গত বছরে ক্রিকেট মাঠে বিশেষ ভালো ছিলো না ভারতীয় দলের। এশিয়া কাপে সেমিফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হারতে হয়েছিলো। টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও ১০ উইকেতে লজ্জার হার জুটেছিলো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টানা দুই একদিনের সিরিজেও ট্রফি খোয়াতে হয়েছে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ স্বান্তনা বলতে কেবল কিউইদের বিরুদ্ধে বৃষ্টিবিঘ্নিত টি-২০ সিরিজে ১-০ জন এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জেতা। তা যে যথেষ্ঠ নয়, জানেন ভারতের ক্রিকেটাররাও। সাম্প্রতিক ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ, নতুন নির্বাচক কমিটি নিয়োগ এবং দলের ভবিষ্যত দিশা ঠিক করতে নতুন বছরের প্রথম দিন ‘রিভিউ’ বৈঠকে বসেছিলো BCCI। উপস্থিত ছিলেন বোর্ড প্রধান রজার বিনি (Roger Binny), সচিব জয় শাহ (Jay Shah), পুরুষ দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), কোচ রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। ছিলেন NCA প্রধান ভিভিএস লক্ষ্মণ’ও। বৈঠকে আগামী একদিনের বিশ্বকাপ, দলের ফিটনেস এবং দল নির্বাচনে অতিরিক্ত আইপিএল নির্ভরতা জাতীয় নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। একইসাথে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার জন্য আইপিএল মাপকাঠি নয় বলে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হলো BCCI-এর তরফ থেকে।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে ২০ জনকে বাছলো বোর্ড-

গতকালের ‘রিভিউ’ বৈঠক থেকে আসং ২০২৩ একদিনের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির রূপরেখা তৈরি করে ফেললো ভারতীয় বোর্ড। মোট কুড়িজন ক্রিকেটারের এক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে অব্দি যে কয়টি একদিনের ম্যাচ রয়েছে সেখানে এই কুড়িজনের মধ্যেই থেকেই রোটেশনের ভিত্তিতে বেছে নিতে হবে সেরা একাদশ। যাতে বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ক্রিকেটাররা যথেষ্ট একদিনের ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় সেই কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে BCCI। বর্তমান সময়ে ক্রিকেটের ওয়ার্কলোড একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ম্যাচ খেলার ক্লান্তি দলের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। ইতিমধ্যে ক্যুইন্টন ডি কক, কাগিসো রাবাডাদের মত অনেকে এই নিয়ে সোচ্চারও হয়েছেন। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। ২০ জনের মধ্যে রোটেশন হওয়ায় খেলোয়াড়রা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাবেন বলেই ধারণা বোর্ডের।
নজরে ফিটনেস, আরও কড়া হলো BCCI-

ফিটনেস ইস্যু মেটাতে নতুন পদক্ষেপ নিলো BCCI। এবার থেকে শুধু ইয়ো ইয়ো টেস্ট নয়, জাতীয় দলে খেলতে গেলে ডেক্সা টেস্ট পাস করতে হবে খেলোয়াড়দের। সাম্প্রতিক অতীতে রবীন্দ্র জাদেজা, জসপ্রীত বুমরাহদের ফিটনেস সমস্যা ভুগিয়েছে দলকে। একদিনের বিশ্বকাপের আগে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না ভারত। সামনের বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে যে কুড়ি জন ক্রিকেটারের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, আইপিএলে তাঁদের দিকে বিশেষ নজর রাখবে ভারতীয় বোর্ড। তাঁদের আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির সাথে নিরন্তর যপগাযোগ রেখে চলবে ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (NCA)
ভারতীয় দলে ঢোকার জন্য যথেষ্ঠ নয় IPL-

ভারতীয় ক্রিকেট দলের অতিরিক্ত আইপিএল প্রীতি নিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরে সোচ্চার হয়েছিলেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। এক মরসুম আইপিএলে ভালো প্রদর্শন করেই দ্রুত ভারতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন অনেকে। দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা না থাকার দ্রুত আন্তর্জাতিক আঙিনা থেকে হারিয়েও যাচ্ছিলেন তাঁরা। প্রতিভার অপমৃত্যু বন্ধ করতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বোর্ড। এখন থেকে আইপিএলের পারফর্ম্যান্স নয়, বরং জাতীয় দলের যোগ্যতা অর্জনের জন্য দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলিতে লাগাতার ভালো পারফর্ম্যান্স করতে হবে ক্রিকেটারদের। নাম গোপন রাখার শর্তে বোর্ডের এক কর্তা জানিয়েছেন, “আগে এক মরসুম আইপিএলে সফল হলেই জাতীয় দলের দরজা খুলে দেওয়া হত। এখন তা বদলে যেতে চলেছে। ক্রিকেটারদের আগে দীর্ঘসময় ঘরোয়া ক্রিকেটে সময় কাটাতে হবে। ভালো পারফর্ম করলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া যাবে।”