ভারতীয় দলে এই খেলোয়াড়ের ভবিষ্যৎ সম্ভবত শেষ, কোচের কথাতেই পরিষ্কার 1

নানান বিতর্কের পর ক্রিকেট অ্য়াডভাইজরি কমিটি রবি শাস্ত্রীকে বিরাটদের গুরুদ্রোণ হিসেবে নিয়োগ করার পরই হেড কোচ বলেছিলেন, দায়িত্ব নিয়েই তিনি আগামী বিশ্বকাপের জন্য় কাজ শুরু করে দেবেন। তাঁর সেই ইঙ্গিত মতো শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেই ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম সারির দুই স্পিন বোলারকে ছাড়াই ডাম্বুলায় প্রথম ম্য়াচে দাপটে ম্য়াচ জিতেছে ভারত। রান তাড়া করে ৯ উইকেটে ম্য়াচ জিতলেও বোলারদের কৃতিত্বকে কোনওরকমভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। ২১৬ রানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজকালকার দিনে বিপক্ষ দলকে বেঁধে রাখা মুখের কথা নয়। বিপক্ষ দলের দশটির মধ্য়ে ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চের স্পিন বোলাররা সাত উইকেট তুলে নেন। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে প্রধান নির্বাচক কড়া কথা শোনানোর পর তিনি কতটা ফর্মে ফিরেছেন, তা ডাম্বুলাতে দেখার সুযোগ না হলেও, অধিনায়ক বিরাট কোহলি জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯ বিশ্বকাপে তাঁর পরিকল্পনায় মাহি রয়েছেন। আর এখন থেকে দলের তরুণ ক্রিকেটারদেরও পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হবে নিজেদের গুরুত্ব প্রমাণ করার জন্য়।
এ পর্যন্ত তো সবই ঠিক আছে। কিন্তু, বিরাট কোহলি সবাইকে দেখে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বললেও শ্রীলঙ্কায় সীমিত ওভারের ক্রিকেট সিরিজে দলের দুই প্রধান স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজাকে বাইরে রাখা হয়েছে। নির্বাচকরা বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে বললেও, প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির মতো বিগত দিনের বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার ‘বিশ্রাম’ শব্দটিকে শুধুমাত্র অজুহাত হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের যুক্তিও উড়িয়ে দেওয়ার নয়। বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে, অথচ সেই ক্রিকেটারদের আবার ইংল্য়ান্ডে কাউন্টি খেলতে যেতে অনুমতি দিচ্ছে বোর্ড। তার চেয়ে বড় কথা, দল ঘোষণা করার আগে থেকেই এই খবরটা শোনা যাচ্ছিন। অতএব, যারা কাউন্টি খেলতে ছুটছেন, তাঁরা আগে থেকেই জানতেন যে তাঁদের দলের বাইরে করে দেওয়া হবে। আর যেহেতু পরবর্তী বিশ্বকাপ ইংল্য়ান্ডে, তাই ওখানে গিয়ে আগেভাগে মানিয়ে নিতে পারলে আগামী বছর ভারত যখন ইংল্য়ান্ডে টেস্ট সিরিজ খেলতে যাবে, সেই সময় তাঁদের সামনে একটা সুযোগ চলে আসবে ভালো পারফর্ম করে নির্বাচকদের প্রভাবিত করার।
অক্ষর প্য়াটেল, কূলদীপ যাদবদের মতো স্পিনাররা দলে এসে যাওয়ায় অশ্বিন এখন খুব চাপে। ওদিকে, ইংল্য়ান্ড ও ওয়েলসে বিশ্বকাপ হওয়া মানে সিম বোলাররা সুবিধা পাবেন। আর তার মানে প্রথম একাদশে একটা স্পিনার রেখে পেস বোলার বাড়াতে হবে। তবে, ২০১৩ ও ২০১৭ চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফির কথা মাথায় রাখলে, ইংল্য়ান্ড কিন্তু ইদানিং ব্য়াটিং সহায়ক উইকেটও উপহার দিচ্ছে। আর ওই ধরনের পিচে স্পিন বোলারদেরই দরকার। আর এই কারণেই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয় দলে অশ্বিনের ভবিষ্য়ত নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। জাদেজা ব্য়াটিং অলরাউন্ডার হয়ে শেষ মুহুর্তে দলে যদিও জায়গা করে নেন, অশ্বিন সেদিক থেকে মোটেই স্ট্রং নন। তিনি বড়জোর কাজ চালিয়ে দেওয়া ব্য়াটসম্য়ান। মূলত বোলার হিসেবেই তাঁকে দলে নেওয়া হয়। আর সেই কাজটা টেস্টের আসরে ঠিকমতো করতে পারলেও গত দেড়-দু’বছরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে করে দেখাতে পারছেন না তামিলনাড়ুর বোলারটি। তার ওপরে অক্ষর প্য়াটেল ও কূলদীপের মতো বোলাররা যদি ধারাবাহিকভাবে সুযোগটাকে কাজে লাগান, তাহলে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে অশ্বিনের দিকে আর তাকাতে হবে না ভারতীয় টিম ম্য়ানেজমেন্টকে। কারণ, ব্য়াটসম্য়ান হিসেবেও অক্ষর আর কূলদীপ অনেক গুন এগিয়ে।
অশ্বিন প্রসঙ্গে রবি শাস্ত্রী কোনও কথা না বললেও, তাঁর সহকারী ভারতীয় দলের বোলিং কোচ ভরত অরুণ তাঁর মন্তব্য় রেখেছেন। আইসিসি চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টিম ম্য়ানেজমেন্ট অশ্বিনকে সবকটি ম্য়াচে অটোমেটিক চয়েস হিসেব না দেখলেও, এখনই তাঁকে খরচের খাতায় ফেলে দিতে নারাজ ভারতের বোলিং কোচ। অরুণ জানান, ”সত্য়ি কথা বলতে, অশ্বিনকে ইদানিং কেন সবকটি ম্য়াচে খেলানো হচ্ছে না, তার যুৎসই উত্তর নির্বাচকরাই দিতে পারবেন। বোলিং কোচ হিসেবে আমার মত, অশ্বিন প্রতিভাবান বোলার। উদাহরণ হিসেবে ওর শেষ খেলা একদিনের আন্তর্জাতিক ম্য়াচের পারফরমেন্সটাই দেখুন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় ওয়ান-ডে ম্য়াচে ২৫ রানে তিন উইকেট নিয়েছিল। প্রতিভা নেই কি আছে – উত্তরটা আপনাদের সামনে। এবার প্রথম একাদশে ওকে পরপর ম্য়াচে কেনো খেলানো হচ্ছে না – তার উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া মুশকিল। আমি শুধু বলতে পারি, ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ব্য়াটসম্য়ানদের মতো সব বোলারদেরও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পরখ করা হচ্ছে আর হবে। আর সেই তালিকায় অশ্বিনের নামও রয়েছে।”

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *