IPL 2024: এগিয়ে আসছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (IPL) সপ্তদশ মরসুম। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে যে মার্চের শেষ বা এপ্রিলের গোড়া থেকে শুরু হতে পারে ব্যাট-বলের দ্বৈরথ। চলতে পারে মে মাসের শেষ সপ্তাহ অবধি। গত ১৯ ডিসেম্বর ছিলো ‘মিনি নিলাম।’ দুবাইয়ের কোকা-কোলা এরিনায় বিসিসিআই নির্ধারিত ৩৩৩ জনের তালিকা থেকে পছন্দমত ক্রিকেটার বেছে নিয়ে নিজেদের স্কোয়াডের ফাঁকফোকর পূরণ করেছে দশ ফ্র্যাঞ্চাইজি। গত আইপিএলের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংস (CSK), রানার্স গুজরাত টাইটান্স (GT) হোক বা দিল্লী ক্যাপিটালস, কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) মত পিছিয়ে থাকা দল-সকলেই নতুন উদ্যমে আসন্ন মরসুমে ট্রফির জন্য ঝাঁপাতে তৈরি।
২০১২ ও ২০১৪ সালে ট্রফি জিতেছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে একবার চেন্নাই ও একবার পাঞ্জাবকে হারিয়ে খেতাব ঘরে তুলেছিলো বেগুনি-সোনালী শিবির। এরপর লম্বা সময় কেটে গেলেও আর সাফল্য ধরা দেয় নি। মাঝে ২০২১ সালে ফাইনালে পা রাখলেও হারতে হয়েছিলো চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় ট্রফি জয়ের ঠিক এক দশক পর আরও একবার সাফল্যের সরণিতে হাঁটতে মরিয়া নাইট শিবির। গৌতম গম্ভীরকে (Gautam Gambhir) দলে ফিরিয়েছে তারা। অধিনায়ক নয় বরং মেন্টর হিসেবে দেখা যাবে তাঁকে। নিলামেও অর্থের বৃষ্টি করতে কোনোরকম কসুর করেন নি দল মালিক শাহরুখ খান, জুহি চাওলা’রা। তা সত্ত্বেও নাইটদের ট্রফি ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ব্যাটিং বিভাগে একমাত্র রিঙ্কু সিং (Rinku Singh) ছাড়া ধারাবাহিক পারফর্মারের অভাব রয়েছে বলে মত তাঁদের।
Read More: বিশ্বকাপের আগে ধারাবাহিকতা হারাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া, প্রশ্নের মুখে BCCI-এর স্ট্র্যাটেজি !!
গত IPL-এ অনবদ্য খেলেছিলেন রিঙ্কু-
২০২৩-এর আইপিএলে (IPL) বেশ ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিলো নাইট রাইডার্স (KKR) দল’কে। দলগঠনে পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট ছিলো শুরু থেকেই। গোটা মরসুম জুড়ে মোট ৮টি ওপেনিং জুটি ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছিলো কোচ চন্দ্রকান্ত পন্ডিতকে। লিটন দাস (Litton Das), নারায়ণ জগদীশন, আন্দ্রে রাসেলের মত তারকার ব্যাট হাতে ক্রমাগত ব্যর্থতা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলো দল’কে। সমস্যাসঙ্কুল মরসুমে কলকাতার আশার আলো হয়ে উঠেছিলেন রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। ২০২২ মরসুমে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের (LSG) বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে ভালো খেলেছিলেন রিঙ্কু। কিন্তু ২০২৩ সাল আক্ষরিক অর্থেই ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে উত্তরপ্রদেশের তরুণের আত্মপ্রকাশের বছর।
রিঙ্কু ম্যানিয়ায় দেশ প্রথম আক্রান্ত হয়েছিলো গুজরাত টাইটান্স (GT) বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচের দিন । শেষ ওভারে জয়ের জন্য নাইটদের প্রয়োজন ছিলো ২৯ রান। জয় অসম্ভব, মেনে নিয়েছিলেন অতি বড় নাইট ভক্ত’ও। কিন্তু যশ দয়ালের (Yash Dayal) ওভারে পরপর পাঁচ ছক্কা মেরে এক অবিশ্বাস্য জয় কলকাতাকে উপহার দিয়েছিলেন রিঙ্কু (Rinku Singh)। এরপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। সানরাইজার্স, পাঞ্জাব, লক্ষ্ণৌর মত দলের বিরুদ্ধেও দারুণ খেলেন তিনি। মরসুমে ১৪ ম্যাচে প্রায় ৬০ গড় ও ১৫০ স্ট্রাইক রেটে করেন ৪৭৪ রান। দলের অন্যান্য তারকাদের পিছনে ফেলে হন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
আসন্ন মরসুমে KKR ব্যাটিং অতিরিক্ত রিঙ্কু নির্ভর-
আইপিএলের (IPL) সাফল্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে রিঙ্কু সিং-এর (Rinku Singh) সামনে। তিনি ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। ভারতের হয়েও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে, এশিয়ান গেমসে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন ‘ফিনিশার’-এর ভূমিকায়। এছাড়াও সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে কেরিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক অর্ধশতক’ও পেয়েছেন। জুন মাসের টি-২০ বিশ্বকাপে তিনি ভারতীয় দলে ‘অটোমেটিক চয়েজ’, বলছেন অনেকে। গত মরসুম থেকে নাইট (KKR) জনতার ‘হার্টথ্রব’ রিঙ্কুর (Rinku Singh) দিকে এবারও নজর থাকবে সমর্থকদের। তাঁর থেকে বড় রান চাইবেন অনুরাগীরা। সমর্থকদের প্রত্যাশার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে রিঙ্কুও যে সর্বস্ব দেবেন তা বলাই যায়। আলিগড়ের তরুণ ভরসা যোগালেও বাকি ব্যাটিং অর্ডারকে নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে নাইট রাইডার্স অনুরাগীদের।
অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer) লম্বা সময় পর ফিরছেন আইপিএলে। সম্প্রতি গুটিকয় টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। একটি অর্ধশতক করলেও জড়তা স্পষ্ট দেখা গিয়েছে ব্যাট হাতে। আফগানিস্তান সিরিজ থেকে বাদ’ও পড়েছেন তিনি। নীতিশ রানা (Nitish Rana) শেষ পাঁচ ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে ১৭, ৪২*, ০, ৮ ও ৫। ব্যাটিং বিভাগের আরেক পরিচিত মুখ ভেঙ্কটেশ আইয়ার’ও সাদা বলের খেলায় ফর্মে নেই। ক্যারিবিয়ান তারকা আন্দ্রে রাসেল (Andre Russell) শেষ ১০ ইনিংসে পঞ্চাশের গণ্ডী পেরিয়েছেন মাত্র ১ বার। রানের মধ্যে নেই জেসন রয়’ও। সাম্প্রতিক নিলামে বোলিং বিভাগকে শক্তিশালী করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও ব্যাটিং বিভাগের প্রাপ্তি বিশেষ ছিলো না নাইটদের। শ্রেয়স, নীতিশ, রাসেল’রা যদি ফর্মে না ফেরেন, তাহলে গতবারের মতই রিঙ্কুকেই হয়ত দেখা যাবে একা কুম্ভ হয়ে লড়াই করতে।