Sourav Ganguly: সৌরভ চণ্ডীদাস গাঙ্গুলি, যিনি স্নেহে ‘দাদা’ অথবা ‘মহারাজ’ নামেও পরিচিত। ভারতীয় ক্রিকেটের একজন বিশাল বড় নাম হলো সৌরভ গাঙ্গুলি। ৮ জুলাই, ১৯৭২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেহালায় জন্ম হয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলির। একজন তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার থেকে ভারতীয় জাতীয় দলের অধিনায়ক এবং পরে একজন সফল ক্রিকেট প্রশাসক হওয়ার যাত্রা তার নিষ্ঠা, আবেগ এবং নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়। একসময় অধিনায়ক হয়ে ডুবতে থাকা ভারতীয় দলকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন সৌরভ। আজ ৮ই জুলাই ২০২৫ সৌরভ ৫৪তম জন্মদিন উদযাপন করতে চলেছেন।
সৌরভের প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

সৌরভ গাঙ্গুলির (Sourav Ganguly) প্রাথমিক জীবনের কথা বলতে গেলে ছোট বেলায় ফুটবলের প্রতি ব্যাপক প্রেম ছিল। তবে, পরে তাঁর দাদা স্নেহাশিষ, যিনি বাংলা ক্রিকেট দলের হয়ে খেলতেন, তাঁর দাঁড়ায় গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন সৌরভ। সৌরভ ধীরে ধীরে ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করেন। বাড়িতেই তাঁর অনুশীলনের জন্য পিচ স্থাপন করা হয়েছিল। যদিও, সেটি স্নেহাসিষের জন্যই তৈরি করেছিলেন সৌরভের পিতা চন্ডীদাস গাঙ্গুলি। ছোট থেকেই স্বাভাবিকভাবেই ডানহাতি সৌরভ গাঙ্গুলি। তা সত্ত্বেও, তিনি তার দাদার সরঞ্জাম ব্যবহার করার জন্য বামহাতি ব্যাটিং শুরু করেন। পাশাপশি, সৌরভ গাঙ্গুলি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার শিক্ষাগত পটভূমি মাঠে এবং মাঠের বাইরে তার ভবিষ্যতের সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করে।
Read More: প্রতিকূলতাও দমাতে পারেনি MS ধোনি’কে, অনুপ্রাণিত করবে তাঁর ‘মাহি’ থেকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ হয়ে ওঠার জার্নি !!
সৌরভের ক্রিকেট ক্যারিয়ার

সৌরভ গাঙ্গুলির (Sourav Ganguly) ক্রিকেট ক্যারিয়ার অসংখ্য মাইলফলকে ভরা। ১৯৯২ সালে ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম ডাক পেয়েছিলেন সৌরভ এবং প্রথম ম্যাচে তিনি ৩ রান বানিয়ে একটি হতাশজনক সূচনা করেছিলেন। এরপর, ১৯৯৬ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করেন সৌরভ। প্রথম ম্যাচেই ৩০১ বলে ১৩১ রান বানিয়েছিলেন। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শৈলী এবং নিপুণ দক্ষতা তাকে দ্রুত ভারতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তোলে। ২০০২ সালে লর্ডসের ব্যালকনিতে সৌরভের সেই জার্সি ওড়ানোর মুহূর্ত আজও সমাজ মাধ্যমে চর্চার মূল বিষয় হয়ে থাকে। ক্যাপ্টেন হিসাবে ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় (শ্রীলঙ্কার সাথে যৌথ ভাবে) তাঁর ক্যাপ্টেন্সির একটি বড় মুহূর্ত ছিল। এরপর, ২০২৩ সালেই দীর্ঘ ২০ বছর পর ভারতকে বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছে দিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সৌরভ।
অধিনায়কত্ব এবং উত্তরাধিকার গঠন

সৌরভ গাঙ্গুলির (Sourav Ganguly) অধিনায়কত্ব ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপশি সৌরভ সবসময় দলের খেলোয়াড়দের জন্য লড়াই করেছেন এবং তাদের গড়ে তুলতে মস্ত বড় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত উল্লেখযোগ্য জয় অর্জন করেছিল এবং তাঁর নেতৃত্বে টেস্টে বিদেশে কোনো সিরিজ হারেনি টিম ইন্ডিয়া। এমনকি, গাঙ্গুলির নিজস্ব ব্যাটিং দক্ষতা তাকে অসংখ্য প্রশংসা এনে দিয়েছিল। গাঙ্গুলি শুধু নিজের জন্য নয়, ক্যারিয়ার তৈরি করেছিলেন হরভজন সিং (Harbhajan Singh), বীরেন্দ্র সেহবাগ (Virender Sehwag), যুবরাজ সিং (Yuvraj Singh), এমএস ধোনি (MS Dhoni), জাহির খান, আশীষ নেহরাদের মতন আরও অনেক তারকার।
সৌরভের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক
- ব্যাটিং স্টাইল: বামহাতি ব্যাটসম্যান
- বোলিং স্টাইল: ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার
- উচ্চতা: ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি (১৮০ সেমি)
- আন্তর্জাতিক অভিষেক: ১৯৯৬ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (টেস্ট ক্রিকেট) এবং ১৯৯২ সালে বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (ওয়ানডে)
ব্যক্তিগত জীবন ও ক্যারিয়ার

সৌরভ গাঙ্গুলির (Sourav Ganguly) ব্যক্তিগত জীবন একটি দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন দ্বারা চিহ্নিত। তিনি ১৯৯৭ সালে ডোনা গাঙ্গুলিকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির একটি কন্যা রয়েছে। সানা গাঙ্গুলি যার জন্ম ২০০১ সালে। দীর্ঘ ১৬ বছর দাপিয়র ক্রিকেট খেলেছেন সৌরভ। ২০০৮ সালে সমস্ত ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়ে সৌরভ পরবর্তী প্রজন্মকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর, গাঙ্গুলি প্রশাসনে স্থানান্তরিত হন। বাংলার ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বে থাকার পরেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সৌরভ। তার মেয়াদকাল ভারতে ক্রিকেটের প্রচার এবং খেলাধুলার অবকাঠামোগত উন্নতির প্রচেষ্টা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলোয়াড়দের উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও মহিলা ক্রিকর্তারদের পুরুষ ক্রিকেটারদের মতন সম বেতনের অধিকার লাগু করেছিলেন সৌরভ।
পরবর্তী প্রজন্মকে গড়তে সৌরভের প্রভাব

সৌরভ গাঙ্গুলির (Sourav Ganguly) উত্তরাধিকার তাঁর ক্রিকেটীয় সাফল্যের বাইরেও বিস্তৃত। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনার, আগ্রাসন এবং প্রতিযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা করার জন্য তিনি কৃতিত্বপ্রাপ্ত। মাঠে এবং মাঠের বাইরে তাঁর প্রভাব খেলোয়াড়দের একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে, ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম প্রতীকী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর স্থানকে সুদৃঢ় করেছে ।
পুরস্কার এবং স্বীকৃতি

ভারতীয় ক্রিকেটে সৌরভ গাঙ্গুলির (Sourav Ganguly) অবদান প্রচুর। গাঙ্গুলির হাত ধরেই ভারতীয় ক্রিকেটের সোনালী যুগের আবার সূচনা হয়, এমনকি সৌরভের উল্লেখযোগ্য ক্যারিয়ারের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী সহ বেশ কয়েকটি পুরষ্কারে স্বীকৃত হয়েছে। সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী তাঁর আবেগ, নিষ্ঠা এবং নেতৃত্বের প্রমাণ। তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর প্রথম দিন থেকে শুরু করে ভারতের অধিনায়ক ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রশাসক হিসাবেও তাঁর সাফল্য ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা।
একনজরে সৌরভ গাঙ্গুলির ক্যারিয়ার :-
ফরম্যাট |
ম্যাচ | ইনিংস | গড় | রান | ১০০ / ৫০ | উইকেট |
টেস্ট |
১১৩ | ১৮৮ | ৪২.১৮ | ৭,২১২ | ১৬ / ৩৫ |
৩২ |
ওডিআই | ৩১১ | ৩০০ | ৪০.৭৩ | ১১,৩৬৩ | ২২ / ৭২ |
১০০ |