মাঠ হোক বা মাঠের বাইরে, বিরাট কোহলি (Virat Kohli) বরাবরই থাকেন সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কেরিয়ারের গোড়ার দিকে কোহলিকে বরাবর দেখা গিয়েছে আগ্রাসী মনোভাব সঙ্গে করে মাঠে নামতে। বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনীও প্রতিপক্ষকে উপহার দিতে রাজী হন নি তিনি। কখনও মাঠে বিপক্ষের ক্রিকেটারদের কটূক্তি করে আবার কখনও প্রতিপক্ষ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে বিতর্কেও জড়িয়েছেন বিস্তর। তবে সেই সব দিন এখন তিনি পিছনে ফেলে এসেছেন। সময় যত এগিয়েছে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজেকেও নতুন ছাঁচে ঢেলেছেন কোহলি। আগ্রাসন এখনও রয়েছে, তবে তা আগের মত বাঁধনছাড়া নয়। বরং লাগাম পরিয়েছেন তাতে। কেবল ক্রিকেটীয় গণ্ডীর মধ্যেই আজকাল সেই আগ্রাসনকে আবদ্ধ রাখতে শিখে গিয়েছেন তিনি। ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’ বিরাটের (Virat Kohli) এই পরিবর্তন দেখে চমৎকৃত ক্রিকেটবোদ্ধারা।
কোহলির মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য অনেকেই নানা তত্ত্ব দিয়েছেন। কেউ বয়স বাড়ার কথা বলেছেন, কেউ আবার বলেছেন যে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব কোহলিকে সংযম শিখিয়েছে। তবে বিরাটের সাথে ছেলেবেলা থেকে বেড়ে ওঠা ঈশান্ত শর্মার (Ishant Sharma) মতে এসব কিছুই নয়, বরং ক্রিকেট তারকার মানসিকতায় বদল এনেছেন স্ত্রী অনুষ্কা। কথায় আছে, ‘যে কোনো সফল পুরুষের পিছনে একজন নারীর হাত রয়েছে’, দেশের হয়ে ১০০’র বেশী টেস্ট খেলা ঈশান্ত শর্মার (Ishant Sharma) মতে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) জীবনে সেই নারী হলেন অনুষ্কা শর্মা। বেহিসেবি, বল্গাহীন কোহলি, বলিউড অভিনেত্রী অনুষ্কার সংস্পর্শে এসেই বদলে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঈশান্ত। এই নির্দিষ্ট রুটিনে নিজের জীবনকে আনতে পেরেছেন তিনি। যা ‘কিং কোহলি’ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে বিরাটকে।
Read More: Team India: নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন এই ক্রিকেটার, পদ হারানোর ভয়েই সুযোগ দিচ্ছেন না হার্দিক !!
কোহলির জীবনে অনুষ্কার অবদান জানালেন ঈশান্ত-
সম্প্রতি জনপ্রিয় ইউটিউবার রনবীর এলাহাবাদিয়ার পডকাস্ট অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ঈশান্ত শর্মা (Ishant Sharma) । জাতীয় দলের পেসারের মুখে জীবনের নানা কথা উঠে এলো। লম্বা কেরিয়ারে যাঁদের সাথে সময় কাটিয়েছেন, তাঁদের অনেকের সম্বন্ধেই কিছু না কিছু বলতে শোনা গেলো ঈশান্তকে। নিজের বোলিং ‘গুরু’ হিসেবে জাহির খানের (Zaheer Khan) নাম করলেন তিনি। ঈশান্ত সাক্ষাৎকারে জাহিরকে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি জেমস অ্যান্ডারসনের থেকে ভালো বোলার বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও মহেন্দ্র সিং ধোনি (MKS Dhoni) সম্পর্কেও নানা কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। বাইরে থেকে শান্ত-সমাহিত হলেও মাঠের ভেতরে মাঝেমধ্যে ‘মাহি’র মেজাজের আগ্নেয়গিরি ফেটে বেরোয় বলে মন্তব্য ঈশান্তের (Ishant Sharma) । হাসিমুখে বলেন, “মাঠে ও খুবই গালিগালাজ করে। আমাকেও করেছে অনেকবার।” তবে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী প্রশ্নের জবাব দিতে দেখা গেলো তাঁকে।
Ishant Sharma said “I have seen all phases of Virat Kohli’s life, Anushka Sharma has brought in a lot of calmness in his life, now we speak a lot of spirituality and how he is to the temples”. [BeerBiceps YT] pic.twitter.com/gqKZGrzcp9
— Johns. (@CricCrazyJohns) June 25, 2023
দিল্লীর হয়ে খেলেছেন ঈশান্ত (Ishant Sharma) ও বিরাট (Virat Kohli) দুজনেই। ছেলেবেলা থেকে বড় হয়েছেন একসাথে। জীবনের নানা সময়ে কোহলিকে খুব সামনে থেকে দেখেছেন তিনি। তাঁর মানসিকতার পরিবর্তন নজর এড়ায় নি ঈশান্তেরও। তরুণ বয়সে কতটা বেহিসেবী ছিলেন কোহলি, তা বলতে গিয়ে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন ঈশান্ত (Ishant Sharma) । জানান, “আমরা কলকাতায় একটি ঘরোয়া ম্যাচ খেলছিলাম। দিনের খেলার শেষে বিরাট অপরাজিত ছিলো। এরপর সারা রাত পার্টিতে মেতেছিলো ও। পরদিন সকালে গিয়ে ২৫০ রানের ইনিংস খেলে এসেছিলো।” তবে জীবনের এই পর্যায়টি বিরাট (Virat Kohli) কাটিয়ে এসেছেন, তাও জানিয়েছেন ঈশান্ত। এর কৃতিত্ব অনুষ্কাকে দিয়ে ডান-হাতি পেসার বলেন, “আমি বিরাট কোহলির জীবনের সব কটা পর্যায় দেখেছি। অনুষ্কা শর্মা ওর জীবনে অনেকটা শান্তি এনেছে। এখন আমরা আধ্যাত্মিকতা নিয়ে অনেকসময় কথা বলি। কোহলি এখন মন্দিরেও যায়।” প্রসঙ্গত অনুষ্কার (Anushka Sharma) সাথে এর আগে উজ্জ্বয়নীর মহাকাল মন্দির, বৃন্দাবনের নিম করোলি বাবার আশ্রমে ধর্মীয় আচারে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিলো বিরাটকে। সেই দিকেই ইঙ্গিত ঈশান্তের (Ishant Sharma) ।
বিরাটের মানসিক শক্তির কথা বললেন ঈশান্ত শর্মা-
মানসিকভাবে বিরাট (Virat Kohli) কতটা শক্ত তার উল্লেখও করেছেন ঈশান্ত শর্মা (Ishant Sharma)। তিনি জানান “আমি কখনও ওকে কাঁদতে দেখি নি। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখ ও পেয়েছিলো বাবাকে হারানোর পর।” সেই দিনটার কথা এখনও স্পষ্ট মনে রয়েছে ঈশান্তের। পডকাস্টে জানান, “আমরা কর্ণাটকের বিরুদ্ধে একটা রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলছিলাম। বিরাট ম্যাচ থাকলে আমায় বাড়ি থেকে পিক আপ করতে আসত। প্যাটেল নগর থেকে আমরা একসাথে ফিরোজ শাহ কোটলাতে যেতাম। সেই দিন ও খুব সিরিয়াস ছিলো। সাথে ছিলো একজন ভিডিও অ্যানালিস্ট।” হাসিখুশি বিরাটকে (Virat Kohli) চুপচাপ দেখে তিনি যে অবাক হয়েছিলেন তাও জানান ঈশান্ত।
এরপর তিনি বলেন, “আমি ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এত সিরিয়াস কেন? ও কোনো উত্তর দেয় নি। আমি ওর মাথায় হাল্কা টোকা মেরেছিলাম। পরে অন্য একজন আমায় জানায় যে ওর বাবা মারা গিয়েছেন। কি প্রতিক্রিয়া দেব আমি বুঝে পাইনি তখন। আমরা তখন ১৭ রানে ছিলাম। ও তারপরেও ৮০ রানের ইনিংস খেলেছিলো। এমন কিছু যদি আমার সঙ্গে ঘটত, আমি মাঠে নামতে পারতাম বলেই মনে হয় না”
Also Read: WI vs IND: ভাগ্য খুলতে চলেছে অভাগার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে T20 দলে সুযোগ পেতে চলেছেন এই তরুণ !!