BCCI: ভারতীয় ক্রিকেটে সাধারণত কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্পর্ক সবসময়ই ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধার। গ্যারি কার্স্টেন থেকে শুরু করে রবি শাস্ত্রী, রাহুল দ্রাবিড়দের মতন তারকাদের সঙ্গে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সম্পর্ক বেশ ভালো। তবে, বর্তমানে গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে বেশ কিছু কথা ড্রেসিং রুমে বাইরে প্রকাশ্যে আসছে। ভারত যখন শেষবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল তখন ড্রেসিং রুমের কথা বাইরে বের হচ্ছে বলে বেশ খবর সামনে উঠেছিল। ভারতীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রধান কোচদের প্রায়শই ভালো সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায়। একসময় গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গে ভারতীয় সিনিয়র খেলোয়াড় – শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, বীরেন্দ্র সেহবাগদের মতন খেলোয়াড়দের মন কষাকষি চলছিল। সম্প্রতি রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) থেকে ক্যাপ্টেনসি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যার পরেই রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে বেশ প্রশ্ন উঠেছিল। আর তাঁর জন্য গম্ভীরকেই (Gautam Gambhir) দায়ী করা হয়েছে। বর্তমান সময়ের হেড কোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে সম্পর্কের টানা পোড়েনের গল্প শোনা গেলেও আপাতত রোহিত ও বিরাটদের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালোই রেখেছেন তিনি।
কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে ঘটলো সম্পর্কের ফাটল

প্রত্যেক ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের সঙ্গে দুর্দান্ত সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছেন। কিন্তু ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন এক ঘটনাও ঘটেছিল, যখন একজন কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত বোর্ডকে তাকে সরাতে বাধ্য হতে হয়। এই ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৭ সালে, ভারতের শ্রীলঙ্কা সফরের সময়। সেই সময় দলের কোচ ছিলেন ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মদন লাল। সফরের মাঝেই তিনি একটি সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দেন, যেখানে তিনি দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়কে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। বিসিসিআইয়ের (BCCI) প্রাক্তন কর্মকর্তা রত্নাকর শেঠি তার আত্মজীবনী “অন বোর্ড – মাই ইয়ার্স ইন বিসিসিআই”-এ এই ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। সেই বই অনুসারে, মদন লাল এক সাক্ষাৎকারে অজয় জাদেজা, রবিন সিং, সাবা করিম এবং অনিল কুম্বলে-র পারফরম্যান্স নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেছিলেন।
Read More: ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মাঝেই ঘটে গেল অঘটন, প্রাণ হারালেন বছর ১৭’এর তরুণ ক্রিকেটার !!
তিনি বলেন, অজয় জাদেজাকে বুঝতে হবে তিনি ব্যাটসম্যান না বোলার — কারণ ধারাবাহিকতা ছাড়া দলে টিকে থাকা সম্ভব নয়। রবিন সিং সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি পরিশ্রমী হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে “অলরাউন্ডার” হিসেবে যোগ্য নন। সাবা করিমকে তিনি “গড়পড়তা উইকেটকিপার” বলে সমালোচনা করেন, যিনি ব্যাটে জয় এনে দিতে পারেন না। এমনকি ভারতের প্রধান স্পিনার অনিল কুম্বলেকেও ছাড়েননি — বলেন, কুম্বলের উচিত টার্ন নয়, বরং লাইন ও লেন্থে মন দেওয়া। সাক্ষাৎকারের শেষে মদন লাল বলেন, “আমি জানি আমরা জিতছি না, কিন্তু আমি একা কী করতে পারি?” – এই বক্তব্যই যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই ভারতীয় ড্রেসিংরুমে অশান্তি শুরু হয়। খেলোয়াড়রা কোচের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়, পরিবেশ হয়ে ওঠে ঠান্ডা ও টানটান।
প্রধান কোচের বদলি করেছিল BCCI

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, এক ম্যাচে মদন লালের সমালোচিত এক খেলোয়াড় সেঞ্চুরি করার পর ব্যাট তুলে মিডিয়া বক্সের দিকে অশোভন ভঙ্গি করেন, যা স্পষ্টতই কোচের প্রতি বার্তা হিসেবে দেখা হয়। শেঠির বইয়ে খেলোয়াড়ের নাম উল্লেখ করা না হলেও, ঐ ম্যাচে অজয় জাদেজা ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন দু’জনেই সেঞ্চুরি করেছিলেন। ঘটনা দ্রুতই বিসিসিআইয়ের কানে পৌঁছায়, এবং বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। অবশেষে, দলের ভিতরে তৈরি হওয়া এই তীব্র অস্থিরতার জেরে মদন লালকে প্রধান কোচের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, আর তার স্থলাভিষিক্ত হন অংশুমান গায়কোয়াড়। মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় মদন লালের কোচিং অধ্যায় – যা আজও ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।


