চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) নিয়ে জটিলতা যেন কাটতেই চাইছে না। মাসখানেক আগেও টুর্নামেন্ট নিয়ে তীব্র দড়ি টানাটানি চলেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। আইসিসি’র তরফে এবারের প্রতিযোগিতার আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো পাকিস্তানের নাম। কিন্তু ওয়াঘা সীমান্ত পেরোতে রাজী হয় নি ‘মেন ইন ব্লু।’ বিসিসিআই বনাম পিসিবি যুদ্ধে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো পরিস্থিতি। ভারতের তোলা হাইব্রিড মডেলের দাবী কিছুতেই মানতে রাজী ছিলেন না পাক বোর্ড প্রধান মহসীন নকভি (Mohsin Naqvi)। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর শেষমেশ হাইব্রিড মডেলেই বেরোয় সমাধানসূত্র। ভারতেও ভবিষ্যতে আসবে না পাক শিবির, বিসিসিআই’কে রাজী হতে হয় সেই শর্তে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) নিয়ে সবুজ সংকেত মেলায় খানিক হাঁফ ছেড়েছিলো আইসিসি। কিন্তু এবার ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান দ্বন্দ্বে ফের সমস্যায় তারা।
Read More: “শামি’কে নিয়ে ছেলেখেলা চলছে…” রবি শাস্ত্রীর নিশানায় BCCI, তুললেন দলে ফেরানোর দাবী !!
আফগানিস্তান ম্যাচ বয়কট ইংল্যান্ডের ?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (CT 2025) গ্রুপ-বি’তে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে রয়েছে ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হওয়ার কথা দুই দলের (ENG vs AFG)। কিন্তু রশিদ খান, রহমানুল্লাহ গুরবাজদের (Rahamanullah Gurbaz) বিরুদ্ধে জস বাটলারের দল আদৌ মাঠে নামবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তালিবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকার এই মুহূর্তে ভুলুন্ঠিত। এই অবস্থার প্রতিবাদে তাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ বয়কট করুক ইসিবি, উঠেছে দাবী। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড-এর (ECB) সিইও রিচার্ড গুল্ডের (Richard Gould) কাছে এই মর্মে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
অত্যাচারিত মহিলাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সংস্থার কাছে। যুক্তরাজ্যের ১৬০ জন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদের সই সম্বলিত ঐ চিঠিতে লেখা হয়েছে, “তালিবান শাসনে আফগানিস্তানের মহিলা ও শিশুকন্যাদের উপর যে বেনজির অত্যাচার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের পুরুষ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের মুখ খোলার জন্য আমরা আবেদন জানাচ্ছি। আমাদের আর্জি যে ইসিবি যেন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচটি বয়কটের পরিকল্পনা করে। যাতে একটা স্পষ্ট বার্তা যায় যে এহেন অত্যাচার কখনোই বরদাস্ত করা হবে না।” লিঙ্গভিত্তিক বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করুক ইসিবি, চাইছে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মহল।
আফগানিস্তানে মহিলাদের একা রাস্তায় বেরোনোর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে তালিবান শাসকেরা। বিদ্যালয় বা কলেজের দরজাও বন্ধ হয়েছে তাঁদের জন্য। দিনকয়েক আগে নারী স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাও (Martina Navratilova)। ৫৯টি গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী তারকা দিনকয়েক আগে একটি ট্যুইটবার্তায় তালিবান’কে ‘শয়তান’-এর সাথে তুলনা করেছেন। আফগানিস্তানের পুরুষ ক্রিকেট দলকে বয়কটের দাবী জানিয়েছেন। ইংল্যান্ড যদি সত্যিই সরে দাঁড়ায় ম্যাচ থেকে, তাহলে না খেলেই পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা আফগানদের। সেক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (CT 2025) সেমিফাইনালে যাওয়া কঠিন হতে পারে বাটলারদের জন্য। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়া ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ECB) শেষমেশ কি পদক্ষেপ নেয় তা দেখতে মুখিয়ে ক্রিকেটমহল।
দেখুন নাভ্রাতিলোভার ট্যুইট-
Taliban men are evil. I will keep saying it because it’s true. And boycott the damn cricket team!!!! https://t.co/HUgNZnaKYH
— Martina Navratilova (@Martina) January 3, 2025
আফগানিস্তানের সদস্যপদ নিয়ে প্রশ্ন-
২০১৭ সালে আইসিসি’র পূর্ণ সময়ের সদস্য পদ পেয়েছিলো আফগানিস্তানের। বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য যে শর্তগুলি পূরণ করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো মহিলাদের ক্রিকেটের সম্প্রসারণ ও উন্নতিতে কাজ করার বিষয়টি। কিন্তু ২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরেই সে দেশে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে মহিলাদের কোনো জাতীয় দল’ও নেই আফগানদের। সেক্ষেত্রে তাদের সদস্য পদ খারিজ করা উচিৎ কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। নারীদের উপর হওয়া অত্যাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংস্থা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাতিল করেছিলো। কিন্তু আইসিসি টুর্নামেন্টে আফগানদের বিপক্ষে না খেলার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখায় নি তারাও।