ভারত আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক অনস্বীকার্য শক্তি। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সমৃদ্ধ ক্রিকেট লিগ – ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (IPL) এই দেশেই আয়োজিত হয়। বিগত কয়েক বছরে বাঁকি ক্রিকেট বোর্ডের থেকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) সবথেকে ধনী ও ক্ষমতাবান ক্রিকেট বোর্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু দেশের ক্রিকেটব্যবস্থাকে ঘিরে যে সব সাফল্যের গল্প রয়েছে, তার পেছনেই লুকিয়ে আছে এমন এক অন্ধকার দিক – দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক এক ভয়াবহ খবর প্রকাশ্যে এসেছে, পুদুচেরিতে দীর্ঘদিন ধরেই জাল নথি, দুর্নীতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বাইরের রাজ্যের খেলোয়াড়দের স্থানীয় হিসেবে দেখিয়ে দলে অন্তর্ভুক্ত করার এক অভিযোগ উঠেছে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-এর নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ক্রিকেটারকে অন্য রাজ্যের হয়ে খেলতে হলে সেখানে কমপক্ষে এক বছর তাঁকে বসবাস, চাকরি বা পড়াশোনা করার প্রমাণ দিতে হয়। কিন্তু পুদুচেরির বেশ কিছু বেসরকারি ক্রিকেট একাডেমি পুরনো তারিখের ভর্তির কাগজ, ভুয়া ঠিকানার আধার কার্ড, এমনকি জাল কর্মসংস্থানের নথি তৈরির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে অবৈধভাবে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এমনকি, এমন খেলোয়াড়দের থেকে লক্ষাধিক টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের দাবি, উত্তর ভারতের অনেক তরুণ ক্রিকেটার মোটা টাকা প্রদান করে পুদুচেরির হয়ে ম্যাচ খেলেছেন এমনকি তাদের লিগে নামতে দেখা গিয়েছে। পাশাপশি, একাধিক রাজ্যের ১৭ জন খেলোয়াড়ের আধার কার্ডে একই ঠিকানা দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি এড়াতে ব্যার্থ BCCI

২০১৮ সাল থেকে চলে আসছে এই দুর্নীতি। সরসময় প্রথম পুদুচেরি বিসিসিআই-এর পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছিল এবং বিশেষ অনুমতিতে বাইরের খেলোয়াড়দের দ্রুত নিবন্ধনের সুযোগ তৈরি হয়। যদিও পরে আপত্তির মুখে সেই ছাড় প্রত্যাহার করা হয়, তবুও জাল নথির মাধ্যমে খেলোয়াড় নেওয়ার ঘটনা বন্ধ হয়নি পুদুচেরি ক্রিকেট বোর্ডের উপর। এরপর, ২০১৯ সালে বিসিসিআইও এমন নকল ভর্তি-প্রমাণপত্র ব্যবহারকারী কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিষিদ্ধ করে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে চলতি মরসুমের রঞ্জি ট্রফির প্রথম পাঁচটি ম্যাচে পুদুচেরির একটিও জন্মসূত্রে স্থানীয় খেলোয়াড় ছিল না। গত চার বছরে ২৯টি ম্যাচে মাত্র পাঁচজন স্থানীয় খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পুদুচেরির উদীয়মান ক্রিকেটাররা।
নিয়মমাফিক দলে সর্বোচ্চ তিনজন বহিরাগত থাকতে পারলেও, বেশিরভাগ ম্যাচেই ভিনদেশের খেলোয়াড়দের দেখতে পাওয়া গিয়েছে এমনকি অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েও ১১ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৯ জন খেলোয়াড় ছিল অস্থায়ী বাসিন্দা যার ফলে সমস্যায় পড়েছে স্থানীয় ক্রিকেটাররা। ঘরোয়া ক্রিকেট উন্নত করার জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে টি-টোয়েন্টি লীগ ও শুরু করা হয়েছে যার ফলে ক্রিকেটারদের বেশ উন্নতি দেখা গিয়েছে, পুদুচেরি প্রিমিয়ার লিগে বাইরের খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করায় কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক এক ঘটনার সময় তিনজন তরুণ খেলোয়াড় কোচ এস. ভেঙ্কটরামণের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার খবরও উঠে এসেছে। যদিও এই সমস্ত নথি খুঁটিয়ে দেখার দায়িত্ব ছিল বিসিসিআইয়ের তবে সেই কাজ তারা করেনি বলেই বড় অভিযোগ উঠেছে।