CT 2025: গতকাল দুবাইয়ের বাইশ গজে নিউজিল্যান্ডকে চার উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) জিতলো ‘মেন ইন ব্লু।’ এর আগে ২০০২ ও ২০১৩তে খেতাব জিতেছিলো ভারত। গতকালের সাফল্যের পর টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সফলতম দল হিসেবে স্বীকৃতি পেলো তারা। টসে জিতে প্রথম ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেয় কিউইরা। মন্থর পিচে আরও একবার স্পিনকে হাতিয়ার করেছিলো ভারতীয় দল। সাফল্যও মেলে সেই স্ট্র্যাটেজিতে। ২৫১’র বেশী এগোতে পারেন নি নিউজিল্যান্ড। রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসনকে অস্ত্র করে এগিয়েছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৭৬ রান। এরপর মিডল অর্ডারে কার্যকরী ভূমিকা নেন অক্ষর, কে এল রাহুলরাও। আলাদা করে বলতে হয় শ্রেয়স আইয়ারের কথাও। শুধু গতকাল নয়, গোটা টুর্নামেন্টে অনবদ্য ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটার।
Read More: জানেন কি শামির প্রাক্তন স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ কতো? জানুন হাসিন জাহানের আয়ের উৎস
উপেক্ষার জবাব দিলেন শ্রেয়স-

গত এক-দেড় বছরে লাগাতার উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে শ্রেয়স আইয়ারের (Shreyas Iyer) কেরিয়ার। ২০২৪-এর গোড়ায় ইংল্যান্ড সিরিজ চলাকালীন টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন তিনি। ফর্মে ফিরতে শ্রেয়সকে সেই সময় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার নির্দেশ দিয়েছিলো বোর্ড। কিন্তু তা মানতে চান নি মুম্বইয়ের ক্রিকেটার। আইপিএলের আগে শারীরিক শক্তি বাড়ানোর বিশেষ অনুশীলন করার ইচ্ছা ছিলো তাঁর। এই নিয়ে রীতিমত বোর্ডের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ফল ভালো হয় নি। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শ্রেয়সকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেই ছেঁটে ফেলেছিলো বিসিসিআই। জাতীয় দলেও জায়গা হারান তিনি। টি-২০ বিশ্বকাপ, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে তাঁর কথা ভাবাই হয় নি। মাঝে শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ান ডে’তে দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু ফের বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। সেই সময় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিলো শ্রেয়সের ভবিষ্যত নিয়েই।
বাদ পড়লেও দমে যান নি শ্রেয়স আইয়ার। হারান নি আত্মবিশ্বাস। অনুশীলনে নিজের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিনিয়ে নিয়েছেন একের পর এক সাফল্য। রঞ্জি জিতেছেন। আইপিএল জিতেছেন। তাঁর মুকুটে যুক্ত হয়েছে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি ও ইরানী কাপ জয়ের পালক’ও। ২০২৫-এর শুরুতে তাই আর উপেক্ষা করা সম্ভব হয় নি শ্রেয়সকে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তন সিরিজে, তিন ম্যাচে যথাক্রমে ৫৯, ৪৪ ও ৭৮ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও (CT 2025) বজায় রাখলেন ধারাবাহিকতা। পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেন যথাক্রমে ৫৬, ৭৯ ও ৪৫। ফাইনালেও ৪৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেছেন তিনি। পরপর তিন উইকেট হারিয়ে খেতাবী যুদ্ধে একটা সময় চাপে পড়েছিলো ভারত। তারপরও মিডল অর্ডারে যেভাবে দলকে ভরসা যুগিয়েছেন শ্রেয়স,তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন খোদ অধিনায়কও।
সাফল্যের স্বাদ পেয়ে উচ্ছ্বসিত শ্রেয়স-

যন্ত্রণাময় অধ্যায়কে পিছনে ফেলে ফের সাফল্যের সরণিতে শ্রেয়স আইয়ার। গতকাল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) জয়ের পর আনন্দে ভেসেছেন মুম্বইয়ের তরুণ। সাক্ষাৎকারে বলেন, “সত্যি বলতে অসাধারণ লাগছে। ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আমার প্রথম আইসিসি ট্রফি। আমি সাজঘরে প্রত্যেকের তাকিয়ে বেশ বিহ্বল। যেভাবে আমরা এই টুর্নামেন্টে পা রেখেছিলাম, যেভাবে আমরা এগিয়েছি, সেটা দুর্দান্ত।” চাপের মুখে প্রায় প্রত্যেকটি ম্যাচেই ব্যাট করতে হয়েছে তাঁকে, তবুও ছিনিয়ে এনেছেন সাফল্য। তৃপ্ত শ্রেয়স (Shreyas Iyer) জানিয়েছেন, “সত্যি বলতে চ্যালেঞ্জকে উপভোগ করি আমি। মনে হয় চাপের মুখেই সেরাটা বেরিয়ে আসে। ঐ মুহূর্তগুলো উপভোগ করি।” ৫ ম্যাচে ৪৮.৬০ গড় ও ২টি অর্ধশতক-সহ ২৪৩ রান করেছেন শ্রেয়স। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলীয় সাফল্যে অবদান রাখতে পারায় অধিক তৃপ্তিদায়ক, জানিয়েছেন ক্রিকেট তারকা।