পড়েন।
শাহীনের সমর্থনে লড়লেন আক্রম-

ক্রিকেটারদের গ্ল্যামারের চশমার আড়ালেই দেখে অভ্যস্ত জনসাধারণ। তাঁরাও যে সাধারণ মানুষ, তাঁদের রাগ-দুঃখ-বেদনা-হতাশা রয়েছে অনেকসময় সে কথা ভুলে যায় ক্রিকেটপাগল জনতা। সেইজন্যই ঢুকে পরে কোহলি’র হোটেল রুমে বা মাঠের রেলিং টপকে ছুটে যায় প্রিয় তারকা’কে হাতের কাছে পেতে। শাহীনের বিরুদ্ধে এই কুরুচিপূর্ণ আক্রমণ মেনে নিতে পারেন নি পাকিস্তানী কিংবদন্তী ওয়াসিম আক্রম। প্রচন্ড রেগে দু’কথা শুনিয়ে দেন ট্যুইটার ব্যবহারকারী’কে। তিনি লাইভ টিভি’তেই বলেন, “ আপনার প্রশ্নের উত্তর কি দেবো? আপনি অভব্যতা করছেন। আপনি ভদ্রতা-সভ্যতা বোধ হারিয়েছেন, জানেন না কাকে কি বলতে হয়। নিজের দেশের খেলোয়াড়’কে এইভাবে আক্রমণ করছেন। আমি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ। আপনি আমার সামনে থাকলে বুঝিয়ে দিতাম।”
দেখে নিন আক্রমের প্রতিক্রিয়া’টি-
Sabit Rahman Satti stay away from Wasim Akram pic.twitter.com/XpXnziUfSq
— Ghumman (@emclub77) November 13, 2022