IND vs BAN: সিনিয়র এশিয়া কাপ নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানা চলেছে এই বছর। বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতির ফলে কূটনৈতিক লড়াই দেখা গিয়েছে উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের দুই বড় শক্তি ভারত ও পাকিস্তানের (IND vs PAK) মধ্যে। অনেক দড়ি টানাটানির পর অবশেষে মিলেছে সমাধানসূত্র। আগামী ৩০ অগস্ট থেকে শুরু হতে চলেছে এই প্রতিযোগিতা। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (ACC) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পাকিস্তানের এশিয়া কাপ আয়োজনের কথা থাকলেও ভারতের আপত্তিতে হোস্ট দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কাও। পাক বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত এক হাইব্রিড মডেলে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে টুর্নামেন্ট।
সিনিয়রদের টুর্নামেন্ট এখনও এক মাস দূরে হলেও মহাদেশীয় সেরা হওয়ার যুদ্ধে বর্তমানে অবতীর্ণ হয়েছেন জুনিয়র ক্রিকেটাররা। উঠতি তারকাদের নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে এমার্জিং টিমস এশিয়া কাপ। প্রাক্তন অনূর্দ্ধ-১৯ অধিনায়ক যশ ধূলের (Yash Dhull) নেতৃত্বে এক তরুণ দল এই প্রতিযোগিতায় পাঠিয়েছে বিসিসিআই। এর আগে যশ ধূল, অভিষেক শর্মা, নিশান্ত সিন্ধু, সাই সুদর্শনরা (Sai Sudarshan) প্রতিটি ম্যাচেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা থাকা শাহনওয়াজ দাহানি, মহম্মদ হারিস সমৃদ্ধ পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলো ভারতের তরুণরা। আজ সেমিফাইনালে ফের একবার তারুণ্যের স্পর্ধা দেখালো টিম ইন্ডিয়া। অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ (IND vs BAN) দলকে হারিয়ে খেতাবী লড়াইতে জায়গা করে নিলো তারা।
Read More: WI vs IND: “আজকের প্রাপ্তি কোহলির শতরান…” উইন্ডিজের বিপক্ষে রানের পাহাড়ে ভারত, খুশি সমাজমাধ্যম !!
দক্ষতায় বাংলাদেশকে পিছনে ফেললো ভারত-
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের কারিগর ছিলো দুরন্ত ব্যাটিং। অনবদ্য শতরান করতে দেখা গিয়েছিলো সাই সুদর্শনকে (Sai Sudarshan)। আইপিএল এবং টিএনপিএল-এর ফর্ম এমার্জিং এশিয়া কাপের মঞ্চেও দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজ সেমিফাইনালে ভারতের জয়ে প্রধান ভূমিকা রাখলো বোলিং। একটা সময় ম্যাচ থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতে বসা ইন্ডিয়া-এ দলকে বাংলাদেশ-এ দলের বিপক্ষে ম্যাচে ফেরালেন বোলাররাই। টসে জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাইফ হাসান (Saif Hassan)। সাই সুদর্শন ২১ এবং অভিষেক শর্মা (Abhishek Sharma) ৩৪ রান করে আউট হন। নিকিন জোস (Nikin Jose) ফিরে যান ১৭ রান করে। ভারত-এ ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন অধিনায়ক যশ ধূল (Yash Shull)। আজ লড়াকু ৬৬ রান করেন তিনি। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার ফলে ২১১-র বেশী এগোয় নি ইন্ডিয়া-এ দলের ইনিংস।
২১২ রানের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমে ঝড়ের গতিতে একটা সময় জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ-এ। দুই ওপেনার মহম্মদ নাইম এবং তানজিদ হাসানকে রোখার উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না ভারতীয় বোলাররা। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে নাইম যখন আউট হন মানব সুতারের (Manav Suthar) বলে, বাংলাদেশের স্কোর তখন ৭০। তখনও কেউ ভাবতে পারেন নি ভারত এই ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়তে পারে। কিন্তু তারুণ্যের বলে বলীয়ান ইন্ডিয়া-এ আশা ছাড়ে নি এক মুহূর্তের জন্যও।
সাদা বল হাতে এর পরেই প্রতিপক্ষের ত্রাস হয়ে ওঠেন নিশান্ত সিন্ধু (Nishant Sindhu)। কিছুদিন আগে দলীপ ট্রফিতে শতরান করেছিলেন তিনি। চেন্নাই সুপার কিংসের এই তরুণ প্রতিভা আজ বল হাতে বাংলাদেশ-এ দলের পাঁচ উইকেট তুলে নেন। ৭০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৬৪ রানেই। হারের মুখ থেকে ৫১ রানের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে আনে ভারত-এ।
তরুণ ভারত হারালো অভিজ্ঞ বাংলাদেশকে-
এমার্জিং এশিয়া কাপে যে দল ভারত পাঠিয়েছে, তাতে প্রত্যাকেই নতুন মুখ। কারও সিনিয়র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। এমনকি সিনিয়র দলের স্কোয়াডেই কখনও জায়গা পান নি তাঁরা। অথচ অনভিজ্ঞ, আনকোরা তরুণরাই অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার মাটিতে। আগের দিন যে পাকিস্তানকে ভারত-এ দল হারিয়েছিলো, তাতে শাহনওয়াজ দাহানি (Shahnawaz Dahani), মহম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, মহম্মদ হারিসদের (Mohammad Haris) মত সিনিয়র এশিয়া কাপ,টি-২০ বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের বেশ কয়েকজন বড় নাম ছিলেন। আজ বাংলাদেশ-এ দলের চিত্রটাও অনেকটা একই রকম। খাতায় কলমে ‘এ’ দল হলেও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ ছিলো তারা।
সৌম্য সরকার (Soumya Sarkar), মাহমুদুল হাসান জয়, মেহদী হাসানদের (Mahedi Hasan) মত আন্তর্জাতিক স্তরে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে ফেলা ক্রিকেটারদের এমার্জিং এশিয়া কাপে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। সৌম্য একাই খেলেছেন ১৬ টেস্ট, ৬১ একদিনের ম্যাচ এবং ৭২ টি-২০। ৯টি টেস্ট খেলেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। মেহদী হাসান খেলেছেন ৩টি একদিনের ম্যাচ এবং ৩৮টি টি-২০। ওপেনার মহম্মদ নাইম খেলেছেন একটি টেস্ট, ৪টি একদিনের ম্যাচ এবং ৩৫টি টি-২০।
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেস্ট দলের হয়ে নিয়মিত ওপেনার হিসেবে দেখা গিয়েছে জাকির হাসানকেও (Zakir Hasan)। গত ডিসেম্বর মাসে ভারতের বিরুদ্ধেও টেস্ট খেলেছেন তিনি। ৬টি টেস্ট এবং ২ একদিনের ম্যাচের অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশ-এ দলের অধিনায়ক সাইফ হাসানেরও। অভিজ্ঞতার অভাব স্রেফ দক্ষতা দিয়ে পূরণ করে ফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করে নিলো ভারতের তরুণরা।