jay-shah-meeting-with-rahul-dravid

রবি শাস্ত্রীকে সরিয়ে যখন টিম ইন্ডিয়ার সিনিয়র দলে রাহুল দ্রাবিড়কে (Rahul Dravid) কোচ করে নিয়ে আসা হয়েছিলো, তখন এক নয়া অধ্যায়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন সমর্থকেরা। ২০১৮ সালে অনুর্দ্ধ-১৯ দলকে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতিয়েছিলেন দ্রাবিড়, তাঁর ক্রিকেট মস্তিষ্ক সিনিয়র দলকেও সফলতা এনে দিতে পারে বলেই মনে করা হয়েছিলো, কিন্তু বাস্তবে তেমনটা দেখা যায় নি। ঘরের মাঠে কিছু দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয় ছাড়া সাফল্যের ভাঁড়ার শূন্যই বলা যেতে পারে দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) টিম ইন্ডিয়ার। মাঝে অধিনায়কত্ব বিতর্কে জর্জরিত হতে হয়েছে ‘মেন ইন ব্লু’কে। চেতন শর্মার (Chetan Sharma) স্টিং অপারেশন নিয়ে চলেছে ডামাডোল। সেসব মিটলেও মাঠের পারফর্ম্যান্সে বিশেষ উন্নতি কিছু হয় নি। গত বছর থেকে দ্রাবিড়ের অধীনে তিনটি বড় প্রতিযোগিতা খেলেছে ভারত। ব্যর্থতা তাড়া করেছে তিনিটি টুর্নামেন্টেই।

২০২২ এশিয়া কাপের শেষ চারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে ছিটকে যেতে হয়েছে। টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালেও অস্ট্রেলিয়া  ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে ধরাশায়ী করেছে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), বিরাট কোহলিদের। এছাড়া বাংলাদেশ, উইন্ডিজের মত খাতায় কলমে অনেক পিছিয়ে থাকা দলের বিরুদ্ধেও সিরিজ হারাতে হয়েছে কোচের হটসিটে রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) থাকাকালীন। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত হারে ওডিআই সিরিজ। আর সদ্যই উইন্ডিজের বিরুদ্ধে ক্যারিবিয়ান সফরে হাতছাড়া হয়েছে টি-২০ সিরিজ।এমনকি ঘরের মাঠেও অজিরা ওডিআই-তে পরাস্ত করেছে ভারতকে। লাগাতার বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে প্রশ্নের মুখে দ্রাবিড়ের কোচিং। ভারতীয় বোর্ডও পারফর্ম্যান্স নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। সম্প্রতি কোচের সাথে দুই ঘন্টার ম্যারাথন বৈঠক সারলেন সচিব জয় শাহ (Jay Shah)।

Read More: “নিজের এক্তিয়ার এর মধ্যে থাকুন এবং বেশি স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন না”, শহরের মেয়রকে একহাত নিলেন জাদেজা-পত্নী রিভাবা !!

মায়ামিতে মুখোমুখি দ্রাবিড়-জয় শাহ-

Jay SHah | Image: Twitter
Jay Shah | Image: Twitter

এগিয়ে আসছে ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ। তারপর রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ। এবং অক্টোবরের গোড়া থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ অভিযান। এর আগে পারফর্ম্যান্সের পর্যালোচনা করতে মুখোমুখি হয়েছিলেন বোর্ড সচিব জয় শাহ এবং কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ দুই টি-২০ ম্যাচ খেলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে গিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। দলের সঙ্গে ছিলেন দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। সেখানেই জয় শাহের সাথে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। শোনা যাচ্ছে দলের সঙ্গে নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগেই মায়ামি গিয়েছিলেন জয় শাহ (Jay Shah)। তাঁর সাথে দেখা করেন দ্রাবিড়।

দুই ঘন্টার বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা সামনে আনেন নি দ্রাবিড়। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যম বা সমাজমাধ্যমে মুখ খোলেন নি জয় শাহ’ও। কিন্তু ভারতের হার এবং আসন্ন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে দ্রাবিড়ের শাহ-সাক্ষাৎ বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।বিভিন্ন সূত্র মারফত যা জানা যাচ্ছে তাতে নিশ্চিত টিম ইন্ডিয়ার পারফর্ম্যান্স নিয়েই কথা হয়েছে দুজনের মধ্যে। অক্টোবরের বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে এখুনি রাহুল’কে (Rahul Dravid) সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। এশিয়া কাপ খোয়ালেও সম্ভবত পদে বহাল থাকবেন তিনি। কিন্তু দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের পারফর্ম্যান্স আশানুরূপ না হলে গদিচ্যুত যে হতে হবে তার আভাস জয় শাহ (Jay Shah) এই বৈঠকে দিয়ে দিয়েছে দ্রাবিড়কে।

২০১১ সালের পর বারো বছর বিশ্বকাপের ট্রফি ঢোকে নি ‘মেন ইন ব্লু’র ক্যাবিনেটে। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর আইসিসি আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতাতেও সেরার শিরোপা জোটে নি। এর মধ্যে ২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০২১ ও ২৩-এর WTC ফাইনাল খেলেছে দল। কিন্তু ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ব্যর্থতার চিত্রটা ২০২৩ বিশ্বকাপে না বদলাতে কোচকে ‘চরম হুঁশিয়ারি’ জয় শাহের।

যে কারণে কাঠগড়ায় দ্রাবিড়-

Rahul drAVID, IRE VS IND
Rahul Dravid | Image: Getty Images

গত বছরের টি-২০ বিশ্বকাপের পর থেকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। তাঁর কোচিং পদ্ধতিকে অতি রক্ষণাত্মক বলে বর্ণনা করেছেন অধিকাংশ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। কোনো প্ল্যান-বি তাঁর আমলে টিম ইন্ডিয়াকে ব্যবহার করতে দেখা যায় নি। এছাড়া অতিরিক্ত পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়েই দল ডুবছে বলে মতামত অনেকের। গত বছরের টি-২০ বিশ্বকাপে দেশের এক নম্বর টি-২০ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালকে (Yuzvendra Chahal) গোটা টুর্নামেন্টে বাইরে রেখেছিলেন দ্রাবিড়, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো। আবার এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে টেস্ট র‍্যাঙিং-এ এক নম্বরে থাকা রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে (Ravichandran Ashwin) ছেঁটে ফেলেছিলেন তিনি। যে সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কারণ কি তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো খোদ দ্রাবিড়কেই। এছাড়াও টস জিতে প্রথমে বোলিং নেওয়া নিয়েও সমালোচনা হয়েছিলো।

দল নিয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষানিরীক্ষা করার অভিযোগ দ্রাবিড়ের বিরুদ্ধে ফের উঠেছে উইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে হারের পর। কোনো ‘সেট কম্বিনেশন’ না খেলিয়ে কি করে একের পর এক বদল একাদশে করতে পারেন তিনি? উঠেছে প্রশ্ন। ওডিআই সিরিজেও বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মাদের মত দলের প্রধান ব্যাটারদের বাইরে রেখে দুই ম্যাচে দল সাজান তিনি। সামনে যেখানে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্ট সেখানে অন্তত পাঁচ মাস ওডিআই না খেলা দুই তারকাকে ম্যাচ প্র্যাক্টিসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার কি মানে? দ্রাবিড়ের দিকে প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিয়েছেন জনতাও। তরুণদের সুযোগ দিতে গিয়ে আদতে টিম ইন্ডিয়ার ক্ষতিই করছেন দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। জনতার মতামত এখন এটাই। ভেঙ্কটেশ প্রসাদের মত প্রাক্তনীও জানিয়েছেন, “প্রসেস শব্দটার আজকাল অপব্যবহার হয়। কোচ ও অধিনায়ক (হার্দিক পান্ডিয়া) হারের দায় এড়াতে পারেন না।”

Also Read: IND vs IRE 1st T20: ‘অঘটনের’ স্বপ্ন দেখছে আয়ারল্যান্ড, ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে আইরিশদের বাজি এই দুর্দান্ত ক্রিকেটার !!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *