Asia Cup 2023: প্রচুর টালবাহানার পর অবশেষে সবুজ সংকেত পাওয়া গিয়েছে ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) নিয়ে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই বছর এশিয়া কাপ আয়োজন করার কথা ছিলো পাকিস্তানের। কিন্তু গত অক্টোবরেই ভারতীয় বোর্ড সচিব জয় শাহ (Jay Shah) জানিয়ে দিয়েছিলেন যে পাকিস্তান যেতে রাজী নয় টিম ইন্ডিয়া। নিরপেক্ষ কোনো ভেন্যুতে এশিয়া কাপ চেয়ে এসিসি’তে তদ্বির করেছিলো ভারত।
পালটা দিয়েছিলো পাকিস্তানও। কোনোভাবেই আয়োজনের স্বত্ব ছাড়তে রাজী ছিলো না তারা। পাক বোর্ডের চেয়ারম্যান রামিজ রাজা (Ramiz Raja) ভারতে আয়োজিত হতে চলা বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি অবধি দেন। এমনকি রামিজের পরে পিসিবি চেয়ারম্যান পদে বসে একই কথা বলেন নাজম শেঠিও (Najam Sethi)। এই হুমকির পরেও অবশ্য বদুলায় নি ভারতের অবস্থান। ওয়াঘা সীমান্তের পশ্চিম দিকে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তে কোনো বদল আনেন নি জয় শাহ, রজার বিনিরা।
জট কাটানোর উদ্দেশ্যে বাহরিনে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (ACC) সদস্য দেশগুলি। প্রাথমিক ভাবে এই বৈঠকেও কোনো সমাধানসূত্র উঠে আসে নি। এরপর এক হাইব্রিড মডেল পেশ করা হয় পিসিবির তরফে। এই মডেল অনুসারে ভারতের ম্যাচ আয়োজনের স্বত্ব ছেড়ে দেয় পিসিবি। তবে অন্যান্য দেশগুলির ম্যাচ পাকিস্তানেই আয়োজন করতে চেয়েছিলো পিসিবি। এই হাইব্রিড মডেলকে ঘষেমেজে অবশেষে সূচী প্রস্তুত করার পথে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (ACC)।
চারটি ম্যাচ হবে পাকিস্তানে, বাকি নয়টি আয়োজন করবে শ্রীলঙ্কা। ৩১ অগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর অবধি হবে প্রতিযোগিতা। ভারত বনাম পাকিস্তান যে কূটনৈতিক যুদ্ধে এই এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) নিয়ে চলেছে তা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই নিয়ে উত্তেজনার আবহ বাড়িয়েছে অনেক গুণ। এখনও গোটা টুর্নামেন্টের ক্রীড়াসূচী প্রকাশিত না হলেও ভারত-পাক ম্যাচ যে ডাম্বুলার মাঠে হবে তা জানা গিয়েছে। ভেন্যু সামনে আসতেই চিন্তার ভাঁজ ভারতের কপালে। পূর্ব পরিসংখ্যান স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না বিরাট কোহলিদের (Virat Kohli)।
Read More: World Cup 2023: জৌলুস হারিয়েছে ভারত-পাক দ্বৈরথ, সৌরভ গাঙ্গুলীর নজর থাকবে এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার উপর !!
ডাম্বুলায় ভারতের রেকর্ড উল্লেখযোগ্য নয়-
এশিয়া কাপের (Asia Cup 2023) যে মডেল পেশ করা হয়েছে তাতে ভারত নিজেদের সবক’টি ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। তাদের গ্রুপে রয়েছে নেপাল এবং পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বে তাদের বিপক্ষে খেলবে টিম ইন্ডিয়া। এরপর সুপার ফোরের লড়াইতে মাঠে নামার কথা রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), বিরাট কোহলি (Virat Kohli), শুভমান গিলদের (Shubman Gill)। ভারত-পাক মেগা ম্যাচ ঘিরেই বাড়ছে আগ্রহ। একই গ্রুপে থাকায় ক্রিকেটের এল-ক্লাসিকো এবার নিশ্চিত এশিয়া কাপে। ২০২২ সালের এশিয়া কাপে দুই সাক্ষাতে ফলাফল ১-১। তবে শেষ চারে ভারতকে হারিয়েই ফাইনালে পৌঁছেছিলো পাকিস্তান। সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে মরিয়া থাকবে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ এখনও দিনক্ষণ জানা না গেলেও দ্বীপরাষ্ট্রের রাণগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামে (Rangiri Dambulla Stadium) যে ভারত বনাম পাক ম্যাচ আয়োজিত হতে চলেছে তা এক প্রকার নিশ্চিত।
ম্যাচের ভেন্যু সামনে আসার পরেই চিন্তা বেড়েছে ভারতীয় শিবিরে। এই মাঠে বারবার কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছে ভারতকে। ২০০৪ থেকে ডাম্বুলার মাঠে ১৭টি একদিনের ম্যাচ খেলেছে টিম ইন্ডিয়া। এর মধ্যে জিতেছে ১০টিতে। হারতে হয়েছে ৭টি ম্যাচ। বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মত দলকে বেশ কয়েকবার হারালেও কঠিন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিলো ভারতকে। ২০১০ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডের তোলা ২৮৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮৮ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিলো ভারত। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১২ সাক্ষাতেও ভারত এই মাঠে হেরেছে ৭ বার। কখনও সনৎ জয়সূর্যের (Sanath Jayasuriya) শতরান, আবার কখনও অজন্তা মেন্ডিসের (Ajantha Mendis) ঘূর্ণির নাগাল পায় নি ‘মেন ইন ব্লু।’
‘টিম ইন্ডিয়া’র চিন্তা বাড়িয়েছে এই মাঠে তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ফর্ম। ডাম্বুলায় ১০টি ম্যাচ খেলে মাত্র ১টি অর্ধশতক রয়েছে তাঁর নামের পাশে। পাকিস্তানের শাহীন (Shaheen Shah Afridi), নাসিম (Naseem Shah), হ্যারিস রউফদের (Haris Rauf) বিরুদ্ধে কোহলি ব্যর্থ চলে ভারত যে চাপে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। অধিনায়ক রোহিত শর্মাও (Rohit Sharma) ২০১৯ বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে বেশ স্তিমিত। তবে আশঙ্কার পাশাপাশি আশার আলোও রয়েছে ভারতীয় দলের জন্য। ডাম্বুলায় প্রতিপক্ষ পাকিস্তানেরও রেকর্ড বিশেষ সুবিধার নয়। গত দুই দশকে ১৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ৪ বার জিতেছে তারা। ভারতের বিরুদ্ধেই হেরেছে ২০১০-এর এশিয়া কাপে। এই পরিসংখ্যান মাঠে নামার আগে ভরসা যোগাবে টিম ইন্ডিয়াকে।
বিশ্বকাপের ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে সংশয়-
এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) জট কাটলেও বিশ্বকাপে ভারত বনাম পাকিস্তান (IND vs PAK) মহারণ আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। আইসিসি’র নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী ১৫ অক্টোবর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এই ম্যাচ আয়োজিত হওয়ার কথা। কিন্তু ভেন্যু নিয়ে খুশি নয় পাকিস্তান। আইসিসি’র কাছে আপত্তি জানিয়েছে তারা। ক্রিকেটারদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত পাক বোর্ড। খসড়া সূচী হাতে পাওয়ার পরেই মাঠ বদলের দাবী জানিয়েছিলো তারা। কিন্তু সেই আবেদন রাখে নি আইসিসি। চূড়ান্ত সূচী প্রকাশের পর তাই ক্ষুব্ধ পিসিবি। বাবর আজমদের (Babar Azam) ভারত সফরে পাঠানো হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত শাহবাজ শরিফের (Shahbaz Sharif) সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছে তারা।
শোনা যাচ্ছে বিশ্বকাপের ব্যাপারে অভিনব সিদ্ধান্ত নিতে পারে পাকিস্তানী সরকার। তাদের সুরক্ষা দল এসে ভারত ও বিশেষ করে আহমেদাবাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে পারে। ফিরে গিয়ে তারা সকল ব্যবস্থা সন্তোষজনক বলে রিপোর্ট দিলে তবেই ভারতের আসার ব্যাপারে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি দিতে পারে পাক বিদেশমন্ত্রক। গোটা বিষয়টি সম্পর্কে পাক বোর্ডের (PCB) এক সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা আইসিসিকে জানিয়ে দিয়েছি যে বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ করা বা নির্দিষ্ট কোনো মাঠে খেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। গোটা বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। তাই চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। একমাত্র সরকারী ছাড়পত্র পেলেই আমরা ভারতে যাবো।”