চর্চার কেন্দ্রে অনয়া বাঙ্গার (Anaya Bangar)। প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার সঞ্জয় বাঙ্গারের সন্তান তিনি। জন্মেছিলেন পুরুষ হয়ে। নাম ছিলো আরিয়ান। কিন্তু মানসিক দিক থেকে তিনি যে একজন নারী, তা অল্প বয়সেই বুঝতে পেরেছিলেন। নিজেই বলেছেন, “আমার যখন আট বা নয় বছর বয়স, তখন মায়ের আলমারি থেকে ওঁর পোশাক গুলো টেনে বার করতাম। চাইতাম সেগুলো পরতে। পরতামও। তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতাম, ‘আমি মেয়ে। আমি মেয়ে হতে চাই।’” নিজের সাথেই দীর্ঘসময় নিজের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে যুদ্ধ করেছেন তিনি। শেষমেশ ২০২১ সালে সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। ভারত ছেড়ে পাড়ি দেন ইংল্যান্ডে। সেখানে শুরু করেন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। ১১ মাসের চিকিৎসার পর আরিয়ান থেকে অনয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। কেমন ছিলো এই যাত্রাপথ? টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনের জানলা খুলেছেন অনয়া (Anaya Bangar)।
Read More: “জামাই আদর চায় ও…” তারকা ক্রিকেটার’কে কটাক্ষ গম্ভীরের, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হেড কোচের মন্তব্য !!
ক্রিকেটমহল’কে দুষছেন অনয়া-

পুরুষ থেকে নারী হয়ে ওঠার যাত্রাপথে কেউ তাঁর দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেন নি, অভিযোগ করেছেন অনয়া বাঙ্গার (Anaya Bangar)। বরং জুটেছে বহু কটাক্ষ ও কটুক্তি। দিনকয়েক আগে লাল্লানটনপ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় বাঙ্গারের কন্যা জানিয়েছিলেন যে এক সিনিয়র ক্রিকেটার তাঁকে শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার কু-প্রস্তাব অবধি দিয়েছিলেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ভারতীয় ক্রিকেটমহল সম্পর্কে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “ভারতীয় ক্রিকেটের কেউই আমার পাশে এসে দাঁড়ান নি। শুধুমাত্র নীরবতায় পেয়েছি। কোনো সংস্থা বা খেলোয়াড় এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে নি, ‘তুমি কেমন আছ? তোমার কি কোনো সাহায্য লাগবে? তুমি আমাদের খেলাটাই খেলতে। আমরা কেন তোমার হাত ছেড়ে দিলাম?’ একজন রূপান্তরকামী নারী যে খেলাধূলার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে সেই ধারণাটা অনেক পুরনো হয়ে গিয়েছে।”
বাবা’র মতই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। মুশির খান, সরফরাজ খান, যশস্বী জয়সওয়ালদের সাথে খেলেছেনও। এমনকি ইংল্যান্ডেও ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু আরিয়ান থেকে অনয়া (Anaya Bangar) হয়ে ওঠার পর বিশ বাঁও জলে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার। হতাশা চুঁইয়ে পড়েছে তাঁর মন্তব্যে। “আমি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিতে রয়েছি এক বছরেরও বেশী সময়। ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট বলছে যে একজন সিসজেন্ডার নারী অ্যাথলিটের সাথে আমার শরীরের বিশেষ পার্থক্য নেই। একজন রূপান্তরকামী নারী যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ধারিত হরমোন স্তরের মধ্যে থাকেন, শক্তি ও রূপান্তরের সময়ের মাপকাঠিতেও উত্তীর্ণ হন সেক্ষেত্রে কেন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়া হবে?” প্রশ্ন তুলেছেন অনয়া।
“সত্যি বলতে সবকিছুই আমি একাই করছি। কোনো পদ্ধতি অথবা দল’কে আমায় সাহায্য করার জন্য পাই নি। উত্তরাধিকার সূত্রে যদি কিছু পেয়ে থাকি সেটা নীরবতা। নিজেই একটা শক্তিশালী কন্ঠ তৈরি করেছি যাবতীয় ঝড়ঝাপ্টা সামলাতে। সাধারণ বিষয়গুলিতে বাবা-মা পাশে ছিলেন। চিকিৎসার খরচ ওনারা দিয়েছেন। কিন্তু বাকিটা? অর্থনৈতিক, মানসিক খরচ? একজন নারী যাকে এই পৃথিবী নিজের জায়গাটুকু দিতে চায় না, তা হয়ে ওঠার যে মানসিক ব্যয় তা আমাকেই বহন করতে হচ্ছে। যখন থেকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলছি, তখন থেকেই (ওষুধের) পরবর্তী ডোজটা কেনার সামর্থ্য থাকবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হত আমায়। কিন্তু সেই অবস্থাতেও হাসিমুখে মাঠে হাজির হয়েছি। ভারতীয় ক্রিকেটের একজনও পাশে এসে দাঁড়ান নি। ওনারা আমার মধ্যে কেবল বিতর্ক খুঁজেছেন,” জানিয়েছেন অভিমানী অনয়া।
স্পষ্ট নীতির পক্ষে সওয়াল অনয়া’র-

নিজে যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তা অন্য কেউ সহ্য করুক, তা চান না অনয়া (Anaya Bangar)। সাক্ষাৎকারে তিনি সাফ জানিয়েছেন, “আমি কারও দয়া চাই না। আমি চাই একটা নির্দিষ্ট নীতি। আমি একটা একটা পদ্ধতি চাই যাতে আগামীতে যদি কোনো রূপান্তরকামী নারী হাতে ব্যাট তুলে নিতে চান তাঁকে ভয়ের কারণ হিসেবে না দেখা হয়। যাতে সকলে স্বাগত জানায় তাঁকে। আমি চাই যাতে এই প্রতিকূলতার ইতি আমাকে দিয়েই হয়। আগামীতে অন্যদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সকলে।” ২০২৩ সালে রূপান্তরকামীদের মহিলাদের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আইসিসি। ২০২৫-এর মে মাসে একই নীতি নিয়েছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। জুনের ১ তারিখ রূপান্তরকামী নারীদের ফুটবলে নিষিদ্ধ করছে এফ এ। তাদের সাথে একমত নন অনয়া (Anaya Bangar)। পরিস্থিতি বদলাক, চাইছেন তিনি।
Also Read: TOP 3: ৩ এমন মুহূর্ত যখন ধোনি অসম্ভবকে সম্ভব করে ভারতকে এনে দিয়েছেন অবিশ্বাস্য জয় !!