IPL 2025: খরা কাটলো বেঙ্গালুরুর (RCB)। আঠারো বছরের অপেক্ষা শেষে প্রথমবারের জন্য আইপিএল (IPL) ট্রফির স্বাদ পেলো তারা। গতকালের ফাইনালে পাঞ্জাব কিংস-কে ৬ রানের ব্যবধানে হারিয়ে বাজিমাত বিরাটদের। ১৯১ তাড়া করতে নেমে শ্রেয়স আইয়ার, শশাঙ্ক সিং-দের থামতে হলো ১৮৪ রানেই। জমজমাট ম্যাচ শেষে উৎসবে মাততে দেখা গেলো রজত পাটিদারদের। সেই উৎসবে যোগ দেন ক্রিস গেইল, এবি ডিভিলিয়ার্সের মত বেঙ্গালুরুর প্রাক্তনীরাও। গতকাল আহমেদাবাদে পুরস্কৃত করা হলো টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়দের। কমলা টুপির পাশাপাশি এমার্জিং প্লেয়ার ও সর্বোচ্চ সংখ্যক চার মারার পুরস্কার পেলেন সাই সুদর্শন। পার্পল ক্যাপ পেলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। মোস্ট ভ্যালুয়েবল তারকার খেতাব পেলেন সূর্যকুমার যাদব। সাই, প্রসিদ্ধ, সূর্যদের বিপরীত মেরুতে যাঁরা রইলেন তেমন এগারো জনের তালিকা রইলো এই প্রতিবেদনে।
Read More: “লুট-পুট গায়া…”, হোটেলে ফিরতেই বাচ্চাদের মতো লুটিয়ে পড়ে নাচলেন বিরাট কোহলি, সাথ দিলেন ‘ক্যাপ্টেন’ পাটিদার-ক্রুনাল-দীনেশ কার্তিক !!
ওপেনিং-
রচিন রবীন্দ্র (চেন্নাই)-

৪ কোটি টাকার বিনিময়ে জেড্ডার মেগা নিলাম থেকে নিউজিল্যান্ডের রচিন রবীন্দ্রকে দলে ফিরিয়েছিলো চেন্নাই সুপার কিংস। মরসুমের শুরুটা ভালোই করেছিলেন তরুণ অলরাউন্ডার। কিন্তু আইপিএল যত এগোতে থাকে ততই ছন্দ হারাতে থাকেন তিনি। বাধ্য হয়েই শেষ কয়েকটি ম্যাচে তাঁকে একাদশ থেকেই বাদ দেন কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং। ৮ ম্যাচ খেলে ২৭.২৯ গড়ে মাত্র ১৯১ রান করতে পেরেছেন রচিন। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিলো মাত্র ১২৮.১৯।
রাহুল ত্রিপাঠী (চেন্নাই)-
৩.৪ কোটি টাকায় অভিজ্ঞ টপ-অর্ডার ব্যাটারকে স্কোয়াডে সামিল করেছিলো চেন্নাই সুপার কিংস। এর আগে নাইট রাইডার্স, রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস বা সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের মত ফ্র্যাঞ্চাইজিতে সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হলুদ জার্সিতে চূড়ান্ত হতাশ করেছেন রাহুল। ৫ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ৫৫ রান। গড় ১১.০০। স্ট্রাইক রেট ৯৬.৪৯। অষ্টাদশতম আইপিএলের ফ্লপ একাদশে জায়গা হবে তাঁরও।
মিডল অর্ডার-
ঈশান কিষণ (হায়দ্রাবাদ)-

মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সাথে সাত বছরের সম্পর্ক ভেঙে এবার সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদে যোগ দিয়েছিলেন ঈশান কিষণ। ঝাড়খণ্ডের তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে শুরুটা করেছিলেন দুর্দান্ত গতিতে। রাজস্থানের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠ উপ্পলে করেন শতরান। কিন্তু তারপরেই ক্রমে নীচের দিকে নামতে থাকে ফর্মের গ্রাফ। ১১.২৫ কোটির তারকা টুর্নামেন্টের শেষ পর্বে এসে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ৯৪* রানের একটি ইনিংস খেলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে নি তাতে। মরসুমে ১৪ ম্যাচে ৩৫৪ করেছেন ঈশান। কিন্তু এর মধ্যে ২০২ এসেছে দুই ম্যাচে। বাকি ১২ ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ১৫২। অর্থাৎ গড় ১৩’র কম।
ঋষভ পন্থ (লক্ষ্ণৌ)-

অষ্টাদশতম আইপিএলের ফ্লপ একাদশে নাম থাকবে ঋষভ পন্থেরও। জেড্ডার মেগা নিলাম থেকে ২৭ কোটির রেকর্ড মূল্যে তাঁকে দলে সামিল করেছিলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস। সেই প্রাইস ট্যাগের প্রতি মোটেই সুবিচার করতে পারেন নি ঋষভ। মরসুমের শুরুটাই করেছিলেন শূন্য করে। লীগ পর্বের প্রথম ১৩টি ম্যাচের মধ্যে ৭টিতে দশ পেরোতে পারেন নি তিনি। ছিলো তিনটি শূন্য। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে মন্থর ৬৩ ছাড়া কোনো উল্লেখযোগ্য ইনিংসও ছিলো না ঝুলিতে। শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে শতরান কোনোক্রমে মান বাঁচিয়েছে তার। ২৪.৪৫ গড় ও ১৩৩.১৬ স্ট্রাইক রেটে ২৬৯ রান করে মরসুমে ইতি টেনেছেন পন্থ।
ভেঙ্কটেশ আইয়ার (কলকাতা)-

কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৩.৭৫ কোটি টাকা দিয়ে দলে ফিরিয়েছিলো ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে। ভেঙ্কি মাইশোর, শাহরুখ খানদের আস্থার দাম দিতে পারেন নি মধ্যপ্রদেশের অলরাউন্ডার। অফ ফর্মের পাশাপাশি চোট-আঘাতও ভুগিয়েছে তাঁকে। শেষে বাদও পড়েন একাদশ থেকে। এই মরসুমে ১১ ম্যাচে ২০.২৮ গড় ও ১৩৯.২১ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ১৬০ রান করতে পেরেছেন তিনি। করেছেন একটি মাত্র অর্ধশতক। নাইটদের ব্যর্থতার নেপথ্যে অন্যতম বড় কারণ ব্যাট হাতে ভেঙ্কটেশের ছন্দহীনতা।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (পাঞ্জাব)-
হতাশ করেছেন পাঞ্জাব কিংসের গ্লেন ম্যাক্সওয়েল’ও। ৪.২৫ কোটিতে তাঁকে ফিরিয়েছিলেন প্রীতি জিন্টারা। কিন্তু পারফর্ম্যান্সে প্রাইস ট্যাগের কোনো রকম প্রতিফলন চোখে পড়ে নি। আঙুলের চোটে ছিটকে যাওয়ার আগে ৭ ম্যাচে ৮.০০ গড়ে মাত্র ৪৮ রান করেছিলেন তিনি। নিয়েছিলেন ৪টি উইকেট। ম্যাক্সওয়েল ছিটকে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ারই মিচেল আওয়েনকে মরসুমের মাঝপথে দলে নেয় পাঞ্জাব।
লোয়ার অর্ডার-
রিঙ্কু সিং (কলকাতা)-
১৩ কোটি টাকা খরচ করে রিঙ্কু সিং-কে রিটেন করেছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু বেগুনি-সোনালী জার্সিতে চেনা ছন্দে পাওয়া যায় নি উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেটারকে। তাঁর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে যে নিরন্তর কাটাছেঁড়া চালিয়েছেন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ও মেন্টর ডোয়েন ব্র্যাভো, তার ফল ভুগতে হয়েছে রিঙ্কুকে। ১১ ইনিংসে ২৯.৪২ গড়ে কেবল ২০৬ রানই করতে পেরেছেন তিনি।
লিয়াম লিভিংস্টোন (বেঙ্গালুরু)-
৭.৫ কোটিতে লিয়াম লিভিংস্টোনকে দলে সামিল করেছিলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ব্যাটিং ও বোলিং-দুই বিভাগেই বেশ হতাশ করেছেন তিনি। মরসুমের মাঝপথে বাদও পড়েছিলেন। পরে যদিও লিভিংস্টোনকে ফেরানো হয় একাদশে। এই আইপিএলে ১০ ম্যাচে ১৬.০০ গড়ে ১১২ রান করেছেন তিনি। নিয়েছেন ২টি মাত্র উইকেট।
বোলিং-
রবিচন্দ্রণ অশ্বিন (চেন্নাই)-
সুখের হয় নি রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের হোমকামিং। চেন্নাই সুপার কিংসে ফিরেছিলেন ৯ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। আহামরি পারফর্ম্যান্স করতে পারেন নি কিংবদন্তি তারকা। ১০ ম্যাচ খেলে মাত্র ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। কৃপণ বোলার হিসেবে সুনাম রয়েছে অশ্বিনের। কিন্তু এবার তাঁর ইকোনমি ছুঁয়েছে ৯.২৯। বোলিং গড়’ও ৪৫ ছুঁইছুঁই।
কাগিসো রাবাডা (গুজরাত)-

১০.৭৫ কোটি টাকার বিনিময়ে গুজরাত টাইটান্সে যোগ দিয়েছিলেন কাগিসো রাবাডা। দক্ষতার প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি প্রোটিয়া পেসার। নিষিদ্ধ দ্রব্য সেবনের কারণে এক মাস নিষদ্ধ হয়েছিলেন। ফলে অধিকাংশ ম্যাচে খেলতেই পারেন নি তিনি। প্রথম দুটি ম্যাচে অংশগ্রহণ করার পর দেশে ফিরে যান। নির্বাসন উঠে যাওয়ার পরেও সবক’টি ম্যাচ খেলেন নি রাবাডা। জাতীয় দলের ম্যাচ থাকায় দেশে ফিরে যেতে হয়। ৪ ম্যাচে মাত্র ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
মহম্মদ শামি (হায়দ্রাবাদ)-
২০২৩ আইপিএলে পার্পল ক্যাপ জিতেছিলেন মহম্মদ শামি। চোটের জন্য গত বছর অংশ নিতে পারেন নি টুর্নামেন্টে। এবার সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের জার্সিতে মাঠে ফিরলেন তিনি। সুখের হলো না প্রত্যাবর্তন। ১১.২৫ ইকোনমি ও ৫৬.১৭ গড়ে মাত্র ৬ উইকেট পেয়েছেন তিনি। ১০ কোটির বোলারকে মাত্র ৯টি ম্যাচে খেলিয়েছে হায়দ্রাবাদ।
এক নজরে IPL-এর ফ্লপ একাদশ-
রচিন রবীন্দ্র, রাহুল ত্রিপাঠী, ঈশান কিষণ, ঋষভ পন্থ, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, রিঙ্কু সিং, লিয়াম লিভিংস্টোন, রবিচন্দ্রণ অশ্বিন, কাগিসো রাবাডা, মহম্মদ শামি।