জয় শাহ’র (Jay Shah) মুকুটে নতুন পালক। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসকের জার্নিটা শুরু হয়েছিলো ২০০৯ সালে গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার (GCA) এক্সিকিউটিভ কমিটির সাধারণ সদস্য হিসেবে। সেখান থেকে দেড় দশকের মধ্যে তিনি পৌঁছে গেলেন বিশ্ব ক্রিকেটের মসনদে। গত ২৭ অগস্ট তাঁর নাম ঘোষিত হয়েছে পরবর্তী আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে। কনিষ্ঠতম ব্যক্তি হিসেবে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে এই পদে বসতে চলেছেন তিনি। ৩০ নভেম্বর মেয়াদ ফুরোচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে’র (Greg Barclay)। তারপরেই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন জয় শাহ (Jay Shah)। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিলো ২৭ অগস্ট। কিন্তু বর্তমান বিসিসিআই সচিবের বিরুদ্ধে কেউ প্রার্থী হিসেবে না দাঁড়ানোয় ঐ দিনই ঘোষণা করে দেওয়া হয় চেয়ারম্যান হিসেবে।
ভোটাধিকার থাকা ১৬ দেশের মধ্যে ১৫টি জয় শাহের (Jay Shah) পাশে দাঁড়িয়েছে। ব্যতিক্রম একা পাকিস্তান। তারা ভোটদানে বিরত থাকলেও কোনো প্রার্থী দাঁড় করায় নি জয় শাহের বিরুদ্ধে। ফলে তেমন কোনো সমস্যা হয় নি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে। এর আগে এন শ্রীনিবাসন (N Srinivasan) ও শশাঙ্ক মনোহর বসেছেন আইসিসি’র চেয়ারম্যানের পদে। তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে কুরসী সামলাবেন জয় শাহ। উল্কার গতিতে তাঁর উত্থানের দিনে ক্রিকেটজনতার মনের কোণে ঘোরাফেরা করছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) কথা। আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২-এ বাংলার মহারাজের সামনেও ছিলো আইসিসি’র শীর্ষপদে বসার সুযোগ। কিন্তু তখন এই জয় শাহ’রাই সাহায্যের হাত না বাড়ানোয় শৃঙ্গ আরোহণ সম্ভব হয় নি তাঁর পক্ষে।
Read More: জাতীয় দলে জায়গা পেলেন সমিত দ্রাবিড়, কিংবদন্তি পিতার পথেই হাঁটছেন পুত্র !!
সৌরভকে চেয়ারম্যান পদে সমর্থন করে নি বোর্ড-

২০১৯ সালে একইসাথে বিসিসিআই-এর (BCCI) দুই শীর্ষ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ও জয় শাহ (Jay Shah)। প্রাক্তন অধিনায়ক পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পদ, আর সচিব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুত্র। তিন বছরের মেয়াদ ফুরোলে ২০২২ সালে সরে দাঁড়াতে হয়েছিলো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Sourav Ganguly)। পূর্ব নিদর্শন না থাকায় তাঁকে ‘এক্সটেনশন’ দেওয়া হয় নি। কিন্তু জয় শাহের ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন নিয়ম। প্রথা ভেঙে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে দ্বিতীয় দফায় সচিব পদে বসেন তিনি। রজার বিনি (Roger Binny) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তখন ক্রিকেটমহলে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিলো যে বিসিসিআই থেকে সরতে হলেও আইসিসি’তে যেতে পারেন সৌরভ।
ঘটনাচক্রে সেই সময় গ্রেগ বার্কলে’র (Greg Barclay) প্রথম দফার মেয়াদ ফুরিয়ে ছিলো আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে। চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে সৌরভকে (Sourav Ganguly) প্রার্থী করতে পারত বিসিসিআই। ক্রিকেটদুনিয়ায় ভারত ও বিসিসিআই-এর এই মুহূর্তে যে দাপট, তাতে তারা সৌরভকে প্রার্থী করলে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারতেন বার্কলে। কিন্তু সেই পথে হাঁটে নি তারা। বরং কিউই প্রশাসককেই সমর্থন জানায় তারা। সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয় টার্মের জন্য নির্বাচিত হন তিনি। আইসিসি’র স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় বঙ্গ ক্রিকেটে ফেরার কথা ভেবেছিলেন সৌরভ (Sourav Ganguly)। কিন্তু নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতায় সেই দায়িত্ব’ও নেওয়া হয় নি তাঁর। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের (CAB) পদ ছেড়ে দিয়েছেন দাদা স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়কে।
কোচ হওয়াও হচ্ছে না সৌরভের-

বর্তমানে দিল্লী ক্যাপিটালস (DC) ফ্র্যাঞ্চাইজির ডায়রেক্টর অফ ক্রিকেট অপারেশনস পদে রয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। ২০২৫-এর আইপিএল শুরু হওয়ার আগেই এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ছেঁটে ফেলেছেন কোচ রিকি পন্টিং-কে (Ricky Ponting)। বাংলা সংবাদপত্র ‘আজকাল’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌরভ জানিয়েছিলেন, “আমায় আগামী আইপিএলের জন্য পরিকল্পনা সাজিয়ে রাখতে হবে। আমি একবার দিল্লী ক্যাপিটালসের সাথে আইপিএল জিততে চাই। সেই কারণে এখন থেকেই ছক সাজাচ্ছি। একটা নতুন খবর দিচ্ছি। আগামী মরসুমে রিকি পন্টিং আর হেড কোচ থাকছেন না…” তিনি আরও জানান, ““…জিওফ্রে বয়কট সঠিক কথাই বলেছিলেন, রিকি পন্টিং গত ৭ বছরে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সাফল্য এনে দিতে পারেন নি।“
প্রশাসক হিসেবে কাজ করলেও আগে কখনও কোচিং করান নি। নতুন ভূমিকা সৌরভ (Sourav Ganguly) দেখতে চেয়েছিলেন নিজেকে, বলেন, “…আমায় ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে কথা বলতে হবে ভারতীয় কোচদের নিয়ে। আমিও কোচ হতে পারি। দেখাই যাক আমি কেমন কাজ করি।” সৌরভের কোচ হওয়ার বাসনা অবশ্য পূরণ হচ্ছে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তারা সায় দেন নি তাঁর প্রস্তাবে। এখনও নতুন কোচের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সূত্র মারফৎ খবর মিলেছে যে টি-২০ বিশ্বকাপ ও ওডিআই বিশ্বকাপজয়ী তারকা যুবরাজ সিং-এর (Yuvraj Singh) কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন অলরাউন্ডার এর আগে পেশাদারী ক্রিকেটে কোচিং করান নি। তবে শুভমান গিল, অভিষেক শর্মা’র মত তরুণের মেন্টর হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর কাছে কেবল দিল্লী নয়, গুজরাত টাইটান্সের (GT) প্রস্তাব রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।