২০২২ সালে যখন আইপিএলে (IPL) যোগদান করেছিলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস (LSG) ফ্র্যাঞ্চাইজি, তখন থেকেই তাদের অধিনায়ক হিসেবে রয়েছেন কে এল রাহুল (KL Rahul)। পাঞ্জাব কিংস ছেড়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন সুপারজায়ান্টসদের সংসারে। প্রথম মরসুমে দলকে প্লে-অফে নিয়ে যাওয়ার পিছনেও বড় ভূমিকা ছিলো তাঁর। দ্বিতীয় মরসুমের মাঝপথে দুর্ভাগ্যের শিকার হন তিনি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু’র বিরুদ্ধে ফিল্ডিং করার সময় চোট পান হিপ রিফ্লেক্সর পেশীতে। গোটা টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যেতে হয় রাহুল’কে (KL Rahul)। করাতে হয় অস্ত্রোপচার। প্রায় চার মাস মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। তাও প্লে-অফে গিয়েছিলো দল। ২০২৪-এর আইপিএলে অবশ্য গোটা মরসুমেই তাঁকে পেয়েছে লক্ষ্ণৌ। আশানুরূপ ফলাফল ফ্র্যাঞ্চাইজিকে উপহার দিতে পারেন নি ক্যাপ্টেন কে এল।
নিজেদের তিন বছরের যাত্রাপথে ২০২৪-এই প্রথম প্লে-অফের যোগ্যতাটুকুও অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস (LSG)। মরসুমের শুরুটা ভালো হলেও পরে একের পর এক ম্যাচে হতাশাজনক পারফর্ম্যান্স পিছিয়ে দিয়েছে তাদের। নবাবের শহর পয়েন্ট তালিকায় শেষ করেছে সপ্তম স্থানে। অধিনায়ক রাহুলকে নিয়ে কর্মকর্তারা যে খুশি নন তা বোঝা গিয়েছিলো দলমালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কার (Sanjiv Goenka) আচরণেই। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ১০ উইকেটে পরাজয়ের পর মাঠে দাঁড়িয়েই রীতিমত রাহুলকে (KL Rahul) ধমক দিতে দেখা গিয়েছিলো তাঁকে। এরপর থেকেই কর্ণাটকের ক্রিকেট তারকা ও লক্ষ্ণৌ ফ্র্যাঞ্চাইজির সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে বলে খবর। জোর গুঞ্জন যে ২০২৫-এর আইপিএলের মেগা অকশনের আগেই ‘রিলিজ’ করে দেওয়া হতে পারে রাহুলকে।
Read More: টলছেন কাম্বলি, প্রাক্তন তারকার শারীরিক অবস্থা দেখে স্তম্ভিত ক্রিকেটবিশ্ব !!
লক্ষ্ণৌর নতুন অধিনায়ক হবেন হার্দিক?
কে এল রাহুলের (KL Rahul) আইপিএল ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে জোর চর্চা। লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের হয়ে ২০২৫-এ তাঁর যে মাঠে নামা মুশকিল, তা দিনের আলোর মত পরিষ্কার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি দলে তাঁর সতীর্থ অমিত মিশ্র (Amit Mishra) অবধি একটি পডকাস্ট অনুষ্ঠানে এসে জানিয়েছেন যে “ফ্র্যাঞ্চাইজি নিঃসন্দেহে উন্নততর অধিনায়ক খুঁজবে আগামী মরসুমে।” অভিজ্ঞ লেগস্পিনারের মন্তব্য রাহুল-লক্ষ্ণৌ সম্পর্কের ভাঙনের সত্যতায় একপ্রকার সিলমোহর দিয়ে দিয়েছে বলে মত ক্রিকেটজনতার। কে হতে পারেন এই ‘উন্নততর’ অধিনায়ক, আপাতত সেই নিয়েই শুরু হয়েছে চর্চা। লক্ষ্ণৌ স্কোয়াডে রয়েছেন নিকোলাস পুরান (Nicholas Pooran), মার্কাস স্টয়নিসের মত তারকা। সম্ভবত ‘রিটেনড’ হবেন দু’জনেই। তাঁদের পক্ষে ভোট দিচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকের মতে রাহুলের উত্তরসূরি হতে পারেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)।
গত মরসুমে গুজরাত টাইটান্স (GT) ছেড়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে (MI) ফিরেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। ২০২২-এর আইপিএল জয়ী অধিনায়ক’কে নেতৃত্বের ব্যাটন সমর্পণ করেছিলো ফ্র্যাঞ্চাইজি। কিন্তু আশাপূরণ করতে পারনে নি তিনি। ব্যাট হাতে করেছেন মাত্র ২১৬ রান, নিয়েছেন ১১ উইকেট। তাঁর হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের ছবিই যেন প্রতিফলিত হয়েছে দলের প্রদর্শনেও। দশ দলের লীগে মুম্বই গতবার শেষ করেছে শেষতম স্থানে। এছাড়াও রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) মত কিংবদন্তির হাত থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া নিয়ে সমর্থকদের রোষের মুখেও পড়তে হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে। সাজঘরেও দেখা গিয়েছে বিভাজন। ব্যর্থতার অন্ধকার থেকে বেরোতে এবার হার্দিককে রিলিজ করতে পারে মুম্বই। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে পারে লক্ষ্ণৌ। নিলামে তাঁকে দলে নেওয়ার পাশাপাশি, দেওয়া হতে পারে নেতৃত্ব’ও।
রাহুল’কে পেতে আগ্রহী বেঙ্গালুরু-
লক্ষ্ণৌ তাঁকে ছেড়ে দিলেন কোন দলে যেতে পারেন কে এল রাহুল (KL Rahul)? পারমুটেশন-কম্বিনেশন শুরু করে দিয়েছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। তাঁরা মনে করছেন যে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) হতে পারে তাঁর আদর্শ গন্তব্য। নিজেদের ধারণার পিছনে যুক্তিজালও প্রস্তুত তাঁদের। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে নিজেকে ইতিমধ্যেই বহুবার আইপিএলের মঞ্চে প্রমাণ করেছেন রাহুল। দীনেশ কার্তিক (Dinesh Karthik) সরে যাওয়ার পর একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নিতান্ত প্রয়োজন বেঙ্গালুরুর। সেই শূন্যস্থান সহজেই পূরণ করতে পারেন কে এল (KL Rahul)। পাশাপাশি তিনি কর্ণাটকের ‘ঘরের ছেলে’, এর আগে ২০১৬ সালে খেলেওছেন বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে। মানিয়ে নিতে বিন্দুমাত্র সময় লাগবে না তাঁর। একইসাথে ফাফ দু প্লেসি’কে ছেড়ে দিতে পারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স (RCB)। তাঁর বদলি হিসেবে রাহুল একইসাথে সামলাতে পারবেন ওপেনিং ও অধিনায়কত্ব।