বছর শেষ হতে আর বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। ২০২২ এর শেষে এসে খারাপ খবর শুনতে হলো ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। বাংলা তথা ভারতীয় দলের তারকা ব্যাটসম্যান মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) ইঙ্গিত দিলেন যে চলতি রঞ্জি মরসুমের শেষেই তিনি তঁর বুটজোড়া পাকাপাকিভাবে তুলে রাখতে পারেন। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক বাংলা দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ক্রিকেট খেলছেন মনোজ। ঘরোয়া ক্রিকেটে বহু কঠিন ম্যাচ জিতিয়েছেন একার দক্ষতায়। খেলেছেন ভারতীয় দলেও। বয়স ৩৭ ছুঁলেও ভাটা পড়ে নি তাঁর ফর্মে। নতুন রঞ্জি মরসুমের প্রথম ম্যাচে ইডেন গার্ডেন্সে উত্তর প্রদেশকে বাংলাদ হারিয়েছে হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে। সেই জয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। কিন্তু ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসে মনোজ যা বললেন তা থেকে অনুমান করা যাচ্ছে যে অদূর ভবিষ্যতে ক্রিকেটকে চিরবিদায় জানাতে চলেছেন তিনি।
সাফল্যে ভরপুর মনোজের ক্রিকেট কেরিয়ার-

বাংলা দলের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোজের (Manoj Tiwary) আগমন ২০০৪-২০০৫ মরসুমে। তারপর থেকে আজ অব্দি টানা বাংলার হয়ে খেলে চলেছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৩২ ম্যাচে মনোজের রয়েছে ৯৫১৮ রান। করেছেন ২৯ টি শতরান এবং ৪০ টি অর্ধশতক। এর মধ্যে রয়েছে ত্রিশতরান করার রেকর্ডও। বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি না জিতলেও ২০০৫-০৬, ২০০৭-০৮ এবং ২০১৯-২০ মরসুমে ফাইনাল খেলেছেন তিনি। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও মনোজের রান রয়েছে ৫৫৮১। ম্যাচ খেলেছেন ১৬৯ টি। আন্তর্জাতিক কেরিয়ার অবশ্য বিশেষ সুখের হয় নি মনোজের জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শতরান করেও বাদ পড়তে হয়েছে দল থেকে। আর কামব্যাক করতে পারেন নি তিনি। ১২ একদিনের ম্যাচে করেছেন ২৬৭ রান। ৩ টি টি-২০তে মাত্র ১ ইনিংসে ব্যাটিং-এর সুযোগ পেয়েছেন, করেছেন ১৫ রান। বাংলার হয়ে বিজর হাজারে ট্রফি এবং সৈয়স মুস্তাক আলি ট্রফি জিতেছেন তিনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে জিতেছেন আইপিএল। ২০১২ সালে চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে নাইট রাইডার্স যখন প্রথম আইপিএল জেতে তখন জয়সূচক রানটি এসেছিলো মনোজের (Manoj Tiwary) ব্যাটে।
শেষ মরসুমেও ফর্মের তুঙ্গে ‘অধিনায়ক’ মনোজ-

বাংলা দলের নিয়মিত অধিনায়ক অভিমণ্যু ঈশ্বরণ (Abhimanyu Easwaran) ভারতীয় দলের সঙ্গে এই মুহূর্তে রয়েছেন বাংলাদেশে। তাই বাংলার নেতৃত্বভার আপাতত অভিজ্ঞ মনোজের কাঁধেই দেওয়া হয়েছে। এর আগেও দীর্ঘদিন বাংলার অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এলিট গ্রুপ-এ ম্যাচে বাংলা ৬ উইকেটে পরাজিত করেছে উত্তর প্রদেশকে। উত্তর প্রদেশের দেওয়া ২৫৭ রানের লক্ষ্যমাত্র বাংলা মাত্র ৪ উইকেট হারিয়েই টপকে যায়। ৬ উইকেটে ম্যাচ জয়ের পিছনে মনোজের (Manoj Tiwary) অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংসটির গুরুত্ব রয়েছে বিশাল। ম্যাচ জিতে তিনি বলেছেন, “চাপমুক্ত হয়ে অধিনায়কত্ব করছি। এর আগে ২০১৮-১৯ মরসুমে যখন বাংলার নেতৃত্ব ছেড়েছিলাম, তখন আমায় অনুরোধ করা হয়েছিলো একদিনের আর টি-২০ দলের অধিনায়ক থেকে যাওয়ার। আমি রাজী হই নি, কারণ চেয়েছিলাম একজন তরুণ নেতার হাতে দায়িত্ব যাক। কিন্তু অভিমণ্যু যখন নেই, তখন আমার মনে হলো আমারই দায়িত্ব নেওয়া দরকার।” জিতলেও দলের খেলায় খুশি নন অধিনায়ক। বলেছেন, “আমাদের চ্যাম্পিয়নের মত খেলতে হবে। প্রতি সেশন অনুযায়ী যদি দেখা হয়, দেখা যাবে অনেক সেশনে আমরা পিছিয়ে ছিলাম প্রতিপক্ষের থেকে।”
যাওয়ার আগে একটাই স্বপ্ন রয়েছে মনোজ তিওয়ারি’র-

ম্যাচের সেরা ঈশান পোড়েলকে প্রশংসায় ভরিয়েছেন মনোজ। জানিয়েছেন, “ ঈশান দুর্দান্ত কামব্যাক করেছে। বিজয় হাজারে ট্রফিতে ওকে পাওয়া যায় নি। আজ ও আবার বোঝালো কেনো দলের ওকে প্রয়োজন। আমি ওকে বলেছি যে আমাদের ভুলে যেতে হবে আগে কি করেছি। প্রতি মিনিট, প্রতি সেকেন্ডে নিজেকেই বোঝাতে হবে যে আমি ঈশান পোড়েল বা আমি মনোজ তিওয়ারি।” সাংবাদিকদের এরপরেই মনোজ জানান যে ক্রিকেট থেকে সম্ভবত বিদায়ের সময় এসেছে তাঁর। ইতিমধ্যেই বিধায়ক হয়েছেন তিনি। রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছেন। সম্ভবত রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান। তবে ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস আলমারিতে চিরতরে তুলে দেওয়ার আগে একটাই লক্ষ্য মনোজের। “বাংলাকে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন দেখে যেতে চাই” জানাচ্ছেন বাংলার তারকা ক্রিকেটার।