World Cup 2023: বিশ্বকাপ শুরু হতে আর বেশী দিন বাকি নেই। আগামী ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে বোধন হতে চলেছে ক্রিকেটদুনিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতার। ইতিমধ্যেই সাজসাজ রব পড়ে গিয়েছে চার দিকে। ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১-র পর চতুর্থবার ভারত পেয়েছে আয়োজকের দায়িত্ব। বাকি তিনবারের থেকে এবারের দায়িত্ব অনেক বেশী ‘স্পেশ্যাল।’ আগে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের মত উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) আয়োজনের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছিলো ভারতকে। এবার প্রথমবার একক দায়িত্ব ভারতের কাঁধে অর্পণ করেছে আইসিসি। এই অভিজ্ঞতাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রচেষ্টায় কোনো খামতি রাখছে না দেশের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই।
গত মঙ্গলবার যে ক্রীড়াসূচী প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে মূলপর্বের ম্যাচগুলি হবে দশটি স্টেডিয়ামে। এই তালিকায় রয়েছে- আহমেদবাদ, দিল্লী, মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, ধর্মশালা, চেন্নাই, পুণে এবং লক্ষ্ণৌ। এছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে তিরুনঅনন্তপুরম এবং গুয়াহাটিকে। উদ্বোধনী ম্যাচ, ভারত বনাম পাকিস্তান এবং ফাইনাল আয়োজনের দায়িত্ব পাচ্ছে আহমেদাবাদ। দুটি সেমিফাইনাল হবে কলকাতার ইডেন এবং মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ১২ শহরের স্টেডিয়ামের মানোন্নয়নের কথা ভেবেছে ভারতীয় বোর্ড। বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। যে সমস্ত স্টেডিয়ামকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলা। যা অধুনা অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম নামে পরিচিত।
Read More: World Cup 2023: পাকিস্তানের জন্য কাল হয়ে উঠবেন এই ভারতীয় ক্রিকেটার, একার হাতেই ধ্বংস করবেন বাবর-আফ্রিদিদের !!
পাঁচটি ম্যাচ আয়োজন করছে দিল্লী-
যে দশটি শহরে বিশ্বকাপের মূলপর্বের খেলাগুলি হবে তার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে রাজধানী দিল্লীও। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামকে বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ অক্টোবর দিল্লীতে খেলতে দেখা যাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। প্রোটিয়াদের প্রতিপক্ষ সেদিন হবে যোগ্যতা নির্ণায়ক টুর্নামেন্ট থেকে মূলপর্বে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় দল। এরপর ১১ অক্টোবর দিল্লীতে আয়োজিত হতে চলেছে দ্বিতীয় ম্যাচ। দেশের রাজধানীতে খেলতে দেখা যাবে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে। ভারতের প্রতিপক্ষ হতে চলেছে আফগানিস্তান। ১৪ অক্টোবর ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান ম্যাচও আয়োজিত হবে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে। এছাড়াও দিল্লীতে ১৫ অক্টোবর এবং ৬ নভেম্বর রয়েছে দুটি ম্যাচ। প্রথমটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষে হতে চলেছে কোয়ালিফায়ার ১ এবং দ্বিতীয়টিতে কোয়ালিফায়ার ২-এর বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ।
চলতি বছরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি টেস্ট ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিলো দিল্লীতে। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো নিয়ে সেই সময় বেশ সমালোচনা হয়েছিলো। দর্শকদের জন্য কোনোরকম সুযোগসুবিধা নেই স্টেডিয়ামে, এই অভিযোগে সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠেছিলো সেই সময়। শোনা যাচ্ছে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুন সাজে দিল্লীর মাঠকে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে খরচ হবে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। কেবল দিল্লী নয়, যে দশ শহর বিশ্বকাপের দায়িত্ব পেয়েছে তার মধ্যে হায়দ্রাবাদ, কলকাতা এবং মুম্বইতেও বিস্তর পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
পরিকাঠামো বদলের কথা ভাবছে DDCA-
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটবোর্ড বিসিসিআই। সম্প্রচারস্বত্ব এবং বিজ্ঞাপন থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করে তারা। কিন্তু অধিকাংশ স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোই আধুনিক নয় ভারতে। মাঝেমধ্যেই স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট নিভে খেলা বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও নিকাশী ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বারবার। বহু ব্যয়ে নির্মিত নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে মাসখানেক আগে আইপিএল (IPL) ফাইনাল ভেজা আউটফিল্ডের জন্য বিঘ্নিত হয়। এছাড়া যথেষ্ট পানীয় জলের অভাব, শৌচালয়ের অভাব বারবার সামনে এসেছে। বিশ্বকাপে যাতে তেমন সমস্যার মুখে পড়তে না হয় সেই বিষয়ে সচেষ্ট কর্মকর্তারা। দিল্লীকে ঢেলে সাজাতে অনুদান দেওয়া হয়েছে বোর্ডের তরফ থেকে।
দিল্লী ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বা DDCA-র যুগ্ম সচিব রাজীব মনচন্দা (Rajiv Manchanda) জানিয়েছেন আগামীতে দর্শকদের সম্পূর্ণ সুবিধা দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য হতে চলেছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “বিসিসিআই-কে ধন্যবাদ আমাদের পাঁচটি ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য। আমাদের স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে যাতে দর্শকদের একটা স্মরণীয় অভিজ্ঞতা আমরা উপহার দিতে পারি। নতুন দর্শকাসন বসানো, শৌচালয় নির্মাণ, নতুন রঙের প্রলেপ দেওয়া, টিকিট ব্যবস্থার বদলের পরিকল্পনা রয়েছে।” বর্তমানে দিল্লীর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ৩5০০০ দর্শক খেলা দেখতে পারেন। এর মধ্যে ১০০০০ দর্শকাসন নতুন করে বসানো হবে বলে জানিয়েছেন মনচন্দা।
বিশ্বকাপের আগে পরিদর্শন করবে ICC-
দর্শকদের জন্য পরিষ্কার শৌচালয়, সাধ্যের মধ্যে খাবার এবং বিনামূল্যে পানীয় জলের অঙ্গীকার করেছেন দিল্লী ক্রিকেট সংস্থার যুগ্ম-সচিব। সাফাইকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাবতীয় কাজ শেষ করতে চাইছে DDCA। জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে বিসিসিআই ও আইসিসি’র পরিদর্শক দল ঘুরে দেখবে যাবতীয় ব্যবস্থা। তাদের নির্দেশ মতই পরবর্তী পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে দিল্লী ক্রিকেট সংস্থা সূত্রে।