ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তী স্পিনারদের তালিকায় থাকা ভগবত চন্দ্রশেখরের আজ ৭৫তম জন্মদিন। ৭০-৮০ এর দশকে ভারতের কাছে স্পিনারদের জনপ্রিয় চারজনের একটি দল ছিল, যারা বিশ্বজুড়ে ব্যাটসম্যানদের নাকাল করে রেখেছিলেন। বিষেন সিং বেদি, এরাপল্লী প্রসন্ন, ভেঙ্কট রাঘবন আর ভগবত চন্দ্রশেখরের এই চারফলা সেই সময় বিশ ক্রিকেটে রাজস্ত করতেন। এই সকলের মধ্যে যদি ভগবত চন্দ্রশেখরের কথা বলা হয় তো তার বোলিং সবচেয়ে বেশি চমৎকারী আর রহস্যময় ছিল।
আজকের দিনেই মাইসোরে জন্মেছিলেন চন্দ্রশেখর
আজ ভগবত চন্দ্রশেখরের ৭৫তম জন্মদিন। তার জন্ম আজকের দিনেই অর্থাৎ ১৭ মে কর্নাটকের ঐতিহাসিক মাইসোর শহরে হয়েছিল। যখনই ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে মহান স্পিনারদের কথা হয় তো তাতে চন্দ্রশেখরের নাম অবশ্যই উপস্থিত থাকে।
নিজের দুর্বলতাকেই বানিয়ে ফেলেছিলেন নিজের শক্তি
১৯৬৪ থেকে শুরু করে ১৯৭৯ পর্যন্ত ভারতকের বেশকিছু জয় আর হারের অংশ ছিলেন চন্দ্রশেখর। তিনি কখনও নিজের দুর্বলতাকে নিজের রাস্তায় আসতে দেননি আর দলের হয়ে ম্যাচ জেতানো প্রদর্শন করতে থাকেন। ভগবত চন্দ্রশেখর ৫-৬ বছর বয়সে জানা যায় যে তার পোলিও রয়েছে। সেই সময় তার হাত একদমই কাজ করত না, কিন্তু ১০ বছর বয়সের পর তার হাতে কিছুটা উন্নতি হয় কিন্তু তা ১০০ শতাংশ ঠিক হয়নি।সেই সময় নিজের দুর্বলতাকেই তিনি নিজের সবচেয়ে বড়ো শক্তি বানিয়ে ফেলেন। হাত পাতলা হওয়ার কারণে তিনি সেই এই দুর্বলতাকে বল বেশি টার্ন করার কাজে লাগিয়ে ফেলেন। তিনি বেশিরভাগ লেগ স্পিন বোলিং করতেন আর সেই সময় তার দ্রুতগতির গুগলি কোনো ব্যাটসম্যানই খেলতে পারতেন না।
উইজডেন ক্রিকেট অফ দ্য ইয়ার সম্মানে হয়েছেন সম্মানিত
২১ জানুয়ারি ১৯৬৪ তে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি নিজের টেস্ট অভিষেক করেন। তবে চন্দ্রশেখর নিজের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে মাত্র একটিই ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন আর সেটাও তিনি খেলেন ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
চন্দ্রশেখর নিজের টেস্ট কেরিয়ারে খেলা ৫৮টি টেস্ট ম্যাচে ২৪২টি উইকেট নেন, আর মধ্যে তার সর্বোচ্চ বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ৭৯ রান দিয়ে ৮ উইকেট। ওয়ানডেতে তিনি মাত্র ৩টি উইকেট নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে চন্দ্রশেখরকে উইজডেন ক্রিকেট অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত করা হয়।
যখন ওভালে ইংলিশদের দেখিয়েছিলেন দিনের বেলা তারা
মাত্র ১৯ বছর বয়সেই চন্দ্রশেখর ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন আর ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে ওয়েস্টইন্ডিজ পর্যন্ত সমস্ত বড়ো দলের বিরুদ্ধেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন। মাঝে এমনও হয় যে তার গাড়ির দুর্ঘটনার কারণে তাকে দলের বাইরেও থাকতে হয়।
১৯৭১ এ তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দলে ফিরে আসেন আর ওভালের মাঠে খেলা হওয়া ম্যাচে তিনি ৩৮ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন, আর পুরো ইংলিশ দলকে তিনি ১০১ রানে অলআউট করে দেন। ভার্ত এই ম্যাচে জয়লাভ করে।
অস্ট্রেলিয়া উপহার দিয়েছিল ছিদ্রওয়ালা ব্যাট
চন্দ্রশেখর যতই একজন বিশ্বস্তরীয় স্পিনার থাকুন না কেনো উল্টোদিকে তিনি একজন ভীষণই খারাপ ব্যটসম্যান ছিলেন। ভারতের কাছে সেই সময় ছয় নম্বরের পর ব্যাটসম্যান হিসেবে স্রেফ বোলাররাই থাকতেন যাদের মধ্যে ব্যাটিংয়ের ক্ষমতা ছিল না। ১৯৭৭-৭৮এ তিনি অস্ট্রেলিয়া সফরে যান যেখানে সিরিজে তিনি ৪ বার শূন্য রানে আউট হন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার দল তাকে একটি ব্যাট উপহার দেয় যার মাঝে একটা ছিদ্র ছিল। নিজের টেস্ট কেরিয়ারে তিনি মোট ১৬৭ রান করেন যার মধ্যে তিনি মোট ২৩ বার শূন্য রানে আউট হন।