IND vs PAK: ভারত বনাম পাকিস্তান, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে, যে কোনো খেলার ময়দানে যখনই দুই পড়শি দেশ মুখোমুখি হয়, তখন আলাদা আবেগ কাজ করে তা নিয়ে। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল অথবা হকি-ভারত বনাম পাকিস্তান মানেই দুই দেশের খেলোয়াড়রাই থাকেন উদ্বুদ্ধ। নিজের সবটা উজাড় করে দেশের গলায় জয়মাল্য পরানোই থাকে লক্ষ্য। গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন মাঠে ক্রিকেটের ময়দানে দুই দল যখন মুখোমুখি হয়েছিলো, মাঠের আবহ ছাপিয়ে গিয়েছিলো সব প্রত্যাশা। ৯০০০০-এর বেশী দর্শক হাজির ছিলেন গ্যলারিতে। রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে জয় ছিনিয়ে নেয়্ ভারত। বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ব্যাটে জয়ের কাহিনী লেখে ‘মেন ইন ব্লু।’ এখনও অবধি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে কোহলির শতরানের সংখ্যা ৭৫। কেরিয়ারে বহু ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু নিজেই সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন মেলবোর্নে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ৮২* রান করে যে অনুভূতি কাজ করেছিলো, তা অন্য কোনও ম্যাচে অনুভব করেন নি।
ক্রিকেটের বাইশ গজ ছেড়ে যদি তাকানো যায় ফুটবলের দিকে তাহলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সেই একই ছবি ফুটে ওঠে। ক্রিকেটে ভারত ও পাকিস্তান-দুই দেশই জিতেছে বিশ্বকাপ, দুই দেশই বৃহৎ শক্তি। কিন্তু ফুটবল বিশ্বের দৈত্যদের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশকে বিশাল শক্তিশালী কখনই বলা যায় না। তবুও যখন একে অন্যের মুখোমুখি হয় দুই দেশ, তখন ফুটবল স্কিল নয়, পরীক্ষা হয় মানসিকতার। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের। দিনকয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে সেই কথাই বলছিলেন ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)। বলেন, “মাঠের বাইরে যখন ওদের (পাকিস্তান) খেলোয়াড়দের সাথে দেখা হয়, আমরা একে অন্যের সাথে হেসে কথা বলি। ওরাও পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলে, আমরাও পাঞ্জাবি ভাষাতেই উত্তর দিই। কিন্তু যে মুহূর্তে মাঠে পা পড়ে আমাদের মানসিকতাটাই বদলে যায়। আমি নিশ্চিত ওদেরও এমনটাই হয়। মনে হয় যে আর যার বিরুদ্ধে হারি না কেনো, ওদের বিরুদ্ধে নয়। জেতার জন্য সর্বস্ব দিতে মন চায়।” সাক্ষাৎকারে যে মরণপণ প্রয়াসের কথা বলেছিলেন সুনীল (Sunil Chhetri), তা গতকাল তিনি মাঠেও করে দেখালেন। দুর্দান্ত হ্যাট্রিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে জেতালেন ৪-০ ফলে।
Read More: IND vs WI: উইন্ডিজ সফরে নয়া ওপেনিং জুটি পাচ্ছে ভারতীয় দল, দৌড়ে রয়েছেন চার তরুণ ক্রিকেটার !!
কান্তিরাভায় সুনীল সাগরে ডুবলো পাকিস্তান-
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গতকাল বেঙ্গালুরু কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত ও পাকিস্তান। বর্তমান ফিফা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ভারতের অবস্থান ১০১। আর পাকিস্তান রয়েছে আরও পিছনে। ক্রমতালিকায় তাদের স্থান ১৯৫। তবে এই ম্যাচে ফিফা র্যাঙ্কিং-এর বিশেষ গুরুত্ব নেই বলে আগেই জানিয়েছিলেন ভারতের ক্রোয়েশীয় কোচ ইগর স্টিম্যাচ (Igor Stimac)। খেলাতেও বারবার তার প্রমাণ পাওয়া গেলো। ম্যাচ শুরুর পর কিছুক্ষণ একে অন্যকে বুঝে নেওয়ার প্রচেষ্টায় ছিলো দুই দলই। পাকিস্তানের একটা ভুল এই সময় ভারতকে ম্যাচে এগিয়ে দেয়। পাক গোলকিপার বল তুলে দেন ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) পায়ে। বহু যুদ্ধের ঘোড়া সুনীল বল অরক্ষিত জালে ঠেলে দিতে কোনোরকম ভুল করেন নি।
এক গোলে এগোনোর পরেই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় ভারত। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদায় করে নেয় পেনাল্টি। নিখুঁত প্লেসিং-এ বল জালে ঠেলে ১৬ মিনিটের মধ্যে ‘ব্লু টাইগার্স’দের ২-০ এগিয়ে দেন সুনীল (Sunil Chhetri)।স্কিলের পাশপাশি এই ম্যাচ যে স্নায়ুরও যুদ্ধ তা দেখা গেলো প্রথমার্ধের শেষ দিকে। থ্রো ইন পেয়েছিলো পাকিস্তান দল। তাদের ওপর চাপ বাড়াতে বল হাতে তুলে নেন ভারতের কোচ স্টিম্যাচ (Igor Stimac)। মুহূর্তে তাঁর ওপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েন পাক খেলোয়াড়েরা। প্রতিরোধ করতে দেখা যায় ভারতীয় খেলোয়াড়দেরও। দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেই বচসা শেষ অবধি হাতাহাতির পর্যায়ে গড়ানোর উপক্রম হয়েছিলো। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে লাল কার্ড দেখতে হয় স্টিম্যাচকে। আগামী ম্যাচে তাঁকে ভারতীয় ডাগ-আউটে দেখা যাবে না।
২-০ পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান তেড়েফুঁড়ে দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু করেছিলো। কিন্তু সন্দেশ ঝিঙ্গন (Sandesh Jhingan), শুভাশিষ বোসদের (Subhasish Bose) নিয়ে গড়া ভারতীয় রক্ষণবিভাগকে টলাতে পারেন নি তারা। এগিয়ে থেকেও গোলের অন্বেষণ থামায় নি ভারতীয় দল। ম্যাচের বয়স যখন ৭২ মিনিট, ভারত দ্বিতীয় পেনাল্টি পায়। গোল করতে কোনো ভুল করেন নি সুনীল (Sunil Chhetri)। ভারত অধিনায়কের হ্যাট্রিকে ৩-০ এগিয়ে থাকা ভারতের জয় তখন কেবল সময়ের অপেক্ষা ছিলো। ৮১ মিনিটে উদান্তা সিং-এর (Udanata Singh Kumam) চতুর্থ গোল পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয়। ৪-০ জিতে ভারতীয় দল নয়া রেকর্ড গড়লো গতকাল। ইতিহাসে প্রথমবার টানা ৭ ম্যাচে একটিও গোল খেলো না তারা।
রোনাল্ডো-মেসির পরেই সুনীল ছেত্রী-
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) এবং লিওনেল মেসি-ফুটবলের দুনিয়ায় দুই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। পর্তুগালের রোনাল্ডো কেরিয়ারে জিতেছেন ৩৪টি ট্রফি। দেশকে ইউরো কাপ, উয়েফা নেশনস লীগ জিতিয়েছে। পাঁচ বার জিতেছেন বর্ষসেরা ফুটবলারের ব্যালন ডি ওর। অন্যদিকে আর্জেন্তিনার মেসির (Lionel Messi) সাফল্যও আকাশছোঁয়া। তাঁর সংগ্রহে ট্রফির সংখ্যা ৪৩। তিনি ব্যালন ডি ওর জিতেছেন ৭ বার। দেশের জার্সিতে জিতেছেন কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা। গত বছরের ডিসেম্বরেই ফ্রান্সকে হারিয়ে হাতে তুলেছেন বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটি। ফুটবল জগতে শ্রেষ্ঠত্বের নিরিখে এই দুজনের আশেপাশে গত কুড়ি বা পঁচিশ বছরে কেউ যে আসেন নি সেই বিষয়ে একমত হবেন সকলেই। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিরিখে এই দুই অতিমানবের ঠিক পরেই অর্থাৎ তৃতীয় স্থানে অবস্থান ভারত অধিনায়ক সুনীলের (Sunil Chhetri)।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোল রয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর (Cristiano Ronaldo)। নিজের ২০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২৩তম গোলটি করলেন তিনি। যাঁরা এখনও ফুটবল খেলছেন, তাঁদের মধ্যে দুই নম্বরে অবস্থান লিওনেল মেসির (Lionel Messi)। দেশের জার্সিতে ১৭৫ ম্যাচে তাঁর গোলের সংখ্যা ১০৩। আর এই দুজনের পরেই রয়েছেন সুনীল (Sunil Chhetri)। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হ্যাট্রিকের পর ১৩৮ ম্যাচে ভারতের জার্সিতে তাঁর গোলের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯০।