উত্তাল বাংলাদেশের ক্রিকেট। দিনকয়েক আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লীগ বিপিএল’কে (BPL) ঘিরে ঘনিয়েছিলো ম্যাচ ফিক্সিং-এর মেঘ। অজ্ঞাতপরিচয় সূত্র মারফত খবর পেয়ে টুর্নামেন্টের আটটি ম্যাচের উপর নজর রেখেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতিদমন কমিটির সদস্যরা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে যে অন্তত দশজন তারকা ক্রিকেটারের নাম রয়েছে সন্দেহের তালিকায়। এই দশ তারকার মধ্যে ছয় জন আবার বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ইতিমধ্যে। দুইজন আনক্যাপড, আর বাকি দুই জন বিদেশী ক্রিকেটার। সরকারী ভাবে এই দশটি নাম এখনও প্রকাশ করে নি বিসিবি (BCB)। তবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে তা সাফ জানিয়েছেন ক্রিকেট সংস্থার প্রধান ফারুখ আহমেদ। বিপিএল জটিলতার মধ্যেই এবার মহিলাদের ক্রিকেটেও গড়াপেটার ছায়া। পদ্মাপারে নির্বাসিত হলেন বাংলাদেশ মহিলা দলের তারকা।
Read More: “হোয়াইট ওয়াশ শুধু সময়ের অপেক্ষা…” তৃতীয় ওডিআই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৩৫৭ রানের টার্গেট দিলো ভারত, সমাজ মাধ্যমে চর্চা শুরু !!
গড়াপেটায় অভিযুক্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটার-
বাংলাদেশের জার্সিতে ২টি একদিনের ম্যাচ ও ১৩টি টি-২০ খেলেছেন সহেলি আখতার (Shohely Akhter)। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে নিয়েছেন ১১টি উইকেট। ২০২২-এর এশিয়া কাপে শেষবার দেশের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন ডান হাতি অফস্পিনার। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২০২৩-এর টি-২০ বিশ্বকাপ চলাকালীন ম্যাক্স ফিক্সিং-এর চেষ্টা করেছিলেন সহেলি, এমনটাই অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। টাইগার্সদের টি-২০ বিশ্বকাপ স্কোয়াডের অংশ ছিলেন না তিনি। কিন্তু দলের এক সদস্যের কাছে গড়াপেটার প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২০২৩-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়া বনাম বাংলাদেশ ম্যাচের দিন সহেলি ও ঐ ক্রিকেটারের মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কি কথোপকথন হয়েছিলো সেই সূত্র ধরেই তদন্ত চালিয়েছিলো আইসিসি’র দুর্নীতিদমন শাখা। ঐ ম্যাচে হিট উইকেট হওয়ার জন্য ঐ ক্রিকেটারকে ২০ লক্ষ বাংলাদেশী টাকার (প্রায় ১৬৪০০ মার্কিন ডলার) ‘অফার’ দিয়েছিলেন সহেলি (Shohely Akhter)।
বাংলাদেশ দলের যে সদস্যের কাছে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ম্যাক্স ফিক্সিং-এর প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন সহেলি (Shohely Akhter), তিনি সঙ্গে সঙ্গেই দুর্নীতিদমন শাখার (ACU) কাছে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। যাবতীয় ভয়েস নোট, মেসেজ’ও তুলে দিয়েছিলেন ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার কাছে। নিজের মোবাইল ডিভাইসে অবশ্য এই কথোপকথন মুছে দিয়েছিলেন সহেলি। গড়াপেটায় যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করেছিলেন সহেলি (Shohely Akhter)। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফিক্সিং করেন না, এক বন্ধুকে তার প্রমাণ দিতেই নাকি ঐ মেসেজগুলি পাঠিয়েছিলেন তিনি। দুর্নীতেতে জড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নাকি ছিলো না তাঁর। প্রমাণ হিসেবে ১৪ তারিখের আগের বেশ কিছু মেসেজও দুর্নীতিদমন কমিটির সদস্যদের দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মেটাডাটা খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন যে ঐ মেসেজগুলি ১৪ ফেব্রুয়ারির পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা।
বিধি ভঙ্গের দায়ে নির্বাসিত সহেলি-
লম্বা তদন্ত প্রক্রিয়ার শেষে সহেলিকে (Shohely Akhter) দোষী সাব্যস্ত করেছে আইসিসি। আইসিসি’র কোড অফ কন্ডাক্টের পাঁচটি ধারা (২.১.১, ২.১.৩, ২.১.৪, ২.৪.৪ ও ২.৪.৭) লঙ্ঘনের অপরাধে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে ৫ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছে তাঁকে। এক বিজ্ঞপ্তিতে সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা জানিয়েছে যে, “পাঁচ বছরের নির্বাসন যথাযথ ও অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মিস আখতার এই শাস্তি মেনেও নিয়েছেন”। ২০২৫-এর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সহেলির (Shohely Akhter) শাস্তির মেয়াদকাল শুরু হয়েছে। তা শেষ যখন হবে তখন তাঁর বয়স দাঁড়াবে ৪১ বছর। অর্থাৎ বাইশ গজের দুনিয়ায় বাংলাদেশের অফস্পিনারের পথচলা যে কার্যত শেষ তা বলাই যায়। ক্রিকেটের আঙিনায় ম্যাচ ফিক্সিং বা দুর্নীতির ঘটনা নতুন নয়। তবে এই প্রথম কোনো মহিলা ক্রিকেটার গড়াপেটার দায়ে হলেন নির্বাসিত।