IPL 2025: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (IPL) তৃতীয় সফলতম দল কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। গত সতেরো মরসুমের মধ্যে তিন বার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ টুর্নামেন্টের খেতাব জিতেছে তারা। দীর্ঘ যাত্রাপথে একঝাঁক তরুণ তুর্কিকে বড় মঞ্চে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিয়েছে তারা। গড়ে তুলেছে ম্যাচ উইনার হিসেবে। খেলোয়াড় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নাইটদের টিম ম্যানেজমেন্টের মুন্সীয়ানাকে মাঝেমধ্যেই কুর্নিশ জানায় ক্রিকেটজনতা। কিন্তু সাফল্যের পাশাপাশি তাদের তারকা চিনতে যে ভুলও হয় কখনোসখনো, তাও স্বীকার না করে উপায় নেই। অতীতে ক্রিস গেইল (Chris Gayle), ব্রেন্ডন ম্যাকালামদের মত টি-২০ দুনিয়ার সুপারস্টারদের ছেড়ে দেওয়ার ফল ভুগেছে তারা। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বা চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে দাপিয়ে খেলেছেন তাঁরা। এই ট্র্যাডিশন চলছে সাম্প্রতিক সময়েও। অন্তত তিনজন ভারতীয় খেলোয়াড়কে ‘রিলিজ’ করার সিদ্ধান্ত ফিরেছে ব্যুমেরাং হয়ে।
Read More: IPL 2025: গুজরাত জার্সিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ মহম্মদ সিরাজ, আহমেদাবাদের মাঠে দেখা গেলো না মিয়াঁ ম্যাজিক !!
সূর্যকুমার যাদব-

বর্তমানের প্রজন্মের সেরা টি-২০ ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav) প্রথম পরিচিত পেয়েছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতেই। ২০১২ তে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লীগে অভিষেক হয় তাঁর। তখন দাগ কাটতে পারেন নি। এরপর ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল অবধি নাইটদের হয়ে আইপিএল (IPL) খেলেছিলেন তিনি। এরপর আর তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারে নি কলকাতা। ২০১৮’র আইপিএলের আগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সাথে সোয়্যাপ ডিল করেন কেকেআর কর্মকর্তারা। বাণিজ্যনগরীতে পাড়ি দেন সূর্য, বিনিময়ে ‘সিটি অজ জয়’-এর ফ্র্যাঞ্চাইজিতে যোগ দেন নীতিশ রাণা। এই সিদ্ধান্ত যে আদৌ সঠিক ছিলো না তা পরবর্তী কয়েক বছরেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মুম্বই প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম মরসুমেই ৫১২ রান করেছিলেন সূর্য। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি তাঁকে। একের পর এক সাফল্যের শৃঙ্গ ছুঁয়ে হয়ে উঠেছেন ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রী।’
শুভমান গিল-

তালিকায় দ্বিতীয় নামটি হতে পারে শুভমান গিলের (Shubman Gill)। পাঞ্জাবের তরুণ তুর্কি ক্রিকেটমহলে পরিচিতি লাভ করেছিলেন ২০১৮ সালের অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর। সেই বছরই তাঁকে সই করিয়েছিলো কলকাতা। ওপেনিং স্লটে দারুণ ভাবে মানিয়েও নিয়েছিলেন শুভমান। ২০২১ অবধি তিনি ছিলেন নাইট শিবিরে (KKR)। প্রত্যেক বছরই উন্নতি চোখে পড়েছে তাঁর পরিসংখ্যান। কিন্তু তার পরও শুভমানের উপর আস্থা হারিয়েছিলো নাইট রাইডার্স ম্যানেজমেন্ট। ২০২২-এ নতুন দল গুজরাত টাইটান্স (GT) ছিনিয়ে নেয় তাঁকে। আহমেদাবাদের ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে দুরন্ত ক্রিকেট খেলছেন তরুণ ওপেনার। গত তিন মরসুমে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে যথাক্রমে ৪৮৩, ৮৯০ ও ৪২৬ রান। শুভমানের বিদায়ে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে কলকাতার স্কোয়াডে তা পূরণ করা সম্ভব হয় নি এখনও, মতামত একাধিক বিশেষজ্ঞের।
শ্রেয়স আইয়ার-

এই তালিকায় নবতম সংযোজন শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer)। দিল্লী ক্যাপিটালস ছেড়ে ২০২২ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মুম্বইয়ের তারকার হাতে অধিনায়কত্বের ভারও তুলে দিয়েছিলো ফ্র্যাঞ্চাইজি। প্রথম মরসুমে ৩০.৮৪ গড় ও ১৩৪.৫৬ স্ট্রাইক রেটে ৪০১ রান করেছিলেন তিনি। ২০২৩-এ কোমরের চোটের কারণে খেলতে পারেন নি শ্রেয়স। ২০২৪-এ ফিরে এসেই ঝড় তোলেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই এক দশক পর আইপিএল (IPL) ট্রফির স্বাদ পেয়েছিলো কলকাতা (KKR)। ব্যাট হাতেও অনবদ্য ছিলেন তরুণ ক্রিকেটার। ১৫ ম্যাচে ৩৯ গড় ও ১৪৬.৮৬ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৩৫১ রান। মিডল অর্ডারের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন তিনি।
শ্রেয়স (Shreyas Iyer) ও নাইট রাইডার্সের (KKR) জুটি দীর্ঘমেয়াদী হবে, আশায় ছিলেন অনুরাগীরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় নি তেমনটা। আর্থিক বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় তাঁকে ২০২৫ মরসুমের আগে ছেড়ে দেন ভেঙ্কি মাইশোররা (Venkya Mysore)। মেগা নিলামেও তাঁকে দলে ফেরাতে বিশেষ আগ্রহ দেখায় নি কলকাতা। ২৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় তিনি যোগ দিয়েছেন পাঞ্জাব কিংসে (PBKS)। নাইটদের সিদ্ধান্ত কতটা ভুল তা প্রমাণ হয়েছে মরসুমের প্রথম ম্যাচেই। ঘরের মাঠে কলকাতা যেখানে হেরেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে, সেখানে অ্যাওয়ে ম্যাচে পাঞ্জাবকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন শ্রেয়স (Shreyas Iyer)। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে অনবদ্য ৯৭* রানের ইনিংসও।