হ্যান্সি ক্রোনিয়ের (Hansi Cronje) ঘটনা নড়িয়ে দিয়েছিলো ক্রিকেট দুনিয়ার ভিত। দিল্লী পুলিশের তদন্তের ফলে উঠে আসে ম্যাচ-ফিক্সিং-এ তাঁর জড়িত থাকার খবর। ভারতীয় বুকিদের সাথে যোগসাজশ রেখে চলার অভিযোগ উঠেছিলো তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কের বিপক্ষে। অর্থের বিনিময়ে ম্যাচের ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য আঙুল উঠেছিলো তাঁর দিকে। তদন্তে উঠে আসে যে দলের অন্যান্য ক্রিকেটারদেরও অর্থের বিনিময়ে অল্প রানে আউট হওয়া বা নির্দিষ্ট পরিমাণ রান খরচের কথা বলতেন তিনি। এই ঘটনায় নাম জড়িয়ে গিয়েছিলো হার্শেল গিবস (Herschelle Gibbs), নিকি বোয়েদেরও (Nicky Boje)। ২০০০ সালের ১১ অক্টোবর ক্রোনিয়েকে ক্রিকেট থেকে আজীবন নির্বাসিত করা হয়। ২০০২ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। ক্রোনিয়ে পর্বের ২৪ বছর পর ফের গড়াপেটার কলঙ্ক ফিরলো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে।
Read More: নেতৃত্বে থাকছেন রিঙ্কু, জায়গা হলো না রাহানের, হার্ষিত-রাসেলদের নিয়ে তৈরি হলো KKR’র এর সেরা একাদশ !!
তিন তারকার দিকে বিস্ফোরক অভিযোগ-
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হচ্ছে নিত্যনতুন টি-২০ লীগ। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গড়াপেটার মত ঘটনাও। আইপিএলের (IPL) স্পট ফিক্সিং কাণ্ড বড়সড় প্রভাব ফেলেছিলো বাইশ গজের দুনিয়ায়। এরপর দুবাইয়ের টি-১০ লীগকে নিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। দিনকয়েক আগে লঙ্কান প্রিমিয়ার লীগে (LPL) ম্যাচ ফিক্সিং-এ অংশ নেওয়ার অপরাধে শাস্তি পেয়েছেন স্পিনার প্রবীণ জয়াবিক্রমা (Praveen Jayawickrama)। এবার অভিযোগের তীর দক্ষিণ আফ্রিকার র্যাম-স্ল্যাম টি-২০ চ্যালেঞ্জের দিকে। ২০১৫-১৬ মরসুমে এই প্রতিযোগিতায় নাকি ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িয়েছিলেন তিন প্রোটিয়া ক্রিকেটার। থামি শোলেকিলে (Thami Tsolekile), এথি ভালাতি’র (Ethy Mbhalati)সাথে গ্রেফতার হয়েছেন লোম্বওয়াবো সোতসোবে (Lonwabo Tsotsobe)। ভারতীয় বুকিদের সাথে যোগসাজশ রেখে ম্যাচের ফলাফল প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের দিকে।
গড়াপেটার প্রচেষ্টার বিষয়টি সামনে আসার পরেই তদন্তে নেমেছিলো ডায়রেক্টরেট ফর প্রায়োরিটি ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সংস্থা (DPCI)। তারা ২০১৬ থেকে ২০১৭’র মধ্যে সাত জনের নাম সামনে এনেছিলেন। এই তালিকায় থাকা গুলাম বদি (Gulam Bodi) ইতিমধ্যেই কারাবাস করেছেন। জঁ সাইমস (Jean Symes) ও পুমি মাতশিখওয়ে (Pumi Matshikwe) ২০২১ ও ২০২২ সালে দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তাদের সাজা ঘোষণা করেও পরে তা স্থগিত করা হয়। এবার শাস্তির আওতায় আসতে চলেছেন থামি শোলেকিলে, এথি ভালাতি ও লোম্বওয়াবো সোতসোবে’ও (Lonwabo Tsotsobe)। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিভেশন অ্যান্ড কমব্যাটিং অফ কোরাপ্ট অ্যাকটিভিস অ্যাক্ট, ২০০৪-এর ১৫তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ধারায় অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। তবে তালিকায় সপ্তম সদস্য অ্যালভিরো পিটারসেনের ভবিষ্যৎ কি তা নিশ্চিত নয় এখনও।
২০২৫-এ হবে আইনি কার্যকলাপ-
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট সংস্থা (CSA) জানিয়েছে কোনো ম্যাচ’ই ফিক্স করে উঠতে পারেন নি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়রা। তার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়েছিলো। শাস্তিস্বরূপ ঐ সাত ক্রিকেটারকে নির্বাসিতও করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে যে তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে আইনি কার্যকলাপ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি অবধি স্থগিত রাখা হচ্ছে। তদন্তে যাতে নতুন তথ্য আরও উঠে আসে তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থা’কে আরও খানিক সময় দিয়েছে তারা। ক্রোনিয়ের ঘটনার পর সোতসোবে’ই (Lonwabo Tsotsobe) গড়াপেটার ক্ষেত্রে সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল নাম। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে ৫টি টেস্ট, ৮১টি একদিনের ম্যাচ ও ২৩টি টি-২০ খেলেছেন তিনি। নিয়েছেন ১০০’র বেশী আন্তর্জাতিক উইকেট। একদিনের ক্রিকেটে এক সময় আইসিসি র্যাঙ্কিং-এর শীর্ষস্থানেও ছিলেন তিনি। এই ঘৃণ্য ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে ক্রিকেটমহল।