রবিবারের বিশ্বকাপ ফাইনালের ঘোর এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেন নি বিশ্বের অগণিত ফুটবলপ্রেমী। একদিকে বইতে থাকা খেলার স্ত্রোত যে এক লহমায় কি করে উল্টোদিকে ঘুরে যায় তা হয়ত ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতেন না কেউ। কোটি কোটি মানুষ বিশ্বকাপ দেখতে চেয়েছিলেন লিওনেল মেসির (Lionel Messi) হাতে। ফুটবলের রাজপুত্রকে নিরাশ করেন নি ফুটবল ঈশ্বর। লুসেইল স্টেডিয়ামে দিনের শেষে সোনায় মোড়া ট্রফির মালিক হয়েছে আর্জেন্তিনাই। বিশ্বের লাখো ভক্তের প্রার্থনার বাধা ডিঙিয়ে টাইব্রেকারে আর জেতা হয় নি ফ্রান্সের। তা সত্ত্বেও কিলিয়ান এমবাপে (Kylian Mbappe), মার্কাস থুরঁদের লড়াই মন জিতে নিয়েছেন বিশ্বের। কাপ খুইয়ে আসার কারণে দেশে ফিরে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হলো না অলিভিয়ের জিরৌ, হুগো লরিসদের। বরং সানন্দে তাঁদের বুকে টেনে নিলেন দেশের মানুষ। দিলেন বীরের সন্মান।
টানা দুইবার কাপজয় হলো না ফ্রান্সের-

১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালে টানা দুইবার বিশ্বকাপ জয়ের নজির গড়েছিলো ব্রাজিল। সাম্বার দেশের সাথে একাসনে বসা হলো না ফ্রান্সের। ১৯৮৬ তে বিশ্বকাপ জিতেছিলো আর্জেন্তিনা। ১৯৯০ তে হেরেছিলো ফাইনালে। আর্জেন্তিনার ধারা বজায় রেখে আর্জেন্তিনার কাছেই হারলেন ফরাসীরা। ২০১৮ সালে ক্রোয়েশিয়াকে পরাস্ত করে কাপ নিয়েছিলেন এমবাপে, লরিসরা (Hugo Lloris)। ২০২২ এও ছিলো সুযোগ। কিন্তু ফাইনালে পারলেন না তাঁরা। হারলেও শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করলো ফ্রান্স। মেসি (Lionel Messi) ও দি মারিয়ার (Angel Di Maria) গোলে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে গেছিলো আর্জেন্তিনা। এরপর ৮০ মিনিট অব্দি কোনোরকম প্রত্যাঘাত করতে পারে নি ‘লে ব্লুজ।’ ৮০ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে অক্সিজেন দেন এমবাপে (Kylian Mbappe)। তার এক মিনিটের মধ্যেই সকলকে চমকে দিয়ে ২-২ করেন এমবাপেই (Kylian Mbappe)। বাকি ম্যাচ আশা-নিরাশার দোলাচলে পেন্ডুলামের মত দুলতে দেখলো ফুটবলবিশ্ব। অতিরিক্ত সময়ে মেসি ৩-২ করেন। মিনিটখানেকের মধ্যে পেনাল্টিতে ৩-৩ এমবাপের। জিওফ হার্স্টের পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাট্রিক করলেন এমবাপে। হার্স্ট বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। তবে এদিন ফুটবল রইলো মেসিময়। টাইব্রেকারে হেরে রানার্স-আপ হলেন এমবাপেরা।
সমর্থকদের ভালোবাসায় হার ভুললেন গ্রিজম্যানরা-
Merci 🫶
Thousands of fans gathered in Paris to welcome @equipedefrance home 🇫🇷 #FIFAWorldCup #Qatar2022 pic.twitter.com/NY3uiDlAi3
— FIFA World Cup (@FIFAWorldCup) December 20, 2022
বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে ভেঙে পড়েছিলেন ফরাসী ফুটবলাররা। সোমবার কাতার থেকে চার্লস দে গল বিমানবন্দরে যখন পৌঁছায় বিমান, ফুটবলারদের চোখ মুখে তখন শুধুই হতাশা বাসা বেঁধে রয়েছে। বিমানবন্দরের বাইরেও জড়ো হয়েছিলেন হাজার সমর্থক। তাঁদের উল্লাসধ্বনিতেও মন ভালো হয় নি জিরৌ (Olivier Giroud), থুরঁ, চুয়ামেনি, কোম্যানদের (Kingsley Coman)। সমর্থকদের দিকে বিশেষ লক্ষ্য না করেই টিম বাসে উঠে পড়েন তাঁরা। এরপর টিম বাস যায় প্লাজা দে লা কনকর্ড’এ। হোতেল ডি ক্রিলঁ বারান্দায় দাঁড়িয়ে এমবাপেরা দেখেন নীচে জনতার ঢল নেমছে। ট্রফি খুইয়ে আসার জন্য কোনোরকম অপমান নয়, বরং লড়াইয়ের প্রশংসা করছেন তারা। হতাশা ভুলে ধীরে ধীরে ফরাসী ফুটবলারদের মুখে ফেরে তৃপ্তি। থমথমে মুখগুলিতে দেখা যায় হাল্কা হাসির রেখাও। লরিস, এমবাপেদের (Kylian Mbappe) মত কেউ কেউ হাত নাড়েন সমর্থকদের প্রতি। হাত নাড়েন কোচ দিদিয়ের দেশঁ’ও। অধিনায়ক ও কোচ দুই ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। ২০২২ এ অবশ্য সন্তষ্ট থাকতে হলো রানার্স-আপ হয়েই। জনতার ভালোবাসা কুড়িয়ে ফুটবলাররা এবার ফিরে যাবেন যে যার ক্লাবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই ইউরোপে ফিরছে ক্লাব ফুটবল। ঘটনাচক্রে ফাইনালের দুই দলের দুই সেনাপতি মেসি (Lionel Messi) এবং এমবাপে (Kylian Mbappe) দুজনেই খেলেন প্যারিস সাঁ-জরমঁ ক্লাবে। তাদের মুখোমুখি সাক্ষাতের অপেক্ষায় ফুটবল দুনিয়া।