দেখতে দেখতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার দশক কাটিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। টেস্ট স্বীকৃতি পেয়েছে আড়াই দশক আগে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই তাদের। কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনাল অবধি খেলতে পারেন নি শাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan), মাশরাফি মর্তুজা, তামিম ইকবাল’রা। এমনকি এশিয়া কাপ অবধি কখনও জেতে নি বাংলাদেশ। ডাকনাম টাইগার্স হলেও বাইশ গজে অধিকাংশ সময় তাদের দেখা গিয়েছে কাগুজে বাঘ হিসেবে। তবে দীর্ঘদিনের ব্যর্থতা কাটিয়ে আগামীতে যে সাফল্যের সরণিতে হাঁটলেও হাঁটতে পারে পদ্মাপারের দেশ তার আভাস মিলেছে গত মার্চের একটি স্কুল স্তরের খেলায়। ওয়ান ডে ম্যাচে ৬৬৯ রানের জুটি গড়ে সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নিলেন দুই কিশোর ব্যাটার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড স্বীকৃত টুর্নামেন্টে তৈরি হলো নতুন ইতিহাস।
Read More: গম্ভীরের অপছন্দের তালিকায় এই ক্রিকেটার, ফর্মে থাকা সত্ত্বেও পাচ্ছেন না সুযোগ !!
বাংলাদেশে তৈরি হলো ইতিহাস-

বাংলাদেশের দশম জাতীয় স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলো ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই ম্যাচেই রেকর্ড বইতে জায়গা করে নিলেন ক্যামব্রিয়ান স্কুলের দুই কিশোর শিক্ষার্থী মুস্তাকিম হাওলাদার (Mustakim Howladar) ও সোয়াদ পারভেজ। ওপেন করতে নেমে মাত্র ১৭০ বল খেলে মুস্তাকিম করেন ৪০৪*। মারেন ৫০ টি বাউন্ডারি ও ২২টি ছক্কা। বাংলাদেশে যে কোনো পর্যায়ে একদিনের ক্রিকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস, নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। পিছিয়ে ছিলেন না অধিনায়ক সোয়াদ’ও (Soad Parvez)। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১২৪ বলে ৩২টি বাউন্ডারি ও ১৩টি ছক্কার সাহায্যে করেন ২৫৬। ২০৪.৬৫ স্ট্রাইক রেট ছিলো তাঁর। তৃতীয় উইকেটের জুটিতে মুস্তাকিমের সাথে মিলে ৬৯৯ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন তিনি। তাঁদের সৌজন্যে ৭৭০ রান তুলে ফেলে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
পর্বতমসম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বিশেষ সুবিধা করতে পারে নি প্রতিপক্ষ সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল। মীরপুরে মাত্র ৩২ রানেই অল-আউট হয়ে যায় তারা। ১১.৪ ওভারেই শেষ হয়ে যায় ইনিংস। ব্যাটিং-এর পাশাপাশি বল হাতেও নজর কেড়েছেন অধিনায়ক সোয়াদ। তিনি ৪ উইকেট নিয়েছেন। মাত্র ১১ রান খরচ করে সেন্ট গ্রেগরিজের বাকি ৬ উইকেট নিয়েছেন হাসান হৃদয়। ক্যামব্রিয়ানের জয়ের পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে মুস্তাকিম (Mustakim Howladar) জানিয়েছিলেন, “আল্লাহ্ সব লিখে রাখছে। আর নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ছিলো। যখন উইকেটে আসি চেষ্টা করেছি ব্যাটের সাথে বলের সংযোগটা ভালো করতে। যখন দেখলাম ভালো লাগছে, তখন ভেবেছিলাম যে পারব আজকে।” বাইশ গজের দুনিয়ায় মুস্তাকিমের ‘আইডল’ শাকিব আল হাসান। তবে ক্যারিবিয়ানদের পাওয়ার হিটিং-ও পছন্দ তাঁর।
পারভেজ’কে ধন্যবাদ মুস্তাকিমের-

সোয়াদের সাথে দুরন্ত পার্টনারশিপ সম্পর্কেও সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন মুস্তাকিম (Mustakim Howladar)। ৪০০-র মাইলস্টোন পেরো্তে সাহায্য করার জন্য বন্ধু’কে ধন্যবাদ’ও জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’তে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী কিশোর তারকা জানিয়েছেন, “শেষ দিকে ওভার কম ছিলো। ও (সোয়াদ) আমায় স্ট্রাইক দিয়ে সাহায্য করছিলো। ও আর আমি ছোটোবেলা থেকেই একসাথে খেলি। অনেক সাহায্য করেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিলো দু’জনে মিলেই যেন শেষ করে আসতে পারি।” এই ম্যাচ ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে করাচ্ছে মুম্বইয়ের ভাণ্ডারী কাপের আর্য গুরুকুল বনাম কেসি গান্ধী স্কুল ম্যাচের কথা। আর্য গুরুকুলের তোলা ৩১-এর জবাবে সেদিন ১৪৬৫ তুলেছিলো কেসি গান্ধী স্কুল। ১০০৯ করে রেকর্ড গড়েছিলেন প্রণব ধানওয়াড়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে আর্য গুরুকুল গুটিয়ে যায় ৫২তে।