২০১৩ সালে ক্রিকেটবিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলো IPL স্পট ফিক্সিং বিতর্ক। মহম্মদ আমির, মহম্মদ আসিফ, সলমন বাটদের মত পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের সুবাদে ততদিন স্পট ফিক্সিং বস্তুটা কি সেই বিষয়ে মোটামুটি একটা ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো ক্রিকেটপ্রেমী জনতার মনে। তবুও ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতি যা নিয়ে গর্ব করে সেই IPL-এ এমন গড়াপেটার খবর সামনে আসায় চমকেছিলেন অনেকে। স্পট ফিক্সিং- এ যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হন রাজস্থান রয়্যালস দলের তিন ক্রিকেটার। অজিত চান্ডিলা, অঙ্কিত চৌহানের সাথে নাম জড়িয়েছিলো ভারতের হয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ এবং একদিনের বিশ্বকাপজয়ী পেসার শান্তাকুমারন শ্রীশন্থেরও। ঘটনায় নড়েচড়ে বসে ভারতের ক্রিকেটমহল। বাধ্য হয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয় দেশের সুপ্রীম কোর্টকেও। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে ক্রিকেট বোর্ডের সংবিধানেও বদল আনা হয়েছিলো সেই সময়। সেই সময় দিল্লী পুলিশের তৎপরতায় স্পট ফিক্সিং-এর গোটা ঘটনাটি সামনে এসেছিলো। শাস্তিস্বরূপ চান্ডিলা (Ajit Chandila), শ্রীশন্থ এবং অঙ্কিত চৌহান-তিনজনকেই ব্যান করেছিলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করে আগেই শ্রীশন্থ (S Sreesanth) এবং অঙ্কিত চৌহানের (Ankeet Chavan) নির্বাসনের মেয়াদ কমিয়েছিলো ভারতীয় বোর্ড। কেরালার হয়ে রঞ্জি খেলে অবসর নিতে পেরেছেন শ্রীশন্থ, অঙ্কিতও মুম্বইতে নিজের ক্লাব দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। বাকি ছিলেন কেবল অজিত চান্ডিলা (Ajit Chandila)। প্রাক্তন রাজস্থান রয়্যালস অফ স্পিনারের শাস্তির মেয়াদও কমিয়ে দিলেন বোর্ডের ন্যায়পাল বিনীত সরণ।
IPL স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে আগেই মুক্তি পান শ্রীশন্থ-

স্পট ফিক্সিং-এ জড়িয়ে পড়া তিন ক্রিকেটারের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম নিঃসন্দেহে শান্তাকুমারণ শ্রীশন্থ (S Sreesanth)। ভারতীয় দলের হয়ে তিন ফর্ম্যাটেই খেলা শ্রীশন্থের কেরিয়ারই শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো এই বিতর্কে জড়িয়ে। চান্ডিলা এবং অঙ্কিত চৌহানের সাথে তাঁকে আজীবন নির্বাসিত করেছিলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে ঘটনার চার বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালে কেরল হাইকোর্টের শুনানিতে মুক্তি পান তিনি। তাঁর আজীবন নির্বাসনের শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়। নিজের রায়ে জাস্টিস এ মোহামেদ মুস্তাক জানান শ্রীশন্থের (S Sreesanth) বিরুদ্ধে সরাসরি স্পট ফিক্সিং-এ যুক্ত থাকার কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় নি। কেবলমাত্র অনুমানলব্ধ প্রমাণের ভিত্তিতেই BCCI নিযুক্ত শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি শ্রীশন্থের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে বলেও জানানো হয় মহামান্য আদালতের তরফে। ভারতীয় বোর্ডের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির আনা অভিযোগ’কে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন শ্রীশন্থ (S Sreesanth)। রায়ে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো যে শ্রীশন্থ যে সরাসরি বেটিং চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তিনি গড়াপেটার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল ছিলেন, কেবলমাত্র এই অনুমানের ভিত্তিতেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভদ্রলোকের খেলাকে যে বেটিং চক্র আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে তা আদালতে দাখিল করা প্রমাণগুলি থেকে পরিষ্কার। ২০১৫ সালে দিল্লীর এক আদালতেও অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন শ্রীশন্থ। তখন অবশ্য তাঁর আজীবন নির্বাসনের মেয়াদ কমায়নি বোর্ড। কেরালা হাইকোর্টে শ্রীশন্থের জয়ের পরেই বিসিসিআই-এর কাছে সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার আর্জি জানান অঙ্কিত ও অজিত চান্ডিলা।
অজিত চান্ডিলার নির্বাসনের মেয়াদ কমলো-

২০১৩-র স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি সামনে আসার দশ বছর পর এই বিষয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় সামনে এলো। বিসিসিআই-এর ন্যায়পাল অফস্পিনার অজিত চান্ডিলার (Ajit Chandila) আজীবন নির্বাসনের মেয়াদ কমিয়ে সাত বছর করে দিলেন। নিজের রায়ে বোর্ডের ওম্বুডসমান বা ন্যায়পাল বিনীত সরণ জানিয়েছেন দিল্লী পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের তদন্তের ভিত্তিতে গত ০৯/০৫/২০১৩ তারিখে নিবন্ধিত কেসের ভিত্তিতে বিসিসিআই ১৭/০/২০১৩ তারিখে আবেদনকারী (অজিত চান্ডিলা)’কে সকলপ্রকার ক্রিকেটীয় কার্য্যকলাপ থেকে নির্বাসিত করে। আবেদনকারীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার পাশাপাশি এবং শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত কার্য্যকলাপে জড়িত থাকার তদন্ত শুরু হয়ছিলো বিসিসিআই-এর তরফে। ০৪/১১/২০১৯ তারিকেহ আবেদনকারী যে অনুরোধ জানিয়েছিএন তা মেনে নেওয়া হলো। শ্রীশন্থ এবং অঙ্কিত চৌহানের সমান শাস্তিই তাঁর জন্য বরাদ্দ হলো। ১৮/০১/২০১৬ তারিখে বিসিসিআই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি কর্তৃক চাপানো আজীবন নির্বাসনের সাজা কমিয়ে ৭ বছরের করা হলো। এই নির্বাসনের মেয়াদ শুরু হবে ১৮/০১/২০১৬ তারিখ থেকে বলে জানিয়েছেন ন্যায়পাল। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারিতেই শেষ হয়েছে তাঁর নির্বাসনের মেয়াদ। বর্তমানে ক্রিকেটীয় কোনো কার্য্যকলাপে কোনো বাধা নেই অজিত চান্ডিলার (Ajit Chandila) সামনে।
Read More: “ওকে একটু রেহাই দেওয়া হোক…” সমালোচনার তীরে বিদ্ধ KL রাহুল পাশে পেলেন হরভজন সিং’কে !!