ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের হলোটা কি? ক্রিকেট ভারতের প্রিয় খেলা। যখনই খেলা হয় মাঠ ভরাতে দেখা যায় হাজার হাজার সমর্থককে। ক্রিকেটারদের প্রায় দেবতাজ্ঞানে পূজা করা হয় দেশের প্রতিটি কোণে। তবুও স্পন্সর তিকিয়ে রাখতে নাকি হিমশিম খাচ্ছে BCCI? ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের বিশ্বে সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা, এ ক্রিকেট অনুরাগী মাত্রেই জানে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আর্থিক দিক থেকে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে BCCI-কে। এই খবরে আপাতত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আগেই ঘরোয়া সিরিজের টাইটেল স্পন্সর থাকার চুক্তি ত্যাগ করে বেরিয়ে গিয়েছিলো পেটিএম। বদলে মাস্টারকার্ডের সাথে নয়া চুক্তি সই করতে হয়েছে বোর্ডকে। কিছুদিন আগেই জার্সি স্পন্সরকারীর চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছে MPL স্পোর্টস। তড়িঘড়ি আনা হয়েছে ‘কিলার’ কোম্পানিকে। এবার বিদায় নিতে চেয়ে পত্রবোমা পাঠালো বাইজুস’ও। ভারতীয় দলের জার্সির সামনে থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিতে চায় বাইজু রবিন্দ্রণ প্রতিষ্ঠিত এই এড-টেক সংস্থাটি। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত জুটেছে সম্প্রচারকারী সংস্থার নয়া দাবীও। সব মিলিয়ে ঘোর সমস্যায় রজার বিনি (Roger Binny), জয় শাহেরা (Jay Shah)।
বেরিয়ে যেতে চাইছে বাইজুস, ক্ষতির মুখে BCCI-

এর আগে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছিলো যে, “২০২২ এর ৪ঠা নভেম্বর বিসিসিআই বাইজুসের তরফ থেকে একটি ইমেল পেয়েছে যেখানে জানানো হয়েছে যে টি-২০ বিশ্বকাপ মিটলেই যেন দুই পক্ষের চুক্তি রদ করে দেওয়া হয়। বাইজুসের সাথে আলোচনার পর আমরা তাদের অন্তত আগামী ২০২৩ এর ৩১ মার্চ অব্দি এই পার্টনারশিপ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছি।” তবে এখন শোনা যাচ্ছে মার্চ নয়, এখনই চুক্তি থেকে মুক্তি চাইছে বাইজুস। চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসতে মরিয়া বাইজুস (BYJU’S) ভারতীয় বোর্ডকে অনুরোধ করেছে যে চুক্তি ভাঙার আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদের ১৪০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ভাঙিয়ে নিক বোর্ড। ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা BCCI-এর সাথে প্রাথমিকভাবে ২০২২ সালের মার্চ অব্দি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলো বাইজুস। মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থা ওপো’কে (OPPO) সরিয়ে বাইজুসের লোগো জায়গা করে নিয়েছিলো বিরাট (Virat Kohli), রোহিত (Rohit Sharma), স্মৃতি মান্ধানা (Smriti Mandhana), হরমনপ্রীতদের (Harmanpreet Kaur) জার্সির সামনে। ওপো’র তুলনায় প্রতি ম্যাচে প্রায় ১০% বেশী অর্থ ভারতীয় বোর্ডকে দেওয়ার অঙ্গীকার করে বাইজুস। তারপর এড-টেক কোম্পানিটি আরও একবছর চুক্তি বাড়ায় BCCI-সঙ্গে। নয়া চুক্তিতে তারা ২০২৩ এর শেষ অব্দি ভারতের জার্সি স্পন্সর হিসেবে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। নতুন চুক্তিটির আর্থিক মূল্য প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের। দুই বছরের Hypergrowth এর পর এখন লোকসানের মুখে কোম্পানিটি। তাই দ্রুত চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই তাদের।
সম্প্রচারকারী সংস্থাও তুলছে নয়া দাবী-

গত বছরই আইপিএলের মিডিয়া রাইট নিলামে হইচই ফেলে দিয়েছিলো ভারতীয় বোর্ড। ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের টিভি রাইটস এবং স্ট্রিমিং রাইটস বিক্রি করেছিলো ৪৮৩৯০ কোটি টাকায়। স্টার ইন্ডিয়া (Star India) আরও পাঁচ বছর টিভি সম্প্রচার স্বত্ব ২৩৫৭৫ কোটি টাকায় নিজেদের হাতে রেখেছিলো। আর তাদের টেক্কা দিয়ে ভায়াকম১৮ (Viacom18) সংস্থা ২৫৭৫৮ কোটি টাকায় জিতে নিয়েছিলো অনলাইন স্ট্রিমিং স্বত্ব। এক বছরের মাথায় কি এমন হলো যে ক্রিকেটে অর্থের টান পড়ছে বারবার? পরপর স্পন্সর হাতছাড়া হচ্ছে ভারতে? চলতি শ্রীলঙ্কা সিরিজে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতের ঘরোয়া সিরিজের সম্প্রচারকারী সংস্থা স্টার ইন্ডিয়া। টিভি এবং অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ফাঁকা পড়ে রয়েছে অসংখ্য বিজ্ঞাপন স্লট। কমেছে দর্শক সংখ্যাও। অতিরিক্ত ক্রিকেট নাকি ভারতীয় দলের সাম্প্রতিক খারাপ ফর্ম? ভারতের জনতার ক্রিকেটবিমুখ হওয়ার কারণ সন্ধানে থমকাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্ষতির ভার সইতে না পেরে স্টার ইন্ডিয়াও আর্জি জানিয়েছে BCCI-এর কাছে। ভারতীয় বোর্ডের সাথে তাঁদের চুক্তিতে ১৩০ কোটি টাকার বিশাল ছাড় চাইছে তারা। বোর্ড এই ছাড় মঞ্জুর করে নাকি চুক্তি ভেঙে বেরোনোর কথা ভাবে স্টার (Star India), সেইদিকেও তাকিয়ে কৌতূহলী ক্রিকেট জনতা।
হাল ধরতে জরুরী বৈঠকে BCCI-

প্রথপমে পেটিএম, তারপর MPL, বাইজুস এবং এখন স্টার, একের পর এক চুক্তি জটে জেরবার ভারতীয় বোর্ডের সঙ্কট কাটাতে নড়েচড়ে বসতেই হয়েছে কর্মকর্তাদের। সূত্রের খবর আজ BCCI এর এপেক্স কাউন্সিলের এক জরুরী বৈঠক বসে। বাইজুস পরবর্তী স্পন্সর নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে তেমন স্টারের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে কি করা যায় তাও উঠে এসেছে আলচনায়। নাম গোপন রাখার শর্তে ভারতীয় বোর্ডের এক উচ্চপদস্থ কর্তা সংবাদসংস্থা PTI-কে জানিয়েছেন যে, “বৈঠকে কেবলমাত্র বাইজুস এবং স্টার ইন্ডিয়ার বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা মিটতে এক ঘন্টারও বেশী সময় লেগেছে। ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর সাথে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার জড়িয়ে রয়েছে, আলোচনা হতে সময় তো লাগবেই।”