বছর দশেক আগে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে শেষবার কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতাতে সাফল্য পেয়েছিলো ভারতীয় দল। এরপর ধোনি সরে গিয়ে অধিনায়ক হয়েছেন বিরাট কোহলি। বড় মঞ্চে সাফল্য না আসায় তাঁকেও সরিয়ে দিয়েছে BCCI। নেতার আসনে বসানো হয়েছে রোহিত শর্মাকে। তবুও আসে নি ট্রফি। রোহিতের (Rohit Sharma) অধিনায়কত্বে গত এক-দেড় বছরে অন্ধকারেই গাঢ় হয়েছে বরং। ২০২২-এর এশিয়া কাপ, টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিলো। ২০২৩-এ এসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হারতে হলো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে আয়োজিত ম্যাচে আগাগোড়া দাপট বজায় রাখলো প্যাট কামিন্সের দলই। ফের একবার চাপের মুখে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়লো ভারত। বিরাট কোহলি (Virat Kohli), শুভমান গিল (Shubman Gill), রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), রবীন্দ্র জাদেজাদের (Ravindra Jadeja) মত এক ঝাঁক তারকা রয়েছেন ‘টিম ইন্ডিয়া’তে। তবুও ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে লজ্জার হারই জুটলো ভারতের কপালে। এই বছরে রয়েছে এশিয়া কাপ, একদিনের বিশ্বকাপ। সেখানেও খেতাব জয়ের ব্যাপারে এখুনি আশাবাদী হতে পারছেন না সমর্থকেরা।
ভারতীয় দলের লাগাতার ব্যর্থতার জন্য প্রশাসনিক অযোগ্যতাকে দায়ী করছেন অনেকে। বর্তমানে ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য রজার বিনি (Roger Binny)। তবে সচিব পদে থাকা জয় শাহকেই (Jay Shah) দেখা যায় পাদপ্রদীপের আলোয়। যাবতীয় ঘোষণা, সিদ্ধান্তগ্রহণে তাঁর ভূমিকাই অধিক থাকে বলে মত ক্রিকেটবোদ্ধাদের। প্রথমে গুজরাত ক্রিকেট সংস্থায় উচ্চপদে আসীন ছিলেন জয় শাহ। পরে যোগ দেন বিসিসিআই’তে। প্রথা ভেঙে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে সচিব হিসেবে দ্বিতীয় টার্ম আদায় করে নিয়েছেন৷ প্রশাসনের অংশ হলেও জয় শাহ’র (Jay Shah) ক্রিকেটের হাতেকলমে অভিজ্ঞতা নেই। ফলে ক্রিকেটারদের সুবিধা-অসুবিধা,চাহিদা বুঝতে তিনি সমস্যায় পড়তে বাধ্য। যা আদপে ক্ষতিই করছে ভারতীয় ক্রিকেটের। এছাড়া তাঁর আমলে আইপিএলের গুরুত্ব বেড়েছে অনেকখানি। বেড়েছে ম্যাচ, দলের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক আঙিনায় ভারতের লাগাতার খারাপ প্রদর্শনের যা অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। লম্বা সময় পদে থেকেও দলকে সাফল্যের দিশা দেখাতে না পারার জন্য শাহকে ছেঁটে ফেলতে পারে বোর্ড। শূন্য আসনে বসতে পারেন স্টুয়ার্ট বিনি (Stuart Binny)।
Read More: ঘরোয়া ক্রিকেটে চূড়ান্ত সফল হয়েও টিম ইন্ডিয়াতে কেন ব্রাত্য সরফরাজ খান ? সামনে এলো আসল কারণ !!
পিতা-পুত্রের জুটি দেখা যাবে BCCI-তে-
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে রজার বিনির পুত্র স্টুয়ার্ট বিনি (Stuart Binny) ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই-এর আগামী সচিব পদে বসতে পারেন। জয় শাহের জমানায় যে ভুলভ্রান্তি হয়েছিলো বিসিসিআই-এর, সেগুলিকে মেরামত করাই তাঁর প্রথম লক্ষ্য হতে চলেছে। শাহ (Jay Shah) জমানায় বারবার ভারতের দল নির্বাচন এসেছে আতসকাঁচের নীচে। গত বছরের টি-২০ বিশ্বকাপ হোক বা সদ্যসমাপ্ত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনাল-সঠিক টিম কম্বিনেশন বাছার ভুল বারবার ডুবিয়েছে দলকে। সেই বিষয়ে নজর দিতে পারেন তিনি। টেস্ট বা একদিনের দলে অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় আইপিএলের পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতে বহু খেলোয়াড়কে সুযোগ পেতে। সরফরাজ খান (Sarfaraz Khan), অভিমণ্যু ঈশ্বরণের (Abhimanyu Easwaran) মত ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেটে-রঞ্জি, ইরানী, দলীপ ট্রফির মত প্রতিযোগিতায় প্রচুর রান করেও থেকে যান ব্রাত্য। বিনি বোর্ডের প্রশাসনের অংশ হলে দূর হতে পারে এই অব্যবস্থা। যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হতে পারে ঘরোয়া ক্রিকেটকে। গুরুত্ব কমতে পারে আইপিএল-এর।
জয় শাহের (Jay Shah) বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি সবচেয়ে বেশী ওঠে তা হলো তাঁর পেশাদারী ক্রিকেটের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা। যা ভারতীয় ক্রিকেটকে বেশ কয়েকধাপ পিছনে ঠেলে দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এই অভিযোগ করা যাবে না স্টুয়ার্ট বিনির (Stuart Binny) বিরুদ্ধে। ভারতের হয়ে ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই খেলেছেন তিনি। অংশ নিয়েছেন ৬টি টেস্ট, ১৪টি একদিনের ম্যাচ এবং ৩টি টি-২০ ম্যাচে। দীর্ঘ ক্রিকেট কেরিয়ারে ৯৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেছেন তিনি। ঘরোয়া একদিনের ম্যাচ খেলেছেন ১০০টি। এছাড়াও ১৫০টি টি-২০ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই ডান-হাতি অলরাউন্ডারের। বাইশ গজের অভিজ্ঞতা তাঁকে ক্রিকেটারদের ভালো-মন্দ, চাহিদা বুঝতে সাহায্য করবে, যা আদপে টিম ইন্ডিয়ার সাফল্য লাভের পথকে সহজ করে দিতে পারে।