কঠিন সময়। একের পর এক তারকা ব্যাটসম্যান কম রানের সঙ্গে সমঝোতা করে সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন। দলকে ফাইনালে তুলতে গেলে কঠিন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে তাঁকে। তার ওপর সামনে ৬ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবং তাদের ভয়ঙ্কর বোলিং সাইড। শুধু প্রতিযোগিতার ফাইনালে তোলা নয়, ভারতকে প্রথমবার আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেতাব জেতানোটা যেন প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল হরমনপ্রীত কৌরের। দিনের শেষে সে লক্ষ্যে তিনি অবশ্য চূড়ান্ত সফল হয়েছেন। কঠিন সময় ১১৫ বলে ১৭১ রানের একটি চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে শুধু দলের হাল ধরেননি, শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে ৩৬ রানে হারিয়ে দেশকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালেও তুললেন হরমনপ্রীত কৌর। তাঁর এই কীর্তির সুবাদে গোটা দেশ এখন পঞ্জাব কন্যার প্রশংসার পঞ্চমুখ হয়েছে। পিছিয়ে নেই হরমনপ্রীতের দিদি হেমজিত কৌরও। বোনের প্রশংসা করতে গিয়ে এবার তিনি ভারতের সর্বকালের সেরা মারকুটে ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্র সেহওয়াগ এবং বর্তমান ভারতীয় দলের নেতা বিরাট কোহলিকেও ময়দানে টেনে আনলেন।



এখানে দেখুনঃ খেলায় সেহওয়াগীয় ঘরানা, অথচ হরমনের আইডল টেস্ট স্পেশালিস্ট
দিদি হেমজিত কৌরের মতে, হরমনজিত ব্যাট করে বীরেন্দ্র সেহবাগের ধাঁচে এবং আক্রমণাত্মক বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা অধিনায়ক বিরাট কোহলির মত। গোটা দেশের পাশাপাশি বোনের প্রশংসা করতে গিয়ে হেমজিত কৌর বলেন, “আমার ছোট বোন ছোটবেলা থেকে ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলত। ব্যাট হাতে রানের ক্ষিদে ওর মধ্যে বরাবর দেখা গিয়েছে। মাঠে ও সত্যি বিরাট কোহলির মত আক্রমণাত্মক মেজাজ নিয়ে খেলে। কিন্তু মাঠের বাইরে ও অন্য মানুষ। একেবারে শান্ত এবং সংযত। আর একটা জিনিষ, বীরেন্দ্র সেহবাগ ওর আদর্শ, আর হরমনপ্রীত বীরু পাজির মতই সব সময় ব্যাট করতে চাই।”

সেমিফাইনালে দূর্দান্ত ব্যাট করে ভারতকে ফাইনালে পৌঁছে দেওয়ার খবর হরমনপ্রীতের বাড়ি পঞ্জাবের মোগাতে অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। ঘরের মেয়ে এভাবে গোটা দুনিয়ার সামনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে তা কেউই স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই খুশির আবহাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর বাড়িতে। রাত থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর বাড়িতে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের যাতায়াত। আশপাশের বাড়ির ছোটরা ঢোল বাজাতে বাজাতে চলে এসেছে মিষ্টিমুখ করতে। মেয়ের অনন্য কীর্তির জন্য অভিনন্দন কুড়িয়ে আত্মহারা হরমনপ্রীতের বাবা মা।

হেমজিতের বিশ্বাস, শুরুতে বৃষ্টি এসে ব্যাঘাত না ঘটালে তাঁর বোন একাই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দু’শো রানের ইনিংস খেলে ফেলতো। এটার পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “হরমনপ্রীতের ক্রিকেট জীবনের প্রথম কোচ ছিলেন আমাদের বাবা হরমিন্দর সিংহ। তিনিও খুব ভাল ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি। আর তাই পরবর্তী সময়ে মেয়ের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নপূরণ করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। আজ দেখে মনে হয় বাবার সেদিনের মেহনত বিফলে যায়নি। আমার বোন সত্যি দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলকে ফাইনালে তুললো। আজ ওর জন্য সত্যি খুব গর্ব হচ্ছে।”

আরোও দেখুনঃ মেয়ের ঐতিহাসিক ইনিংসের পর অসাধারণ বার্তা দিলেন হরমনপ্রীতের মা, কী বললেন তিনি দেখে নিন
ছোট্ট বোনটি নাকি তাঁকে কথা দিয়ে গিয়েছেন দেশকে প্রথম বিশ্বকাপটি এনে দেওয়ার জন্য। এখন সেটাই সত্যি হওয়ার আশায় প্রহর গুনছেন হেমজিতের পাশাপাশি গোটা দেশও।