অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০২২ সালে বসেছিলো টি-২০ বিশ্বকাপের (ICC T20 World Cup) আসর। কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে দলগুলির মধ্যে মানের তফাত যে দ্রুত কমে আসছে তা বোঝা গিয়েছিলো রোমহর্ষক এই টুর্নামেন্ট থেকে। যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে নামিবিয়া। সুপার টুয়েলভ পর্বেও দেখা গিয়েছিলো একের পর এক অঘটন। পাকিস্তানকে হারায় জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে হেরে টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় নেয় শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। আশা জাগিয়ে শুরু করেও আরও একবার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিলো ভারতকে। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জুটেছিলো ১০ উইকেটে লজ্জার হার। প্রতিযোগিতার ফাইনালে পাকিস্তানকে পরাজিত করে নিজেদের দ্বিতীয় টি-২০ বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তোলে ইংল্যান্ড দল। ফাইনালে ম্যাচে জিতিয়ে নায়ক হন বেন স্টোকস। ম্যাচ ও টুর্নামেন্টের সেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন ইংল্যান্ডেরই স্যাম কারান (Sam Curran)। সারা বছরের পারফর্ম্যান্সের পাশাপাশি জমজমাট এই বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট’কে মাথায় রেখেই বছরের সেরা একাদশ বেছে নিলো বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। সেরা এগারোতে ঠাঁই হয়েছে তিনজন ভারতীয় ক্রিকেটারের। পাকিস্তান থেকে জায়গা পেয়েছেন দুইজন।
অধিনায়ক বাটলার, ব্যাটারদের মধ্যে রয়েছেন কোহলি-সূর্যকুমার-

ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক ব্যাটার জস বাটলারের (Jos Buttler) নেতৃত্বেই কাপ ঘরে তুলেছিলো ‘থ্রি লায়ন্স’ দল। ব্যাট হাতেও টুর্নামেন্টে সফল ছিলেন তিনি। বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ঝোড়ো ৮০* রানের ইনিংসটি বিশ্বকাপের সেরা ইনিংস গুলির মধ্যে থাকবে। এছাড়া সারা বছরেই দুরন্ত ফর্মে ব্যাট করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজ জিতিয়েছেন দলকে। স্বভাবতই সেরা একাদশের অধিনায়ক বেছে নেওয়া হয়েছে বাটলারকেই। দলে জায়গা পেয়েছেন ভারতের বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। টি-২০ বিশ্বকাপে আরও একবার জ্বলে উঠেছিলেন কোহলি। ছয় ম্যাচে ৪ অর্ধশতকসহ ২৯৬ রান করেন। ব্যাটিং গড় ছিলো ৯৯ এর আশেপাশে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক অতিমানবীয় ৫৩ বলে ৮২* রানের ইনিংস খেলে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে ভারতকে জয় এনে দেন। কোহলির পাশাপাশি ভারত থেকে জায়গা হয়েছে সূর্যকুমার যাদবের (Suryakumar Yadav)। ২০২২ সালে আগুনে ব্যাটিং দেখা গিয়েছিলো তাঁর থেকে। মাঠের চার কোণে চার-ছক্কার বৃষ্টি করে ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রী’ তকমা আদায় করেছিলেন তিনি। সারা বছরে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি টি-২০ শতরান করেন। এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড নিজের নামে করেন। এছাড়াও বিশ্বকাপেও নিজের ব্যাটিং-এর জাদু দেখান তিনি। ৬ ম্যাচে করেন ২৫৬ রান। বর্তমানে বিশ্বে টি-২০তে এক নম্বর ব্যাটার সূর্যকুমারকে তাই বাইরে রাখতে পারে নি ICC। দলে জায়গা পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস (Glenn Phillips), পাকিস্তানের মহম্মদ রিজওয়ান (Mohammad Rizwan), জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজাও।
ICC একাদশে হার্দিক, স্থান হ্যারিস রউফেরও-

অলরাউন্ডার হিসেবে দলে স্থান করে নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা (Sikandar Raza)। বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে অসাধারণ খেলেছিলেন তিনি। রয়েছেন ভারতের হার্দিক পান্ডিয়াও (Hardik Pandya)। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে বিরাট ভূমিকা ছিলো তাঁর। এছাড়াও জায়গা পেয়েছেন শ্রীলঙ্কা দলের সহ-অধিনাতক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (Wanindu Hasaranga)। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দল বিশেষ সফল না হলেও ২০২২ এর এশিয়া কাপে তাদের চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে মুখ্য ভূমিকা ছিলো তাঁর। প্রত্যাশামতই দলে জায়গা হয়েছে বিশ্বকাপের প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট স্যাম কারানের (Sam Curran)। টুর্নামেন্টে মোট ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ফাইনালেও ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন কারান। পাকিস্তানের হ্যারিস রউফেরও (Haris Rauf) জায়গা হয়েছে আইসিসি সেরা একাদশে। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে ১৯তম ওভারে হ্যারিসকে জোড়া ছক্কা মারেন বিরাট কোহলি। সেখান থেকেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। একদিনের ব্যর্থতা নয়, বরং ধারাবাহিক সাফল্যকে মাথায় রেখেই রউফ’কে জায়গা দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। আয়ারল্যান্ডের হয়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া জশ লিটলকেও (Josh Little) জায়গা দেওয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে হ্যাট্রিক করেছিলেন তিনি।
ICC ২০২২ টি-২০ বিশ্ব একাদশ-
জস বাটলার (অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষক), মহম্মদ রিজওয়ান, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, গ্লেন ফিলিপস, সিকান্দার রাজা, হার্দিক পান্ডিয়া, স্যাম কারান, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, হ্যারিস রউফ, জশ লিটল