IPL 2025: টানা দুই ম্যাচে হেরে রীতিমত বিপর্যস্ত ছিলো রাজস্থান রয়্যালস। পয়েন্ট তালিকায় তারা ছিলো সবার নীচে। অবশেষে অষ্টাদশতম আইপিএল (IPL) মরসুমের প্রথম জয়টি পেলেন রিয়ান পরাগ, সঞ্জু স্যামসনরা। আজ বরসাপাড়া স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথম বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চেন্নাই অধিনায়ক ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। প্রথম ওভারে উইকেটও হারিয়েছিলো রাজস্থান। এরপর নীতিশ রাণার ধুন্ধুমার ইনিংস আশার আলো জাগায় রয়্যালস শিবিরে। রিয়ান পরাগ, শিমরণ হেটমায়ারদের ক্যামিও তাদের পৌঁছে দিয়েছিলো ১৮২ অবধি। রান তাড়া করতে নেমে নড়বড়ে দেখালো চেন্নাইকে। ব্যর্থ রাহুল ত্রিপাঠী, রচিন রবীন্দ্র, শিবম দুবে, বিজয় শঙ্কর’রা। ইনিংসের শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজা চেষ্টা চালান লড়াইতে চেন্নাইকে টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেন নি সিএসকে’র থালাপতি’ও। ১৭৬-এ থামতে হয় পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নদের। ৬ রানে জিতে বাজিমাত রাজস্থানের।
Read More: IPL 2025: রাজস্থান বনাম চেন্নাই ম্যাচে দুর্ঘটনা, হাতে গুরুতর আঘাত পেয়ে ছিটকে যাচ্ছেন অধিনায়ক !!
১) ফের একবার ব্যর্থ যশস্বী-
আইপিএলের তৃতীয় ম্যাচেও রানের মুখ দেখলেন না যশস্বী জয়সওয়াল। সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে ১ রান করে আউট হয়েছিলেন। নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিলো ২৯ রান। আর আজ চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ৪-এর বেশী এগোতে পারলেন না বাম হাতি ওপেনার। খলিল আহমেদের বলে তরুণ তুর্কি ধরা পড়েন রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের হাতে। তিনি যখন সাজঘরে ফেরেন তখন রাজস্থানের স্কোরবোর্ডেও ৪ রান’ই।
২) ধ্বংসযজ্ঞ চালালেন নীতিশ রাণা-

প্রথম ওভারেই উইকেট খুইয়ে বসেছিলো রাজস্থান রয়্যালস। কঠিন পরিস্থিতি থেকে তাদের উদ্ধার করেন নীতিশ রাণা। প্রাক্তন নাইট রাইডার্স তারকা মরসুমের প্রথম দুটি ম্যাচে রানের মুখ না দেখায় পড়েছিলেন তীব্র সমালোচনার মুখে। আজ নিন্দুকদের জবাব দিলেন তিনি। জেইমি ওভারটন, রবিচন্দ্রণ অশ্বিনদের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠে তাঁর ব্যাট। একের পর এক চার-ছক্কা হাঁকিয়ে মাত্র ২১ বলে অর্ধশতক সম্পূর্ণ করেন তিনি। দিনকয়েকের মধ্যেই যমজ সন্তানের বাবা হবেন নীতিশ। তাঁর অর্ধশতক সন্তানদেরই উৎসর্গ করেছেন তিনি।
৩) আবারও স্টাম্পিং-এ নজর কাড়লেন ধোনি-

৪৩ পেরিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু এখনও স্টাম্পের পিছনে তাঁর চেয়ে বিশ্বস্ত সম্ভবত আর কেউ নেই। আইপিএলের প্রথম ম্যাচে ০.০১২ সেকেন্ডের মধ্যে সূর্যকুমার যাদবকে স্টাম্পড করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর বিদ্যুৎ গতির স্টাম্পিং-এর শিকার হয়েছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ফিল সল্ট। ০.০১৬ সেকেন্ডে তাঁর স্টাম্প ভেঙেছিলেন এম এস ডি। আজও নীতিশ রাণা’কে স্টাম্প করলেন তিনি। যদিও আজ দ্রুত গতিতে স্টাম্প ভাঙতে হয় নি ধোনি’কে। রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়ে স্টেপ আউট করেছিলেন নীতিশ। বল দস্তানাবন্দী করার পর তাঁর কাছে সময় ছিলো উইকেট ভাঙার। ২২৫ স্ট্রাইক রেটে ৩৬ বলে ৮১ করে থামেন নীতিশ।
৪) আঘাত পেলেন রিয়ান-

রাজস্থান ইনিংস চলাকালীন ডান হাতের কবজিতে চোট পান তাদের কার্যনির্বাহী অধিনায়ক রিয়ান পরাগ। মাথিশা পথিরাণা’কে ১৮তম ওভারে পুল মারতে গিয়ে ভুল করে বসেছিলেন তিনি। যন্ত্রণায় গ্লাভস খুলে ফেলেন অসমের তরুণ। হাত থেকে ফেলে দেন ব্যাট’ও। মূল বাইশ গজের পাশের পিচে দীর্ঘসময় তাঁর চিকিৎসা চলে আজ। সামলে নিয়ে যদিও পরে ব্যাট ধরেন তিনি।
৫) নজর কাড়লেন নূর, পথিরাণারা-

নীতিশ রাণা ছাড়া রাজস্থানের হয়ে উল্লেখযোগ্য রান একমাত্র রিয়ান পরাগের। ২৮ বলে ৩৭ করেন তিনি। মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডারের ব্যর্থতায় শেষমেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৮২ তুলে থামে গুয়াহাটির হোম টিম। বল হাতে নজর কাড়লেন নূর আহমেদ। আজও ২টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন খলিল আহমেদ ও মাথিশা পাথিরাণা’ও। ১টি করে সাফল্য জাদেজা ও অশ্বিনের।
৬) শূন্য করে সাজঘরে রচিন-
আজ রাহুল ত্রিপাঠীকে সাথে নিয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন রচিন রবীন্দ্র। চেনা ছন্দে পাওয়া গেলো না তাঁকে। প্রথম ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুরেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন সাজঘরে। শূন্য রানেই প্রথম উইকেট খুইয়ে বসেছিলো চেন্নাই সুপার কিংস। সপ্তম ওভারে আউট হন আরেক ওপেনার রাহুল ত্রিপাঠীও। ১৯ বলে ২৩ করেন তিনি।
৭) চোট সামলে সফল ঋতুরাজ-

এক অদ্ভুত সমাপতন দেখা গেলো আজ গুয়াহাটির বরসাপাড়া স্টেডিয়ামে। রাজস্থান অধিনায়ক রিয়ান পরাগের মতই হাতে আঘাত পেলেন চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক ঋতুরাজ গায়কোয়াড়’ও। তুষার দেশপাণ্ডের লাফিয়ে ওঠা বলে পুল মারতে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের তারকা। শটে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন নি। ব্যাট এড়িয়ে বল আছড়ে পড়ে তাঁর কনুইতে। বেশ কিছুক্ষণ চিকিৎসা চলে তাঁরও। যদিও চোটের ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন তিনি। ঢাল হয়ে দাঁড়ান রাজস্থানের আক্রমণের সামনে। ৪৪ বলে করেন ৬৩ রান।
৮) হাসারাঙ্গার ঘূর্ণিতে চাপে চেন্নাই-
গত দুই ম্যাচের পারফর্ম্যান্সের নিরিখে রাজস্থানের বোলিং ইউনিটকে দুর্বল আখ্যা দিচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আজ ভুল প্রমাণ করলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। শ্রীলঙ্কার স্পিনা-এর ‘রহস্য’ আজ ভেদ করতে গিয়ে বেশ চাপে পড়তে হলো চেন্নাই ব্যাটারদের। ৪ ওভারে ৩৫ রান খরচ করে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি। সাজঘরে ফেরান রাহুল ত্রিপাঠী, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, শিবম দুবে ও বিজয় শঙ্করকে।
৯) রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ হাসি রাজস্থানের-
গত ম্যাচে নয় নম্বরে নেমে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আজ নামেন সাতে। সুযোগ ছিলো ট্রেডমার্ক ভঙ্গিতে ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করার। কিন্তু পারলেন না তিনি। শেষ ওভারে বাকি ছিলো ২০ রান। শেষ ওভারের প্রথম বলে শিমরণ হেটমায়ারের একটি দুর্দান্ত ক্যাচে থামতে হলো সিএসকে’র ‘থালা’কে। ১২ বলে ১৬ করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। পরবর্তী দু’টি ডেলিভারিতে কেবল দুটি সিঙ্গল হজম করে চাপ বাড়িয়েছিলেন সন্দীপ শর্মা। চতুর্থ বলে একটি ছক্কা মেরে ক্ষণিকের আশা জাগিয়েছিলেন জেইমি ওভারটন। কিন্তু পরবর্তী দুটি ডেলিভারি থেকে আসে কেবল ২ ও ২। লক্ষ্য থেকে ৭ রান দূরেই থামতে হয় চেন্নাইকে।