শেষের পথে ২০২৩। বছরের শুরুটা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ জয় দিয়ে করলেও, শেষটা ভালো হয় নি টিম ইন্ডিয়ার। সেঞ্চুরিয়নে বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মা’রা (Rohit Sharma) দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইনিংস ও ৩২ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ ড্র রাখতে পেরেছে ভারত, জিতেছে ওডিআই সিরিজ’ও। কিন্তু লাল বলের ফর্ম্যাটে মুখ থুবড়েই পড়তে হয়েছে কাগিসো রাবাডা (Kagiso Rabada), নান্দ্রে বার্গারদের পেস আক্রমণের সামনে। ব্যাট হাতেও ভারতের সামনে প্রতিরোধের প্রাচীর খাড়া করতে দেখা গিয়েছে ডিন এলগার (Dean Elgar), মার্কো ইয়ানসেনদের। তাঁদের তৈরি করা রানের পাহাড়ের নীচেই চাপা পড়ে টিম ইন্ডিয়া।
টেস্ট ক্রিকেটে ২০২৩ বছরটা ভারতের জন্য কেটেছে ভালোয়-মন্দয় মিশিয়ে। টি-২০ ও একদিনের ক্রিকেট নিয়মিত খেললেও দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে বিশেষ মাঠে নামে নি দল। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি জিতেছে ২-১ ফলে। নাগপুর ও দিল্লীতে জয়ের পর হারতে হয়েছিলো ইন্দোরে। এরপর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালে অজিদের বিরুদ্ধেই জুটেছিলো পরাজয়। ভারত লাল বলের খেলায় জয়ে ফেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। দুই ম্যাচের সিরিজ জেতে ১-০ ফলে। এরপর ডিসেম্বরে পদস্থলন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। টেস্টে ভারতের ধারাবাহিকতার অভাবের নেপথ্যে ব্যাটারদের ফর্মের ওঠানামাকে দায়ী করছেন বহু বিশেষজ্ঞ। ইএসপিএন ক্রিকইনফো প্রকাশিত বছরের সেরা টেস্ট একাদশে কোনো ভারতীয় ব্যাটারের না থাকা, সেই মতকেই প্রতিষ্ঠা দেয়।
Read More: SA vs IND: দ্বিতীয় টেস্টের আগে বড় ধাক্কা খেল দল, চোট পেয়ে কেপটাউনে নেই এই তারকা ক্রিকেটার !!
ব্যাটিং বিভাগে নেই কোনো ভারতীয়-

জনপ্রিয় ক্রিকেট পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো প্রকাশিত বছরের সেরা টেস্ট একাদশে ওপেনার হিসেবে থাকছেন অস্ট্রেলিয়ার উসমান খোয়াজা (Usman Khawaja) ও ট্র্যাভিস হেড (Travis Head)। খোয়াজা এই বছর লাল বলের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। ২৪ ইনিংসে ৫২.৬০ গড়ে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১২১০ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৯৫। ট্র্যাভিস হেড ২৩ ইনিংসে ৯১৯ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। ইএসপিএন ক্রিকইনফো প্রকাশিত একাদশে তিন নম্বরে রয়েছেন কেন উইলিয়ামসন (Kane Williamson)। কিউই তারকা ৭ ম্যাচে ৫৭.৯১ গড়ে করেছেন ৬৯৫ রান। করেছেন ৪ শতরান। চারে রয়েছেন ইংল্যান্ডের জো রুট। ৮ ম্যাচে ২টি শতরান ও ৬৫.৫৮ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৭৮৭ রান। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি ৫ নম্বরে রয়েছেন।
ইংল্যান্ডের তরুণ তুর্কি হ্যারি ব্রুককেও (Harry Brook) সামিল করা হয়েছে সেরা একাদশে। তিনি ২০২৩ ক্যালেন্ডার ইয়ারে ৮ ম্যাচে ৫৩.৯২ গড়ে করেছেন ৭০৮ রান। সর্বোচ্চ রান শিকারীদের তালিকায় রয়েছেন ষষ্ঠ স্থানে। দিতীয় কিউই ক্রিকেটার হিসেবে একাদশে রয়েছেন উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেল। ৭ ম্যাচে ৩৬.০৮ গড়ে তিনি করেছেন ৪৩৩ রান। ২২টি ক্যাচ ও ৭টি স্টাম্পিং-ও করেছেন তিনি। ব্যাটারদের মধ্যে না থাকার তালিকায় রয়েছে একঝাঁক বড় নাম। ভারত থেকে বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মা, শুভমান গিলদের মত তারকা সুযোগ পান নি। ২০২৩ সালে টিম ইন্ডিয়ার সফলতম টেস্ট ব্যাটার কোহলি (Virat Kohli)। ৮ ম্যাচে ৫৫.৯১ গড়ে করেছেন ৬৭১ রান। তবুও শিকে ছেঁড়ে নি ভাগ্যে। জায়গা হয় নি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় যথাক্রমে দুই ও চারে থাকা স্টিভ স্মিথ (Steve Smith) ও মার্নাস লাবুশেনেরও।
নেতা কামিন্স, দুই স্পিনার, তিন পেসার থাকছেন একাদশে-

ব্যাটিং বিভাগে কোনো ভারতীয় না থাকলেও বোলিং বিভাগে জায়গা পেয়েছেন দুই ভারতীয় তারকা। অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিং-এ শীর্ষে থাকা রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja) রয়েছেন। ২০২৩-এর সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনি। তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে পেয়েছেন ৬৬ উইকেট। টেস্টে চলতি বছর জাদেজার উইকেটসংখ্যা ৭ ম্যাচে ৩৩। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন’ও (Ravindra Jadeja)। ভারতীয় কিংবদন্তি মাত্র ৭ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ৪১ উইকেট। তাঁর বোলিং গড় ১৭.০২। উইকেটসংখ্যার নিরিখে অস্ট্রেলীয় স্পিনার নাথান লিয়ঁ (৪৭) এগিয়ে থাকলেও অশ্বিনের চমকপ্রদ গড় তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে সেরা একাদশে।
ভারতীয় স্পিন জুটির পাশাপাশি তিন পেসারের স্থান হয়েছে ইএসপিএন ক্রিকইনফো নির্বাচিত সেরা একাদশে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী অস্ট্রেলীয় তারকা প্যাট কামিন্স (Pat Cummins) রয়েছেন দলে। ২৭.৯৫ গড়ে ১১ টেস্টে ৪২ উইকেট নেওয়া কামিন্সকেই অধিনায়ক বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রয়েছেন মিচেল স্টার্ক ও স্টুয়ার্ট ব্রড (Stuart Broad)। স্টার্ক ৯ টেস্ট ম্যাচে প্রায় ২৯ গড়ে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট। ২০২৩ সালে অ্যাসেজ সিরিজের পর অবসর নিয়েছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড। ৮ টেস্টে ২৬.৩৬ গড়ে ৩৮ উইকেট নিয়ে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভালো পারফর্ম্যান্স করেও বছরের সেরা একাদশে ঠাঁই হয় নি কাগিসো রাবাডার। বাইরেই থাকতে হচ্ছে জশ হ্যাজেলউড, টিম সাউদী, ম্যাট হেনরীদেরও।