IPL 2025: চেন্নাই সুপার কিংস এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নেওয়ার পর আজ একে অপরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হয়। চেপক স্টেডিয়ামের পিচে টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে আগ্ৰাসী হয়ে ওঠেন ব্যাঙ্গালুরু ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ইনিংসে তারা অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াডের অর্ধশতরানে ভর করে ১৯৬ রান সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে চেন্নাই সুপার কিংস একের পর এক উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে যায়। বল হাতে জশ হ্যাজেলউড থেকে যশ দয়াল ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ফলে চেন্নাইকে হারিয়ে ৫০ রানে ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় বেঙ্গালুরু।
১) সল্ট ও বিরাটের দুরন্ত প্রচেষ্টা-
প্রথম ইনিংসে ওপেনিং করতে নেমে ফিল সল্ট ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। তার সঙ্গে বিরাট কোহলিও দ্রুত রান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পঞ্চম ওভারে নূর আহমেদের করা বলে মহেন্দ্র সিং ধোনি চোখের পলকে এক ঝটকায় স্টাম্পিং করে সল্টের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন। এই ইংল্যান্ড তারকা ১৬ বলে মাত্র ৩২ রান করে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা লাগান। এরপর দেবদত্ত পাডিক্কালের সঙ্গে জুটি বাঁধেন বিরাট। কিন্তু পাডিক্কালও তার ব্যাটিং ইনিংস বেশিক্ষণ স্থায়ী করতে পারেননি। রবিচন্দ্রন আশ্বিনের ঘূর্ণি বলে অধিনায়ক রুতুরাজকে ২৭ রানে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। বিরাট কোহলিও দ্রুত রান সংগ্রহ করতে গিয়ে চাপে পড়ে যান। নূর আহমেদের করা বলে সুইপ মারতে গিয়ে ১২.২ ওভারে ডিপ মিড উইকেটে আশ্বিনের হাতে বল পৌঁছে দেন। এই তারকা ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে ৩১ রান।
READ MORE: IPL 2025: ১৭ বছর পর চেন্নাইতে কোহলিদের রাজ, ৫০ রানে ম্যাচ জিতলো RCB !!
২) পাটিদারের ভরসাযোগ্য অর্ধশতরান-

বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক রজত পাটিদারও চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আগ্ৰসী ব্যাটিং শুরু করেন। ফলে বেশ কয়েকবার ক্যাচ আউটের সুযোগ দিয়ে ফেলেছিলেন প্রতিপক্ষদের। পাটিদারের সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি দিপক হুডা। তবে এই সবকিছু ভুলে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময় আরসিবি অধিনায়ক ৩২ বলে ৫১ রান করেন। তার ব্যাটিং ইনিংস থেকে আসে ৩ টি ছয় ও ৪ টি চার। এরপর ১৮.১ ওভারে পাথিরানার করা বলে স্যাম কুরানকে ক্যাচ পাটিদার ফিরে যান।
৩) বল হাতে সফল নূর আহমেদ-
চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে প্রথম ম্যাচে ঘরের মাঠে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ৪ টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন নূর আহমেদ। আজকেও বল হাতে দলকে ভরসা দেন। ফিল সল্ট, বিরাট কোহলির মতো বড়ো উইকেট সংগ্রহ করার সঙ্গে সঙ্গে লিয়াম লিভিংস্টোনকের উইকেটও মাত্র ১০ রানে উড়িয়ে দেন এই আফগান তারকা। ফলে আজ চেন্নাইয়ের হয়ে ৪ ম্যাচে ৩৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট সংগ্রহ করেন তিনি। অন্যদিকে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ২ টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন মাথিশা পাথিরানা। খলিল আহমেদ এবং রবিচন্দ্রন আশ্বিন একটি করে উইকেট নিজেদের ঝুলিতে পুরেছেন।
৪) টিম ডেভিডের ঝড়ো ব্যাটিং-

নিচের দিকে ব্যাট করতে নেমে লিয়াম লিভিংস্টোন ১০ রানে এবং জিতেশ শর্মা ১২ রানে আউট হয়ে গেলে আরসিবি এক সময় চাপের মুখে পড়ে যায়। সেই সময় ৭ নম্বরে ব্যাট করতে এসে টিম ডেভিড ৮ বলে অপরাজিত ২২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। শেষ ওভারে স্যাম কুরানের বলে মারেন পরপর ৩ টি ছয়। এর ফলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু প্রথম ইনিংসে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান সংগ্রহ করে নেয়।
৫) ব্যাট হাতে ব্যর্থ রুতুরাজ থেকে শিবম দুবে-
দ্বিতীয় ইনিংসে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে রাচিন রবীন্দ্রর সঙ্গে রাহুল ত্রিপাঠী ওপেনিং করতে আসেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে বল হাতে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন জশ হ্যাজেলউড। তিনি মাত্র ৫ রানে রাহুলকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন। এরপর গুরুত্বপূর্ণ সময় অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড ব্যাটিং করতে আসেন। কিন্তু আজ চেন্নাইয়ের অধিনায়ক খাতা খুলতে পারেননি। হ্যাজেলউডের করা বলে পরিবর্ত হিসাবে আসা মনোজ ভান্ডাগের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রান করে ভক্তদের হাতাশ করেন। এরপর দিপক হুডাকে মাত্র ৪ রানে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন অভিজ্ঞ পেসার ভুবনেশ্বর কুমার। হুডার ব্যাট ছুঁয়ে বল পোঁছে যায় উইকেটকিপার জিতেশ শর্মার দস্তানায়। অন্যদিকে শিবম দুবেও যশ দয়ালের বলে আত্মসমর্পণ করেন। তার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ১৯ রান।
৬) লড়াই চালাচ্ছিলেন রাচিন রবীন্দ্র-
দ্বিতীয় ইনিংসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বোলিং আক্রমণের সামনে মাত্র ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে চেন্নাই সুপার কিংস। তবে ওপেনিং করতে নেমে একদিকে থেকে ধরে রেখে রাচিন রবীন্দ্র স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই চালান। তার সংযত ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ৪১ রান রান। ১২.১ ওভারে যশ দয়াল এই তারকা ব্যাটসম্যানের উইকেট উড়িয়ে দিয়ে বেঙ্গালুরুর জয়ের রাস্তা খুলে দেন।
৭) হতাশ করলেন ধোনি-

চেন্নাই সুপার কিংসের যখন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পড়ে যাচ্ছে তখন ক্রিকেট ভক্তরা মনে করেছিলেন আজ হয়তো মহেন্দ্র সিং ধোনি উপর দিকে ব্যাট করতে এসে দলের হাল ধরবেন। কিন্তু রবিচন্দ্রন আশ্বিন ৮ বলে ১১ রানে আউট হয়ে যাওয়ার পর তিনি ৯ নম্বরে ব্যাট করতে আসেন। তখন ২২ বলে ৯৭ রান বাকি ছিল। ফলে অসম্ভব হলেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে জয়ের জন্য চেষ্টার দরকার ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কিন্তু ধোনি প্রথম দিকে ধীরে ব্যাটিং শুরু করেন। তারপর ১৬ বলে ৩ টি চার এবং ২ টি ছয় মেরে তিনি ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। আজকের ম্যাচে অভিজ্ঞ রবীন্দ্র জাদেজাও ব্যাট হাতে দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। ১৯ বলে ২৫ রান করে মাঠ ছাড়েন তিনি।
৮) বল হাতে আরসিবির চমক-

প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করার পর বল হাতেও জশ হ্যাজেলউড থেকে যশ দয়াল, লিয়াম লিভিংস্টোন বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন। হ্যাজেলউড ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট সংগ্রহ করেন। যশ দয়াল ৩ ওভারে ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ২ টি উইকেট। অন্যদিকে লিভিংস্টোন ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ২ টি উইকেট শিকার করেছেন। এর ফলে চেপকের মাটিতে চেন্নাই সুপার কিংস ৫০ রানে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় আরসিবি।