ক্রিকেট দুনিয়ায় ভারত বনাম পাকিস্তানের দ্বৈরথ লেগেই রয়েছে। মাঠের লড়াইতে গত টি-২০ বিশ্বকাপে শেষ দেখায় জিতেছিলো ভারত। মেলবোর্নের ঐতিহাসিক এম সি জি মাঠে রান তাড়া করে জয় এনে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়ারা। মাঠের বাইরের লড়াইতে অবশ্য হার স্বীকার করতে রাজী নয় কোনোপক্ষই। গতবছর থেকেই এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে কথার লড়াই চলছে দুইপক্ষের মধ্যে। এশিয়া কাপ আয়োজন করতে চেয়েছিলো পাকিস্তান। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সচিব জয় শাহ (Jay Shah) সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে পাকিস্তানে গিয়ে কোনো অবস্থাতেই খেলতে রাজী নয় ভারতীয় দল। তারপর থেকেই চলেছে টানাপোড়েন। তৎকালীন পাক বোর্ডের প্রধান রামিজ রাজা (Ramiz Raja) ভারতের দিকে আক্রমণ শানান। কথার লড়াইতে এরপর জড়িয়ে পড়েন ভারতের গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। আকাশ চোপড়া (Aakash Chopra), ইরফান পাঠানরা (Irfan Pathan)। ওয়াঘার ওপার থেকে পালটা দেব সঈদ আনোয়ার (Saeed Anwar), শাহিদ আফ্রিদিরাও (Shahid Afridi)। মাসের পর মাস চলতে থাকা এই বিতর্কের সমাপ্তি হয়ত ঘটতে চলেছে কিছুদিনের মধ্যে। সম্প্রতি বাহরিনে বসেছিলো ACC (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল)-এর বৈঠক। সেখানে সম্ভবত পাকিস্তান থেকে টুর্নামেন্ট সরিয়ে ফেলার পক্ষেই গিয়েছে রায়। তবে ACC’তে ভারতের মত প্রতিষ্ঠিত হলেও ICC-তে ভুগতে হতে পারে ভারত’কে। এই দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে আসন্ন ODI বিশ্বকাপ।
স্থান পরিবর্তন হচ্ছে এশিয়া কাপের-

বাহরিনে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলভুক্ত দেশগুলির উচ্চপদস্থ ক্রিকেট কর্তারা সম্প্রতি এক বৈঠকে মিলিত হন। মূলত এশিয়া কাপের জন্য স্থান বেছে নিতেই আলোচনায় বসেছিলেন তাঁরা। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে বসতে চলেছে এশিয়া কাপের আসর। পূর্বে আয়োজক দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে বেছে নেওয়া হলেও ওয়াঘা সীমান্তের ওপারে ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার ব্যাপারে বেঁকে বসে ভারতীয় বোর্ড। ভারতীয় বোর্ডের সচিব এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জয় শাহ (Jay Shah) এই মর্মে বিবৃতি দেন। বাহরিনে দীর্ঘ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজম শেঠি (Najam Sethi)। ছিলেন ভারতের জয় শাহ’ও। শোনা যাচ্ছে ভারতের দাবী মেনে নিয়ে এশিয়া কাপ আয়োজন করা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। “বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। প্রতিযোগিতার সাফল্যের কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতে কার্য্যপ্রণালী, সময়কাল এবং অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।” ACC’র তরফে এই মর্মে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। এখনও সরকারী ঘোষণা না হলেও এশিয়া কাপ যে সরছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। নাম গোপন রাখার শর্তে এক উচ্চপদস্থ বিসিসিআই কর্তা সংবাদসংস্থা PTI’কে জানিয়েছেন পাকিস্তানের এশিয়া কাপ আয়োজনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, “ভারত পাকিস্তানে না গেলে টুর্নামেন্ট সরাতেই হবে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শুভমান গিল’রা না খেললে স্পন্সররা সরে আসবে প্রতিযোগিতা থেকে।” তবে এই ঘটনায় বিন্দুমাত্র খুশি নয় পাকিস্তান বোর্ড। ভারতের বিরুদ্ধে এশিয়ার ক্রিকেটে দাদাগিরির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা ICC-র দ্বারস্থ হতে পারে তারা।
ICC-র শাস্তি পেতে পারে ভারত-

এশিয়া কাপ বিতর্কের জল গড়াতে পারে বহুদূর অবদি। রামিজ রাজা (Ramiz Raja) পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীনই হুমকির সুরে জানিয়েছিলেন ভারত এশিয়া কাপ না খেললে ভারতে আয়োজিত বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে পাকিস্তান। গত বছর ঊর্দু নিউজ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “ভারতের আগামী বছর যে একদিনের বিশ্বকাপ হওয়ার কথা আছে, পাকিস্তান যদি সেখানে না খেলে, তবে খেলা দেখবে কে? আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, যদি ভারত এখানে আসে, আমরাও যাবো বিশ্বকাপ খেলতে। যদি ওরা না আসে, তবে আমাদের ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে হবে ভারত’কে। আগ্রাসী নীতি নেওয়ার কথা ভাবছি আমরা।” রামিজ (Ramiz Raja) সরে যাওয়ার পর কুরসীতে বসেছেন নাজম শেঠি (Najam Sethi)। ভারতের চাপে এশিয়া কাপ আয়োজন করার দায়িত্ব হারানোকে ভালো চোখে নেবেন না তিনি, এমনটাই মনে করছে ক্রিকেট্মহল। সংবাদসংস্থা ANI সূত্রে জানা যাচ্ছে যে শেষ অব্দি এশিয়া কাপ যদি পাক ভূমিতে না হয়, হয়ত সত্যিই বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারেন বাবর আজম (Babar Azam), শাহীন শাহ আফ্রিদিরা (Shaheen Shah Afridi)। এর আগে পাক প্রাক্তণী সঈদ আনোয়ার (Saeed Anwar) PCB-কে পরামর্শ দিয়েছিলেন ICC-র কাছে অভিযোগ জানানোর। সুরক্ষার প্রশ্নে ভারতীয় ক্রিকেটাররা যদি পাকিস্তানে না আসে, তাহলে পাকিস্তানও যেন ভারতে না গিয়ে দাবী জানায় কোনো নিরপেক্ষ দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করার। এশিয়া কাপের রাশ হাত থেকে চলে গেলে হয়ত আইসিসি’র কাছেই নালিশ জানাতে চলেছে পাকিস্তান। পাক দলের দাবী যদি আইসিসি মেনে নেয় তাহলে তা বড় ঝটকা হতে চলেছে ভারতের জন্য। ১২ বছর পর দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ দেখতে মুখিয়ে থাকা ক্রিকেটজনতা বঞ্চিত হবেন বিশ্বকাপ দেখা থেকে। হয়ত সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতেই এশিয়া কাপের মত ঠিকানা হবে বিশ্বকাপেরও।