নাইট রাইডার্সের মেন্টর হিসেবে নজর কেড়েছিলেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। মগজাস্ত্রের ধারে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লীগে ঝড় তুলেছিলেন বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তনী। রাহুল দ্রাবিড় সরে দাঁড়ানোর পর তাই গম্ভীরকেই ভারতীয় দলের দায়িত্বে চেয়েছিলেন সমর্থকেরা। সোশ্যাল মিডিয়া ভরেছিলো তাঁর সমর্থনে। প্রশিক্ষক হিসেবে নিজের কেরিয়ারে বড়সড় লাফ দিতে প্রস্তুত ছিলেন গম্ভীর স্বয়ং। তাই নাইট রাইডার্স মালিক শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) ব্ল্যাঙ্ক চেকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। ৯ জুলাই সরকারী ভাবে ঘোষণা করা হয় তাঁর নাম। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে ‘গুরু’ গম্ভীর (Gautam Gambhir) জমানার শুরুটা হয়েছিলো জয় দিয়েই। উচ্ছ্বাসের ঝড় বয়ে গিয়েছিলো ক্রিকেটমহলে। কিন্তু চার মাস কাটতে না কাটতেই বদলেছে পরিস্থিতি। নতুন কোচের স্ট্র্যাটেজি, দল নির্বাচন, মানসিকতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
Read More: সঙ্কটে গৌতম গম্ভীরের ভবিষ্যৎ, হেড কোচের পদ থেকে ছাটাইয়ের পথে বিসিসিআই !!
গম্ভীর জমানায় বহু রেকর্ড খুইয়েছে ভারত-
শ্রীলঙ্কাকে পাল্লেকেলের মাঠে হোয়াইটওয়াশ করে যাত্রা শুরু করেছিলো গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) ভারতীয় দল। কিন্তু টি-২০’র সাফল্যের প্রতিফলন দেখা যায় নি ওয়ান ডে ক্রিকেটের পারফর্ম্যান্সে। কলম্বোতে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে প্রথম ওডিআই ম্যাচে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও বেনজির ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে টাই করে দল। এরপরের দুই ম্যাচে স্পিনারদের বিরুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়ে হারেন কোহলি-রোহিত’রা (Rohit Sharma)। ১৯৯৭ সালের শক্তিশালী শ্রীলঙ্কা দলের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক ওডিআই সিরিজে হারের পর প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে ২৭ বছর পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে কোনো সিরিজেই পরাজিত হয় নি ভারত। গম্ভীর (Gautam Gambhir) জমানার শুরুতেই হাতছাড়া হয় দ্বীপরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একাধিপত্যের সেই গৌরবময় নজির। খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া লঙ্কানরা নতুন অক্সিজেন পায় ভারতকে হারিয়ে।
ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাফল্যের পর ফের নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে (IND vs NZ) টেস্টে হতাশা সঙ্গী হলো তাদের। চিন্নাস্বামীর বৃষ্টিভেজা মাঠে প্রথম ব্যাটিং-এর চ্যালেঞ্জ নিয়ে ডুবেছিলেন রোহিত শর্মা’রা (Rohit Sharma)। ৮ উইকেটে পরাজয়ের সম্মুখীন হয় ‘মেন ইন ব্লু।’ ৩৬ বছর পর দেশের মাঠে প্রথমবার টেস্ট হারে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ৪৬ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গিয়ে বড়সড় লজ্জার মুখে পড়তে হয় দল’কে। ভারতের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানের ইনিংস এটি। বিপর্যয় থামে নি সেখানেই। পুণেতে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচেও হারতে হয়েছে ১১৩ রানের ব্যবধানে। টানা ১২ বছর ঘরের মাঠে কোনো টেস্ট সিরিজ হারে নি দল। গম্ভীর (Gautam Gambhir) জমানার শুরুতেই হাতছাড়া সেই রেকর্ড’ও। সাথে জুটেছে টানা দুই হোম টেস্টে প্রতিপক্ষকে ১০০’র বেশী রানের লিড নিতে দেওয়ার বাড়তি লজ্জা।
আগামীর কথা ভেবে শঙ্কিত সমর্থকেরা-
কথায় বলে ‘মর্ণিং শোজ দ্য ডে’, অর্থাৎ সকালটা দেখে বলে দেওয়া যায় যে গোটা দিনটা কেমন যাবে। ভারতীয় ক্রিকেটে গম্ভীর (Gautam Gambhir) যুগের শুরুতেই যে চরম উথালপাথাল চলছে তাতে আগামীতে কি অপেক্ষা করে রয়েছে তা ভাবতে গিয়ে রীতিমত শঙ্কিত সমর্থকেরা। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৭-এর ডিসেম্বর মাস অবধি দীর্ঘকালীন চুক্তি করা হয়েছে তাঁর সাথে। এই সময়কালের মধ্যে দুটি টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনাল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, এশিয়া কাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ ও ওডিআই বিশ্বকাপ’ও রয়েছে। সেই বড় টুর্নামেন্টগুলিতে জাতীয় দলের হটসিটে বসার জন্য আদৌ গম্ভীর যোগ্য কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। আগামী মাসে শুরু হচ্ছে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে টেস্টে যদি মুখ থুবড়ে পড়ে ভারত, তাহলে নিঃসন্দেহে গম্ভীরকে (Gautam Gambhir) নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে বিসিসিআই-কে।