ক্রিকেট মাঠে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ১৯৯২ সালে তাঁর হাত ধরেই বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছিলো পাকিস্তান। কিন্তু জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়টা একইরকম সাফল্যমণ্ডিত হলো না ইমরান খানের (Imran Khan)। রাজনীতির ময়দানে উল্কার গতিতে উত্থান হয়েছিলো ইমরান ও তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফের। ঠিক সেই গতিতেই যেন মুখ থুবড়ে পড়েছেন তিনি। আগেই প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছিলেন তিনি। অন্তত ২০০টি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০২৩ সাল থেকেই জেল-হাজতে রয়েছেন ইমরান। এবার সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি হজম করতে হলো তাঁকে। আজ জমি দুর্নীতির দায়ে তাঁকে ১৪ বছরের হাজতবাসের সাজা শুনিয়েছে পাকিস্তানের একটি স্থানীয় অ্যান্টি-গ্রাফট আদালত। দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবিরও (Bushra Bibi)। তাঁকে সাত বছরের জেল হেফাজতের সাজা দিয়েছে আদালত।
Read More: রঞ্জি প্রত্যাবর্তন এড়াতে চোটের অজুহাত কোহলির ? ক্রিকেটদুনিয়ায় তুঙ্গে জল্পনা !!
জেলযাত্রার মেয়াদ বাড়লো ইমরান খানের-
আল-কাদির নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আড়ালে কোটি-কোটি টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগ রয়েছে ইমরান (Imran Khan) ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি (Bushra Bibi)। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একটি নির্মাণ সংস্থা’কে অনৈতিক ভাবে নাকি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিলেন ইমরান। পরিবর্তে সাত বিলিয়ন পাকিস্তানী রুপি মূল্যের জমি উপহার হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী বুশরাকে ‘উপহার’ দিয়েছিলো ঐ সংস্থা। ইমরান (Imran Khan) ও তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI) বরাবরই দাবী করে এসেছে যে এই জমি আদতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য দান হিসেবে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আদালত জানিয়েছে নিখাদ ‘উপহার’ নয়, বরং পদের অপব্যবহার করে ঐ নির্মাণসংস্থাকে যে সুবিধা করে দিয়েছিলেন ইমরান, তার প্রতিদান হিসেবেই দেওয়া হয়েছে এই জমি।
রাওয়ালপিন্ডি’র জেলের মধ্যেই অস্থায়ী আদালত কক্ষ তৈরি করে বিচারকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে দুর্নীতিদমন আদালতের বিচারক জাভেদ নাসির রাণা (Javed Nasir Rana) আজ সাজা ঘোষণা করেছেন। “অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় (ইমরান) খান’কে শাস্তি দেওয়া হয়েছে,” স্পষ্ট জানিয়েছেন বিচারক। শাস্তি ঘোষণার পর আদালত কক্ষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ইমরান (Imran Khan) বলেন, “আমি কোনো চুক্তি করবো না। শাস্তি কমানোর কোনো আবেদন’ও করবো না।” আগেও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছিলেন। গত বছরের জানুয়ারিতে দেশবিরোধী কার্যকলাপ ও দেশের গোপনীয় তথ্য পাচারের দায়ে ১০ বছরের জেল হেফাজত হয়েছিলো ইমরানের (Imran Khan)। আজকের শাস্তি তাঁর হাজতবাসের মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দিলো।
উত্তপ্ত হতে পারে পাকিস্তানের পরিস্থিতি-
এর আগেও ইমরান খানের (Imran Khan) মুক্তির দাবীতে উত্তপ্ত হয়েছে পাকিস্তানের পরিস্থিতি। আজ রাওয়ালপিন্ডিতে সাজা ঘোষণার পর ফের একবার তেহরিক-ই-ইনসাফ সমর্থকেরা শীর্ষ নেতার মুক্তির দাবীতে রাস্তায় নামতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাসখানেক আগে ইমরান সমর্থকদের আন্দোলনের উপর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ উঠেছিলো ক্ষমতাসীন শাহবাজ শরিফ সরকারের উপর। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কারণে সিরিজ মাঝপথে ছেড়ে দেশে ফিরেছিলো শ্রীলঙ্কা-এ দল। আগামী মাসে পাকিস্তানের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) আয়োজিত হওয়ার কথা রয়েছে। একসাথে লাহোর, করাচী ও রাওয়ালপিন্ডিতে ম্যাচ আয়োজিত হবে। সেই সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে ক্রিকেটারদের কতদূর নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব হবে তা নিয়ে চিন্তায় অনেকেই।