‘আনন্দের শহর’ থেকে এই মুহূর্তে ‘আন্দোলনের শহর’ হয়ে উঠেছে কলকাতা। নেপথ্যে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে (RG Kar Rape and Murder) এক অন ডিউটি ট্রেনি চিকিৎসকের নারকীয় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা। গত ৯ অগস্ট ৩৬ ঘন্টা ডিউটি করার পর সেমিনার হলে সাময়িক বিশ্রামের জন্য গিয়েছিলেন ঐ তরুণী চিকিৎসক। সেখানেই ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন হন তিনি। দোষীদের আড়াল করার প্রচেষ্টা করেছিলো আর জি কর (RG Kar) কর্তৃপক্ষ, উঠছে ভয়ঙ্কর অভিযোগ। প্রথমে আত্মহত্যার তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করেছিলো তারা। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে সঞ্জয় রায় নামে একজন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে। একজনের পক্ষে এমন নারকীয় ঘটনা সম্ভব নয়, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। ফলে প্রশ্ন উঠতে থাকে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও। মহামান্য আদালতে নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের থেকে তদন্তভার গ্রহণ করেছে সিবিআই।
আর জি কর হাসপাতালের (RG Kar Incident) ঘটনা সামনে আসার পর ক্ষোভে ফুঁসছেন নাগরিকেরা। কর্মক্ষেত্রেও যদি নারীরা নিরাপদ না হন, তাহলে কোন দিকে এগোচ্ছে সমাজ? প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের দিকে। কলকাতার ‘অভয়া’র জন্য সুবিচারের দাবীরে রাস্তায় নেমেছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। ১৪ অগস্ট, ‘রাত দখলের’ ডাক দিয়েছিলেন মেয়েরা। বিনোদন জগত, ক্রীড়াজগত- পিছিয়ে নেই কেউই। ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন বলিউড অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানা’ও (Ayushman Khurrana)। জসপ্রীত বুমরাহ, সূর্যকুমার যাদব, মহম্মদ সিরাজ’রা (Mohammed Siraj) সংহতি জানিয়েছিলেন। ঘটনার নিন্দা শোনা গিয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও। শতাব্দী প্রাচীন প্রতিদ্বন্দ্বীতা সরিয়ে রেখে ন্যায়বিচারের দাবীতে আন্দোলনে সামিল মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরাও।
Read More: বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিরাট বদল, বিসিবি সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নাজমুল হাসান পাপন !!
ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী চাহালের-
আর জি কর হাসপাতালের (RG Kar Horror) ঘটনার ক্ষত এখনও টাটকা জনতার মনে। এর মধ্যেই ভয়াবহ এক খবর মিলেছে মহারাষ্ট্রের বদলাপুর থেকেও। দু’টি চার বছরের শিশু’কে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের এক সাফাইকর্মীর বিরুদ্ধে। ক্ষুব্ধ জনতা প্রতিবাদে রেল অবরোধ করে, ভাঙচুর করা হয় বিদায়লয় ভবনেও। উন্নাও, কাঠুয়া, হাথরাস থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাঁসখালি, কামদুনি, পার্ক স্ট্রীট- গত এক-দেড় দশকে নারী নির্যাতনের এমন সব ভয়ানক ঘটনা প্রায়শই এসেছে সামনে। আন্দোলন হয়েছে, অভিযুক্তরা কিছু ক্ষেত্রে ধরাও পড়েছেন, কিন্তু ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে এসেছে যাবতীয় প্রতিবাদ। নারী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েই গিয়েছে দেশ জুড়ে। আর জি কর ও বদলাপুরের ঘটনার পর সার্বিক পরিবর্তনের দাবী উঠছে তাই।
দিনকয়েক আগে ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, “…আশা করবো সিবিআই যখন দোষীদের ধরবে, তখন এমন শাস্তি দেওয়া উচিৎ, যাতে ভবিষ্যতে এহেন কাজ করার সাহস কেউ না পায়।” একই মনোভাব ব্যক্ত করলেন টিম ইন্ডিয়ার লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল’ও (Yuzvendra Chahal)। দেশের বাইরে রয়েছেন তিনি। তবুও ইন্সটাগ্রামে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তিনি। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য সওয়াল করেছেন তিনি। লেখেন, “ওদের ফাঁসিতে ঝোলানো হবে? নাহ। ৯০ ডিগ্রীতে ওদের পা ভেঙে দেওয়া হোক। কলারবোন চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হোক। আঘাত করা হোক যৌনাঙ্গে। ধর্ষকদের এই যন্ত্রণা সহ্য করার জন্য বাঁচিয়ে রাখা হোক।” কিছুক্ষণ পর পোস্টটি অবশ্য ডিলিট করে দেন তিনি।