ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। যে কারণে আইসিসিতে ভারতের প্রভাব সবথেকে বেশি বললেও ভুল হবে না। ভারত সবথেকে ধনী বোর্ড হওয়ার সাথে সাথে বিসিসিআই খেলোয়াড়দের জন্য প্রচুর পরিমানে অর্থ প্রদান করে যা তাদের ভরণ পোষণের পরেও বেশি থেকে যায়। বিসিসিআই খেলোয়াড়দের এতটাই অর্থ প্রদান করে যে তাদেরকে বাইরের কোনো লীগ খেলতে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি, ভারতের মাটিতে সবথেকে বড় ক্রিকেট লীগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আসর বসে। আইসিসির মনসদেও বিসিসিআইয়ের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। বিসিসিআইয়ের অনুরোধে আইসিসি কোনো সিদ্ধান্ত বদলাতে বেশি সময় নেয় না।
আইসিসির বেশিরভাগ ইনকাম ভারতের ম্যাচ থেকে এসে থাকে তাই বিসিসিআইকে নেটিজেনরা আইসিসির থেকেও বড় বলে মনে করেন। শেষ ৫ বছরে বিসিসিআই প্রচুর লাভ করেছে। BCCI-এর মোট সম্পদের কথা বলতে গেলে, বিসিসিআই-এর মোট সম্পদের পরিমান ২০,৬৮৬ কোটি টাকা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আপাতত বিশ্বের সবথেকে ধনী বোর্ড। বিসিসিআইয়ের আইয়ের মধ্যে সবথেকে বেশি ভূমিকা রয়েছে আইসিসির রাজস্ব ভাগ ও স্পন্সরশিপ থেকে। ২০১৯ সালে BCCI-এর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬০৫৯ কোটি টাকা, মাত্র ৫ বছরের মধ্যে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় তিন গুণ অর্থাৎ ২০,৬৮৬ কোটি টাকা।
রাজস্ব ভাগ আইসিসি থেকে পায় BCCI

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আইসিসি (ICC) দ্বারা পরিচালিত হয়। বিসিসিআই আইসিসির অধীনে থাকার কারণে বিসিসিআই আইসিসির নিয়ম মেনে চলে। আইসিসি আগে ভারতকে লাভের আয়ের ২০ শতাংশ বিসিসিআইকে দিত। কিন্তু যখন সৌরভ গাঙ্গুলি (Sourav Ganguly) বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং সচিব ছিলেন জয় শাহ তখন বিসিসিআই আইসিসির কাছে রাজস্বের একটি মোটা অংশের দাবি জানায়। আসলে, ভারত যখন আইসিসি ইভেন্ট খেলে তখন বাঁকি দেশগুলোর তুলনায় ভারতের ম্যাচে বেশি ভিড় জমে। আর বিসিসিআইয়ের দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করে আইসিসি। পরে বিসিসিআইকে আইসিসির মুনাফা রাজস্বের ৩৮.৫ শতাংশ অংশীদার করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, ২০২৪- ২০২৭ সাল পর্যন্ত আইসিসির থেকে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব হিসাবে পাবে বিসিসিআই।
Read Also: নেতার আসনে ক্ষণস্থায়ী শ্রেয়স আইয়ার, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে KL রাহুল সামলাবেন দায়িত্ব !!
আইপিএল থেকে আয়

বিসিসিআই-এর (BCCI) আয়ের একটা বড় অংশ আসে আইপিএলের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে আইপিএল জনপ্রিয়তা লাভ করার পর থেকে আইপিএল থেকে মোটা অংকের কামাই করে বিসিসিআই। বিসিসিআই আইপিএলের টাইটেল স্পনসর, ব্রেক স্পনসর, ফ্রাঞ্চাইজির লাভের ভাগ, বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করে থাকে। ২০২৩- ২০২৭ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য আইপিএলের স্বত্ব বিসিসিআই ৪৮,৩৯০ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে। বিসিসিআইয়ের টাইটেল স্পন্সর হিসাবে ২০২৪-২০২৮ সালের মধ্যে টাটা গ্রপকে মনোনীত করা হয়েছে। টাইটেল স্পন্সর থেকে বিসিসিআই প্রায় ২৫০০ কোটি লাভ করবে। আইপিএলে যে ১০টি ফ্রাঞ্চাইজি রয়েছে সেখান থেকে লাভের ভাগ পেয়ে থাকার বিসিসিআই। ২০২২ সালে আইপিএলে দুটি নতুন ফ্রাঞ্চাইজি – লখনৌ সুপাট জায়ান্টস ও গুজরাট জায়ান্টস যুক্ত হয়েছিল, যেখান থেকেও রাজস্ব পেয়েছিল বিসিসিআই। পাশাপাশি, স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বিসিসিআই-এর আয়ের অর্ধেক অংশ রাখার পর, বাঁকি টাকা সমস্ত ফ্রাঞ্চাইজির মধ্যে বিতরণ করে দেয়।
জার্সি স্পনসরশিপ থেকে বিসিসিআইয়ের আয়

২০২৩ সালে, বিসিসিআই (BCCI) অনলাইন বেটিং সংস্থা ড্রিম-১১ এর সাথে জার্সির স্পন্সরশিপের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তিটি ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত চলার কথা ছিল, তবে কয়েক দিন আগে সরকার বেটিং সংস্থা গুলিকে ব্যান করে দেওয়ার পর সেই চুক্তি আপাতত ভেঙে গিয়েছে। ড্রিম ইলেভেন বিসিসিআইয়ের সাথে বার্ষিক ৩৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। আসন্ন এশিয়া কাপ বিনা কোনো জার্সি স্পন্সরশিপে খেলবে ভারত।
স্ট্রিমিং স্বত্ব থেকে আসা উপার্জন
এখন খেলার মজা নিতে মাঠে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মোবাইল স্ক্রিনে সবার হাতে হাতে এখন লাইভ সম্প্রচার দেখতে পাওয়া যায়। ভারত ঘরের মাঠে যে সকল ম্যাচগুলো খেলবে তার সম্প্রচার করবে জিও হটস্টার। ২০২৩ সালের পর থেকে জিও সিনেমাতে সম্প্রচারিত হতো হোম ম্যাচ গুলো। তবে, জিও এবং হটস্টার একীভূত হওয়ার ফলে এখন জিও হটস্টারে সমস্ত হোম ম্যাচ দেখতে পাওয়া যায়। জিও সিনেমার পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি ম্যাচের জন্য সংস্থাকে বিসিসিআইকে (BCCI) ৬৭.৮ কোটি টাকা দিয়ে থাকে।