IND vs WI: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ২০৯ রানের ব্যবধানে হারের পর এক নয়া রাস্তায় হাঁটার প্রচেষ্টায় ভারতীয় দল। ধীরে ধীরে সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে BCCI। বদলে নতুনদের জন্য জায়গা করে দিচ্ছেন নির্বাচকেরা। আগামী মাসে ক্যারিবিয়ান সফরে যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে ভারত। গত শুক্রবার টেস্ট ও একদিনের সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করা হয়েছে ভারতীয় বোর্ডের তরফ থেকে। তাতেও নবীনকে বরণ ও পুরাতনকে সরিয়ে দেওয়ার নীতিই প্রতিফলিত হয়েছে। টেস্ট দলে জায়গা হয় নি বহু যুদ্ধের ঘোড়া চেতেশ্বর পূজারার (Cheteshwar Pujara), জায়গা হারিয়েছেন উমেশ যাদবও (Umesh Yadav)। বদলে দলে এসেছেন যশস্বী জয়সওয়াল, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়রা (Ruturaj Gaikwad)। বোলারদের মধ্যে শিকে ছিঁড়েছে মুকেশ কুমারের ভাগ্যে।
একদিনের ক্রিকেটেও রদবদলের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এক বছর পর সুযোগ পেয়েছেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। প্রথমবার একদিনের ক্রিকেটের জন্য ডাকা হয়েছে যশস্বী জয়সওয়ালকেও (Yashasvi Jaiswal)। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি (Virat Kohli), হার্দিক পান্ডিয়াদের মত সিনিয়র ক্রিকেটাররা থাকলেও জায়গা হয় নি শিখর ধাওয়ানের। কে এল রাহুল, ঋষভ পন্থ চোটের জন্য না থাকায় ঈশান কিষণের সাথে উইকেটরক্ষক হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন কেরলের সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson)। নতুনদের বেছে নেওয়ার এই নীতিকে অনেকে স্বাগত জানালেও প্রশ্নও তুলেছেন অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। বিশেষ করে রঞ্জি, ইরানী, দলীপ ট্রফির মত ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় নিয়মিত রান করার পরও সরফরাজ খান (Sarfaraz Khan), অভিমণ্যু ঈশ্বরণদের (Abhimanyu Easwaran) জাতীয় দলে জায়গা না পাওয়া নিয়ে রীতিমত বিস্মিত অনেকে। এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের গুরুত্ব কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ভেঙ্কটেশ প্রসাদ (Venkatesh Prasad)। এবার সেই একই প্রশ্ন আবার তুলে দিলেন ‘টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ওপেনার অভিনব মুকুন্দ (Abhinav Mukund)।
Read More: ধোনি ও রোহিতের অধিনায়কত্বের তফাৎ তুলে ধরলেন অশ্বিন, আরও স্পষ্ট ভারতীয় দলের বিভাজনের ছবি !!
দল নির্বাচনের ভিত্তি কি? প্রশ্ন অভিনব’র-
ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের পাহাড় গড়েছেন সরফরাজ খান। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল অবধি ১০০’র নীচে নামে নি তাঁর ব্যাটিং গড়। ২০২০-২১ মরসুমে করেছিলেন ৯২৮ রান। ২০২১-২২ মরসুমে করেছিলেন ৯৮২ রান। গত মরসুমেও ৯২.৬৬ গড়ে ৫৫৬ রান করেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারে ৩৭ ম্যাচে ৩৫০৫ রান করেছেন সরফরাজ (Sarfaraz Khan)। তাঁর ব্যাটিং গড় ৭৯.৬৫। যা বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। একের পর এক টেস্ট সিরিজে তাঁকে বাতিলের খাতায় রাখছেন নির্বাচকেরা। একই কথা বলা যায় অভিমণ্যু ঈশ্বরণ (Abhimanyu Easwaran) সম্পর্কেও। বাংলার ওপেনার ৮৭ ম্যাচে ৬৫৫৬ রান করেছেন। ভারতীয়-এ দলের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন। শতরানও করেছেন নিয়মিত। তবুও উইন্ডিজ সফরের জন্য ঘোষিত দলে জায়গা হয় নি দুজনেরই। বরং স্থান পেয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল এবং ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। মূলত আইপিএলের পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতেই টেস্ট দলে নেওয়া হয়েছে তাঁদের। এহেন নির্বাচনের অর্থ কি? প্রশ্ন তুলেছেন মুকুন্দ (Abhinav Mukund)।
নিজের ট্যুইটার প্রোফাইলে অভিনব মুকুন্দ (Abhinav Mukund) লেখেন, “এই নির্বাচনগুলো দেখে কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। অনেক ভাবনা মাথায় আসছে-যা একটি ট্যুইটে সম্পূর্ণ লেখা যাবে না। কিন্তু একজন তরুণ ক্রিকেটারের নিজের রাজ্যের হয়ে খেলার পুরষ্কার কি এখন? ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার সিঁড়ি চড়ার ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটই এখন যে দ্রুততর রাস্তা, তা তো পরিষ্কার।” জাতীয় নির্বাচকদের পাশাপাশি আইপিএলের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি।
দেখে নিন অভিনব মুকুন্দের সেই ট্যুইট’টি-
Unable to understand these selections- too many thoughts in my head to compile into a tweet. But what is the incentive for a young player to take pride in playing for his state anymore? Clearly the franchise route is a faster way to scale the grade. #INDvsWI
— Abhinav Mukund (@mukundabhinav) June 23, 2023
প্রাক্তনীদের রোষের মুখে BCCI-
দিন কয়েক আগে ভারতীয় নির্বাচকদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন প্রাক্তন পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ (Venkatesh Prasad)। রঞ্জি ট্রফির এলিট গ্রুপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েও দলীপ ট্রফিতে দক্ষিণাঞ্চল দলে জায়গা হয় নি জলজ সাক্সেনার। কেরলের স্পিনারের পাশে দাঁড়িয়ে প্রসাদ ট্যুইট করেছিলেন, “ভারতীয় ক্রিকেটে এখন অনেক হাস্যকর কাণ্ড ঘটছে। রঞ্জি ট্রফির সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীকে দক্ষিণাঞ্চল দলে জায়গা না দেওয়াটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এতে রঞ্জি ট্রফি অর্থহীন মনে হয়। কি লজ্জার কথা !” নির্বাচকদের একহাত নিতে দেখা গিয়েছে কিংবদন্তি দিলীপ বেঙ্কসরকারকেও (Dilip Vengsarkar)। নির্বাচকদের ক্রিকেটবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ভারতীয় দল থেকে পূজারার বাদ পড়ার পর সুর চড়িয়েছেন সুনীল গাওস্করও (Sunil Gavaskar)। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে গোটা ব্যাটিং বিভাগ ব্যর্থ হলেও ছাঁটাইয়ের খাঁড়া নেমে এসেছে কেবল পূজারার (Cheteshwar Pujara) উপর। এর প্রতিবাদ করে তিনি বলেছেন, “আমাদের হতশ্রী ব্যাটিং-এর জন্য বলির পাঁঠা করা কেবল পূজারাকে কেনো করা হচ্ছে? ওর সোশ্যাল মিডিয়াতে লাখ-লাখ ফলোয়ার নেই বলে? যাঁরা ও বাদ পড়লে সরব হয়ে উঠতে পারতেন? ও ভারতীয় ক্রিকেটের একজন অনুগত সেবক হিসেবে দীর্ঘসময় কাটিয়েছে। আমার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর নেই, কারণ আজকাল নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন না।”