ধীরে ধীরে আইপিএল’কে ছাপিয়ে যাবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (BPL), টুর্নামেন্টের একাদশতম মরসুম শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন বিসিবি প্রধান ফারুখ আহমেদ। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে ততই তাঁর সেই দাবী যেন প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। সঠিক সময় অর্থ না পেয়ে ম্যাচ খেলতেই অস্বীকার করেছিলেন দুর্বার রাজশাহী’র বিদেশীরা। বিপিএলের (BPL) ইতিহাসে প্রথমবার কেবলমাত্র বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের নিয়ে বাধ্য হয়েই একাদশ গড়তে হয়েছিলো তাদের। চেক বাউন্স, হোটেন সমস্যার মত বিষয়গুলোই সামনে এসেছে। এমনকি চিট্টাগং কিংস-এর (CK) ম্যাচে চট্টগ্রামের ভূতপূর্ব ফ্র্যাঞ্চাইজি চিট্টাগং চ্যালেঞ্জার্স পতাকাও উড়তে দেখা গিয়েছে মাঠে। অব্যবস্থা, অপেশাদারিত্ব, পরিকাঠামোর অভাবের মত বিষয়গুলি বিশ্বের দরবার মুখ পুড়িয়েছে বিপিএলের (BPL)। মুখ পুড়িয়েছে বাংলাদেশেরও। এবার কলঙ্কের নয়া অধ্যায় যুক্ত হলো টি-২০ টুর্নামেন্টের গায়ে। উঠলো ম্যাচ ফিক্সিং-এর অভিযোগ’ও।
Read More: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ জসপ্রীত বুমরাহ, গম্ভীরের ‘তুরুপের তাস’ নেবেন এন্ট্রি !!
BPL-কে ঘিরে উঠছে মারাত্মক অভিযোগ-
অজ্ঞাতপরিচয় সূত্র মারফত বেনিয়মের খবর মেলার পর বিসিবি’র (BCB) দুর্নীতিদমন কমিটির সদস্যেরা নজরে রেখেছিলেন বিপিএলের (BPL) আটটি ম্যাচকে। সেখান থেকেই সন্দেহের তালিকায় দশ ক্রিকেটার। তাঁদের সঠিক পরিচয় এখনও সামনে আসে নি ঠিকই, তবে জানা গিয়েছে যে দশ জনের মধ্যে ছয় জন বাংলাদেশ জাতীয় দলের তারকা। দুইজন এখনও আনক্যাপড, অর্থাৎ টাইগার্সদের জার্সি গায়ে এখনও মাঠে নামেন নি তাঁরা। আর বাকি দুইজন বিদেশী। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান ফারুখ আহমেদকে (Farukh Ahmed) ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। “কিছু নিয়মনীতি আমাদের মেনে চলতে হয়। আমি সরকারীভাবে তাই কোনো মন্তব্য করতে পারবো না বিষয়টি নিয়ে। তবে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে যা চলছে তা নোট করা হয়েছে। তদন্ত হবে,” জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে কড়া শাস্তির পথে হাঁটবে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা, স্পষ্ট করেছেন ফারুখ আহমেদ। “…যদি এই তদন্তে কিছু উঠে আসে তাহলে কড়া শাস্তি যে অপেক্ষা করে রয়েছে তা সকলেই জানেন। অপরাধের প্রমাণ যদি আমরা পাই তাহলে কাউকে রেয়াৎ করা হবে না। ওদের জীবনই বদলে দেব। এমন শাস্তি নেওয়া হবে যা অন্যান্যদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে,” জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (BPL) গড়াপেটা বা ম্যাচ ফিক্সিং-এর অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে ২০১২ সালে স্পট ফিক্সিং-এর অভিযোগ উঠেছিলো। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ ঘিরে যে সকল বিতর্ক চলছে আপাতত তার সব দায় যে বিসিবি’র নয় তাও ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীত্ব হারানোর পর বাংলাদেশ ক্রিকেটেও রদবদল হয়। পূর্বসূরিদের ভুলের মাশুল যে তাঁদের দিতে হচ্ছে, সাফাই দিয়েছেন ফারুখ।
টি-২০ লীগে ফিক্সিং, রয়েছে একাধিক দৃষ্টান্ত-
ক্রিকেটদুনিয়ার আনাচেকানাচে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টকে ঘিরে প্রায়শই শোনা যায় গড়াপেটার অভিযোগ। কাবুল প্রিমিয়ার লীগে ম্যাচ ফিক্সিং-এর জন্য আইসিসি’র দুর্নীতিদমন কোডের ২.১.১ ধারায় শাস্তি পেয়েছিলেন ইহসানুল্লাহ জানাত। ২০২১-এ লঙ্কান প্রিমিয়ার লীগে (LPL) গড়াপেটার প্রস্তাব পাওয়ার পর সঠিক সময়ে দুর্নীতিদমন শাখার কাছে রিপোর্ট না করা এবং অন্যান্য ক্রিকেটারদের ফিক্সিং-এর জন্য প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অপরাধে শাস্তি পান স্পিনার প্রবীন জয়বিক্রমা (Praveen Jayawickrama)। দক্ষিণ আফ্রিকার র্যাম স্ল্যাম টি-২০ টুর্নামেন্টে ফিক্সিং-এর জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছেন লোম্বওয়াবো সোতসোবে সহ মোট ১০ ক্রিকেটার। তবে সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল ম্যাচ ফিক্সিং-এর অভিযোগ উঠেছিলো শান্তাকুমারণ শ্রীশন্থ, অজিত চাণ্ডিলা, অঙ্কিত রাজপুতদের বিরুদ্ধে। আইপিএলে (IPL) স্পট ফিক্সিং-এর অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনজনেই।