IND vs BAN: নিস্তরঙ্গ কানপুর টেস্টে প্রাণের সঞ্চার করেছে ভারতীয় ব্যাটিং। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট (IND vs BAN) ম্যাচের প্রথম দিন থেকেই বাধার পাহাড় খাড়া করেছিলো বৃষ্টি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন এক বল’ও খেলা এগোয় নি আবহাওয়াজনিত কারণে। শেষমেশ চতুর্থ দিন মাঠে ফিরতে পেরেছেন খেলোয়াড়’রা। ৩ উইকেটের বিনিময়ে ১০৭ রান ছিলো বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড। সেখান থেকে আজ দেড় সেশনের মধ্যেই গুটিয়ে যায় তারা। থামতে হয় ২৩৩ রানে। মোমিনুল হকের (Mominul Haque) শতরান ছাড়া উল্লেখযোগ্য ইনিংস নেই কারও ব্যাটে। সময় বেশী নেই হাতে। এই টেস্টে ফয়সালা পেতে গেলে যে সাহসী ক্রিকেট খেলতে হবে তা অনুধাবন করতে সমস্যা হয় নি টিম ইন্ডিয়া’র (Team India)। তাই ব্যাটিং-এ চোখে পড়লো ‘বাজবল’-এর ছায়া। তরুণ তুর্কি যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal) বিধ্বংসী ইনিংস খেলে গড়ে ফেললেন নয়া রেকর্ড।
Read More: IND vs BAN 2nd Test: ৬, ৬, ৬, ৪, ৪…কানপুরে রোহিত সুনামি, যশস্বীর সাথে জুটিতে গড়ে ফেললেন নয়া রেকর্ড !!
ধুন্ধুমার ইনিংস খেললেন যশস্বী জয়সওয়াল-
আগুনে ইনিংসের আভাস মিলেছিলো প্রথম ওভারেই। হাসান মাহমুদের (Hasan Mahmud) পরপর তিনটি ডেলিভারি বাউন্ডারির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal)। চেন্নাই টেস্টে নতুন বল হাতে ভারত’কে বেশ চাপের মুখে ফেলেছিলেন হাসান। আজ তাঁকে ছন্দ খুঁজে নেওয়ার সময়টুকুও দেন নি যশস্বী। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিটিতে মারেন ছক্কা। পরবর্তী দুটি বলে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। একটা সময় রোহিত-যশস্বী (Yashasvi Jaiswal) জুটির দাপটে তিন ওভারে ৪৫ রান খরচ করে বসেছিলেন টাইগারবাহিনীর তরুণ পেসার। মেহদী হাসান মিরাজের বলে রোহিত উইকেট হারানোর পরেও থামেন নি তাঁর ওপেনিং পার্টনার। চালিয়ে যান আক্রমণ। মিরাজ (Mehidy Hasan Miraz) ও তাইজুলের বলেও টানা দুটি করে চার মারেন তিনি।
চেন্নাইতে কঠিন পরিস্থিতিতে ৫৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন যশস্বী (Yashavi Jaiswal)। টেস্ট ক্রিকেটে স্বপ্নের ফর্ম যে অব্যাহত তার প্রমাণ মিললো কানপুরের গ্রিন পার্কেও। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফের পেরোলেন পঞ্চাশের গণ্ডী। যে গতিতে এগোচ্ছিলেন তাতে কেরিয়ারের চতুর্থ টেস্ট শতরানটিও আসছে বলেই ধরে নিয়েছিলেন অনুরাগীরা। কিন্তু মুহূর্তের ভুলে হারাতে হলো উইকেট। কানপুরের উইকেটে বাউন্স নেই তেমন। তা কাজে লাগিয়েই রোহিতের (Rohit Sharma) রক্ষণ ভেঙে উইকেট ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মেহদী। যশস্বীর (Yashasvi Jaiswal) ক্ষেত্রেও একই কাজ করতে দেখা গেলো পেসার হাসান মাহমুদকে (Hasan Mahmud)। গুড লেন্থে পিচ করা বল নীচু থেকে গিয়েছিলো। রুখতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তরুণ ওপেনার। ৫১ বলে ৭২ করে থামতে হলো তাঁকে।
তৈরি হলো একাধিক বিশ্বরেকর্ড-
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে (IND vs BAN) প্রথম টেস্টে জোড়া রেকর্ড গড়েছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল (Yashavi Jaiswal)। প্রথম ১০ টেস্ট ইনিংসে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের নিরিখে সুনীল তেন্ডুলকরকে পিছনে ফেলেছিলেন তিনি। ‘লিটল মাস্টার’-এর সংরহে ছিলো ৯৭৮ রান। আর যশস্বী করেন ১০৯৪ রান। ঘরের মাঠে প্রথম ১০ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করার নিরিখেও বিশ্বরেকর্ড গরেছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হেডলি’কে টপকে গিয়েছিলেন যশস্বী (Yashasvi Jaiswal)। আজ ঝোড়ো ইনিংস খেলার পর ফের রেকর্ডের চূড়ায় মুম্বইয়ের তরুণ বাঁ-হাতি। মাত্র ৩ ওভারের মধ্যে ৫০ রান তুলে ফেলে রোহিত-যশস্বীর ওপেনিং জুটি। টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম ৫০ রানের জুটি গড়লেন দুজনে। টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম দল হিসেবে ১০০’র গণ্ডী স্পর্শ করে ভারত’ও। মাত্র ১০.১ ওভারে এই মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলে ‘মেন ইন ব্লু।’
অন্যদিকে ৩১ বলে ব্যক্তিগত পঞ্চাশের গণ্ডী পেরিয়ে বীরেন্দ্র শেহবাগকে (Virender Sehwag) ছাপিয়ে গেলেন জয়সওয়াল। ভারতীয়দের মধ্যে তৃতীয় দ্রুততম টেস্ট অর্ধশতকের মালিক তিনি। শীর্ষে ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০২২-এ ২৮ বলে ৫০ করেছিলেন তিনি। দুইয়ে রয়েছেন কপিল দেব (Kapil Dev)। ১৯৮২ সালে করাচীর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন তিনি। তিন নম্বর জায়গাটি যশস্বীকে ভাগ করে নিতে হচ্ছে শার্দুল ঠাকুরের (Shardul Thakur) সঙ্গে। ২০২১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওভালে দেখা গিয়েছিলো শার্দুলের ব্যাঘ্রবিক্রম। চার নম্বরে থাকা শেহবাগ ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ের চেপকে পঞ্চাশ পেরিয়েছিলেন ৩২ বলে। ওপেনার হিসেবে দ্রুততম অর্ধশতকের মুকুট খোয়ালেন ‘নজফগরের নবাব।’ তা এখন আজাদ ময়দানের বিস্ময় প্রতিভার দখলে।