জমে উঠেছে ২০২৪-এর আইপিএল (IPL)। ধীরে ধীরে শেষের দিকে এগোচ্ছে টুর্নামেন্টের লীগ পর্ব। আস্তে আস্তে বোঝা যাচ্ছে প্লে-অফের দিকে অগ্রসর কোন দলগুলি। প্রতি বছরের মত এবারও নিজেদের ব্যাটিং বা বোলিং মুন্সীয়ানায় মন জিতছেন একঝাঁক ক্রিকেটার। এই তালিকায় যেমন বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব বা জসপ্রীত বুমরাহ’র মত প্রতিষ্ঠিত তারকারা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন অভিষেক পোড়েল, জেক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক, রচিন রবীন্দ্রের মত নতুন মুখেরাও। আইপিএল যেমন অনেক অল্প পরিচিত বা ঘরোয়া ক্রিকেটের আঙিনার খেলোয়াড়কে আত্মপ্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠেছে, তেমন দেখা গিয়েছে উলটো চিত্র’ও। গত মরসুমের তিন অধিনায়ক এবার সময় কাটাচ্ছেন রিজার্ভ বেঞ্চে।
Read More: IPL 2024: আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সঞ্জু স্যামসন, কড়া শাস্তি পাচ্ছেন রাজস্থান অধিনায়ক !!
ডেভিড ওয়ার্নার-
গত মরসুমে ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে যাওয়ায় বিকল্প অধিনায়কের সন্ধানে ছিলো দিল্লী ক্যাপিটালস (DC)। তারা বেছে নেয় ডেভিড ওয়ার্নারকে (David Warner)। আইপিএলে দীর্ঘ সময় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অধিনায়কত্ব করেছেন ওয়ার্নার। জিতেছেন ট্রফিও। সেই অভিজ্ঞতাই দিল্লীর নেতা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে দিয়েছিলো তাঁকে। ১৪ ম্যাচে ৫১৬ রান করেন তিনি। যদিও নেতা হিসেবে দাগ কাটতে পারেন নি। দশ দলের টুর্নামেন্টে নবম স্থানে শেষ করে দিল্লী। ওয়ার্নারকে রিটেন করার পথেই হেঁটেছিলো দল। যদিও ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant) ফিট হয়ে ওঠায় তাঁর হাতেই ফেরানো হয় অধিনায়কত্ব।
চলতি মরসুমে অধিনায়ক না থাকলেও প্রথম কয়েকটি ম্যাচে ওপেনার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলেন ওয়ার্নার (David Warner)। কিন্তু ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন নি। ৭টি ম্যাচ খেলে ২৩.৮৬ গড়ে তিনি করেছেন কেবল ১৬৭ রান। স্ট্রাইক রেট’ও ১৩৬-এর আশেপাশে। বাধ্য হয়েই ওয়ার্নারের বদলে তাঁর স্বদেশীয় জেক ফ্রেজার ম্যাকগার্ককে (Jake Fraser McGurk) খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লী (DC) ফ্র্যাঞ্চাইজি। একের পর এক ঝোড়ো ইনিংস খেলে ওপেনার পজিশনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত’ও করে ফেলেছেন ম্যাকগার্ক। ফলত বর্তমানে ডেভিড ওয়ার্নারের জায়গা হয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চেই।
শিখর ধাওয়ান-
এই তালিকাতে থাকবেন শিখর ধাওয়ান’ও (Shikhar Dhawan)। গত মরসুমে পাঞ্জাব কিংস (PBKS) ফ্র্যাঞ্চাইজির অধিনায়ক ছিলেন তিনি। দল ভালো পারফর্ম্যান্স না করলেও বেশ কিছু ম্যাচে একা কুম্ভ হয়ে ব্যাট হাতে লড়াই করেছিলেন। একটা সময় কমলা টুপিরও মালিক ছিলেন তিনি। মরসুমের মাঝপথে চোট পেয়ে কিছুদিন বাইরে ছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও ১১ ম্যাচে প্রায় ৪২ গড় ও ৩টি অর্ধশতক-সহ ৩৭৩ রান করেন তিনি। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বদল এসেছে তাঁর ফর্মে। চলতি মরসুমেও নেতা হিসেবেই শুরুটা করেছিলেন তিনি। মাত্র ৫ ম্যাচ খেলেই অবশ্য ছিটকে যেতে হয়েছে দল থেকে।
যে ৫টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ধাওয়ান (Shikhar Dhawan), সেখানে মোট ১৫২ রান করেছেন তিনি। গড় ৩০.৪০। একটি ম্যাচে অর্ধশতক করলেও বাকিগুলিতে বিশেষ রান পান নি। স্ট্রাইক রেট এসে ঠেকেছে ১২৫.৬২তে। এরপর চোটের কারণেই এই মরসুমেও দলের বাইরে চলে গিয়েছেন তিনি। পরিবর্তে নেতৃত্বের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার স্যাম কারান (Sam Curran)। বর্তমানে ৩৮ পেরিয়েছে শিখর ধাওয়ানের বয়স। আগামী বছরের মেগা অকশনের আগে পাঞ্জাব কিংস তাঁকে আদৌ রিটেন করবে কিনা তা নিয়ে আপাতত রয়েছে সংশয়।
নীতিশ রাণা-
লোয়ার ব্যাকের চোটে গত মরসুমে আইপিএল (IPL) খেলতে পারেন নি কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার’ও (Shreyas Iyer)। বদলি হিসেবে নীতিশ রাণা’র (Nitish Rana) হাতে নেতৃত্বভার তুলে দেয় নাইট শিবির। গোটা মরসুম জুড়েই ধারাবাহিকতার অভাব দেখা গিয়েছিলো তাদের খেলায়। শেষ ম্যাচ অবধি খাতায়-কলমে প্লে-অফের আশা জেগে থাকলেও লক্ষ্ণৌর বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে পরাজিত হওয়ায় ছিটকে গিয়েছিলো দল। সামগ্রীক পারফর্ম্যান্স আশানুরূপ না হলেও ব্যাট হাতে কলকাতার মিডল অর্ডারকে ভরসা যুগিয়েছিলেন রাণা (Nitish Rana)। করেন ১৪ ম্যাচে ৪১৩ রান। রিঙ্কু সিং-এর পর দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও হয়েছিলেন তিনি।
এই মরসুমের শুরুতেই অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন নীতিশ (Nitish Rana)। তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় শ্রেয়স আইয়ারকে। নীতিশ রাণাকে সহ-অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। দিল্লীর ক্রিকেটারের দুঃসময় অবশ্য শুরু হয় মরসুম শুরুর পর। প্রথম ম্যাচে একাদশে ছিলেন তিনি। ৯ রান করে আউট হন। তারপর চোট পেয়ে ছিটকে যান। ফিট হয়ে স্কোয়াডে ফিরলেও ছন্দ খুঁজে পাওয়া নাইট শিবিরের মিডল অর্ডারে এই মুহূর্তে জায়গা হচ্ছে না নীতিশের (Nitish Rana)। বেশ কিছু ম্যাচে অতিরিক্তের তালিকায় তাঁর জায়গা হলেও ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবেও পাচ্ছেন না মাঠে নামার সুযোগ।