দক্ষিণ আফ্রিকায় আরো একবার সূর্যোদয় ভারতীয় ক্রিকেটের। ২০০৩ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশে বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছিলো ভারতের পুরুষ দল। এক ধাপ এগিয়ে ২০০৭ এর টি-২০ বিশ্বকাপে এই দেশেই সেরার শিরোপা অর্জন করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবরাজ সিং’রা। অগ্রজদের দেখানো পথেই হাঁটলেন ভারতের অনুর্দ্ধ-১৯ মহিলা দলের ক্রিকেটাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠেই ‘টিম ইন্ডিয়া’কে এনে দিলেন সাফল্য। মেয়েদের অনুর্দ্ধ-১৯ টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রেকর্ড বইয়ের পাতায় নাম তুলে ফেললেন শেফালী ভার্মা, সোনম যাদব’রা। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ট্রফি জিতে নিলো ভারত। ভারতের মেয়েদের বোলিং-এর সামনে খড়কুটোর মত উড়ে গেলো ইংল্যান্ডের যাবতীয় প্রতিরোধ। রিচা ঘোষ (Richa Ghosh), তিতাস সাধুদের (Titas Sadhu) এই সাফল্যের দিনে গ্যালারিতে জাতীয় দলের হয়ে গলা ফাটাতে দেখা গেলো অলিম্পিকে সোনাজয়ী নীরজ চোপড়াকে। ম্যাচের আগে ভারতীয় দল’কে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন নীরজ। আহ্বান জানিয়েছিলেন ভয়ডরহীন ভাবে সামনে এগিয়ে চলার। নীরজ (Neeraj Chopra) ইতিহাস তৈরি করেছিলেন টোকিওতে, আর তার মন্ত্রে বলীয়ান ‘গার্লস ইন ব্লু’ দেশের মুখ উজ্জ্বল করলো পচেস্ট্রুমে।
টোকিও’তে ঐতিহাসিক সাফল্য নীরজ চোপড়া’র-

১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে পরাধীন ভারতের হয়ে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে দুটি রূপোর পদক জিতেছিলেন নর্ম্যান প্রিচার্ড (Norman Prichard)। এর পর শতাব্দী কেটে গেলেও ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে কোনো পদক আসে নি ভারতের ঝুলিতে। মিলখা সিং (Milkha Singh) হোক বা পিটি ঊষা (PT Usha), পদকের কাছাকাছি গিয়েও বারবার খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়েছে ভারত’কে। হকি, শ্যুটিং, ব্যাডমিন্টনের মত খেলায় পদক এসেছে। পদক এসেছে লন টেনিসেও। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টগুলিতে অলিম্পিক থেকে দীর্ঘদিন খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিলো ভারতকে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটান নীরজ চোপড়া। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে জ্যাভেলিন থ্রো ইভেন্টে সোনার পদক জেতেন নীরজ (Neeraj Chopra)। ৮৭.৫৮ মিটার জ্যাভেলিন ছুঁড়ে সবাইকে পিছনে ফেলে দেন তিনি। অভিনব বিন্দ্রার পর ব্যক্তিগত কোনো ইভেন্টে ভারতকে দ্বিতীয় সোনা এনে দেন তিনি।
ফাইনালের আগে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করলেন নীরজ-

বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতের মেয়েদের অনুপ্রেরণা যোগাতে সাজঘরে হাজির হয়েছিলেন অলিম্পিক সোনাজয়ী নীরজ চোপড়া (Neeraj Chopra)। ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছুক্ষণ বক্তব্য রাখেন তিনি। শোনান নিজের জীবনের কথা। নিজের সাফল্যের কথা, ব্যর্থতার কথা। কোন কোন বিষয়ের দিকে খেয়াল রেখে সাফল্য এসেছে তাঁর জীবনে, সেই কথাও জানান শেফালী ভার্মা, রিচা ঘোষদের। তন্ময় হয়ে নীরজের কথা শুনতে দেখা গিয়েছিলো ভারতের মেয়েদের। নীরজ বলেন, “এখন যদি মনের ওপর চাপ দাও,খেলার সময়ও চাপে পড়ে যাবে। তার থেকে বরং খেলাটা উপভোগ করো। এখন যেমন নিজেদের ১০০ শতাংশ দিচ্ছো মাঠে, তেমন বজায় রাখো। শোনো কোচেরা কি বলছেন। আমার বেড়ে ওঠা এক সাধারণ পরিবারে। গ্রাম ছাড়তে হয়েছিলো খেলার জন্য। তোমাদের কাছে আজ সুযোগ রয়েছে নিজের পরিবার,দেশকে গর্বিত করার। সেই সুযোগ’কে কাজে লাগাও। যে কঠিন পরিশ্রম করে এখানে পৌঁছেছো, তা মনে করো। কঠিন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হও। দেশের হয়ে খেলছো, এর থেকে বড় অনুপ্রেরণা আর কি হতে পারে?” নীরজের (Neeraj Chopra) হার না মেনে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ যে হৃষিতা, শ্বেতা’রা আত্মস্থ করেছিলেন তা বোঝা গেলো মাঠ তাঁদের পারফর্ম্যান্স থেকে।
দেখে নিন নীরজ চোপড়ার ভিডিও’টি-
This is beautiful – Neeraj Chopra giving a special speech to the Indian U-19 team ahead of the final.pic.twitter.com/PGWdbkdymk
— Johns. (@CricCrazyJohns) January 29, 2023
বোলারদের দাপটে বিশ্বকাপ ভারতের-
টসে জিতে প্রতিপক্ষকে প্রথমে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান ভারতের ক্যাপ্টেন শেফালী ভার্মা (Shafali Verma)। মাত্র ১ রানের মাথায় লিবার্টি হিপকে (Liberty Heap) হারিয়ে চাপে পড়েছিলো ইংল্যান্ড দল। আজ বাইশ গজে ঝড় বইয়ে দিলেন তিতাস সাধু (Titas Sadhu)। বাংলার মেয়ে তিতাসের পেসের সামনেই নতজানু হলো ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। প্রথমে লিবার্টি’কে ফেরান তিনি। ফিরিয়ে দেন সেরেন স্মেল’কেও (Seren Smale)। ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৬ রান দিয়েছেন তিনি। নিয়েছেন ২ উইকেট। বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যাচের সেরা হয়েছেন বাংলার তিতাস’ই (Titas Sadhu)। এছাড়া অর্চনা দেবো এবং পার্বষী চোপড়া ২টি করে উইকেট নেন। মন্নত কাশ্যপ (Mannat Kashyap), সোনম যাদব এবং শেফালি ভার্মা ১ টি করে উইকেট নেন। মাত্র ৬৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো ইংল্যান্ডের ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শেফালী ভার্মা , শ্বেতা শেহরাওয়াত এবং গোঙ্গারি তৃষা’র উইকেট হারালেও ১৪ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেন ভারতের মেয়েরা।
Read More: বিশ্বকাপ জিতে রাতারাতি কোটিপতি ভারতের মেয়েরা ! বিপুল অঙ্কের পুরষ্কার ঘোষণা করলো BCCI !!