ভারতীয় দলের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হলেন দীনেশ কার্তিক (Dinesh Karthik)। যদিও তিনি তার প্রতিভা আন্তর্জাতিক মঞ্চে খুব বেশি দেখাতে সক্ষম হননি। ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা আইপিএলে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন কার্তিক। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর আপাতত ধারাভাষ্যকার হিসেবে দীনেশ কার্তিককে ভক্তদের ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ও ২০১৩ সালের আইপিএল বিজয়ী দলের সদস্য দীনেশ কার্তিক আসন্ন মৌসুমে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরু দলের হয়ে ব্যাটিং কোচের ভূমিকা পালন করবেন।
কার্তিক (Dinesh Karthik) তার জীবনে অনেক ভালো সময় এবং খারাপ সময়ের সাক্ষী হয়েছেন। বেশ কিছু সূত্রের খবর অনুযায়ী যুবরাজ সিংয়ের বায়োপিকের সাথে সাথে দীনেশ কার্তিককে নিয়েও একটি সিনেমা প্রকাশ্যে আসছে। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, মহেন্দ্র সিং ধোনি, শচীন তেন্ডুলকর, প্রবীণ তাম্বে, কপিল দেব, মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীদের মতন খেলোয়াড়দের আত্মজীবনী দর্শকদের মনে গেঁথে রয়েছে। তবে এই কিংবদন্তিদের ব্যক্তিগত জীবন দীনেশ কার্তিকের কাছে হার মেনে যাবে।
রুপালি পর্দায় প্রকাশ পাবে ডিকের আত্মজীবনী

খুব অল্প বয়স থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা জেগে ওঠে দীনেশ কার্তিকের (Dinesh Karthik)। দীনেশের বাবা ছোট থেকেই তার একজন বড় সমর্থক ছিলেন। কার্তিককে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযুক্ত করে তুলতে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন করতেন কার্তিকের পিতা। যেখানে দিনেশ উন্নতি করবে সেখানেই দীনেশকে ভর্তি করাতেন তার পিতা কৃষ্ণ কুমার। অল্প বয়সে এই ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় নাম করে ফেলেন কার্তিক। যে কারণে জাতীয় দলেও সুযোগ পেতে খুব বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে।
Read More: IPL 2025: নতুন মেন্টরের সন্ধানে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস, রেডারে রয়েছেন এই কিংবদন্তি তারকা !!
সৌরভ গাঙ্গুলীর (Sourav Ganguly) অধিনায়িকত্বে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন কার্তিক। প্রসঙ্গত, সেই সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো উইকেট রক্ষক ভারতীয় দলের উইকেট রক্ষকের ভূমিকায় কোন খেলোয়াড়কেই বেশিদিন টিকতে পারছিলেন না। সেই পরিস্থিতিতে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন দীনেশ কার্তিক। ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজে অভিষেক করেন কার্তিক, এরপর একই বছরেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের খেলার ডাক পেয়েছিলেন কার্তিক। অল্প বয়সেই জাতীয় দলের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিভা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখাতে ব্যর্থ হন তিনি।
অবসাদে দিন কেটেছে কার্তিকের

দুই বছরের মধ্যেই তার ক্যারিয়ার সমাপ্ত হতে শুরু করে, কারণ সেই সময়ে জাতীয় দলে এন্ট্রি পেয়ে যান মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। ব্যাটসম্যান হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলেন ধোনি। যার ফলে দীনেশ কার্তিকের পক্ষে জাতীয় দলের টিকে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এরপর ২০০৭ সালে ছোটবেলার বান্ধবী নিকিতার সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয় কার্তিকের। ভারতীয় দলের উইকেট রক্ষক হিসাবে কয়েকটি ম্যাচ খেলার পরে আবার ঘরোয়া ক্রিকেট নাম করতে থাকেন কার্তিক ঠিক সেই সময় ঘটে অঘটন। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সতীর্থ মুরালি বিজয়ের (Murali Vijay) সঙ্গে তার স্ত্রী নিকতার বেশ সমধুর সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনকি কার্তিক এই ঘটনার কথা কখনও কল্পনা করতে পারেননি। ২০১২ সালে বিচ্ছেদ হয় কার্তিক ও নিকিতা তাদের এই বিচ্ছেদের মূল কারণ ছিলেন বিজয়ই।
দীনেশের অজান্তেই তারা দেখা করতেন, সময় কাটাতেন এবং চুটিয়ে প্রেম করতেন। খবরটি যখন জানাজানি হয় তখন দুজন একই ড্রেসিংরুমে ছিলেন। খবরটি শোনা মাত্র রীতিমতন ভেঙ্গে পড়েন কার্তিক, তবে ঘটনাটি নিয়ে জলঘোলা না করে তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ দেন নিকিতাকে। তারপর মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন ডিকে এবং সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে আবার কামব্যাক করেন কার্তিক, ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত প্রদর্শন দেখিয়ে ২০১৪ সালে আবার জাতীয় দলে ফিরে আসেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে স্কোয়াশ প্লেয়ার দীপিকা পল্লিকলের সাথে বিবাহ করেন কার্তিক । তারপর থেকে বিন্দাস জীবনযাপন করতে শুরু করেছেন কার্তিক।
ভক্তদের নয়নের মনি হয়ে উঠেছেন কার্তিক

কার্তিক একাধিকবার জাতীয় দল থেকে বাইরে গিয়েছেন এবং একাধিক বার নিজেকে প্রমাণ করে দলেও জায়গা বানিয়েছেন। অবসরের শেষ প্রান্তে এসে আইপিএলের মঞ্চে বিধ্বংসী ইনিংসও খেলেছেন কার্তিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল না হলেও তিনি ক্যারিয়ারের শেষে ভক্তদের নয়নের মনি হয়ে ওঠেন। জাতীয় দলের হয়ে খুব বেশি ম্যাচ না খেললেও তার এই জীবন অত্যন্ত ভয়াবহ ছিল যা টিভি পর্দায় সামনে আসলে ভক্তদের রোমাঞ্চিত করে তুলবে।