BAN vs AFG: মীরপুরের ময়দানে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রইলো আবারও। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিশাল ব্যবধানে জিতে রেকর্ড বইতে জায়গা করে নিলো তারা। শাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা খেলেন নি। তাতেও জয় আটকালো না টাইগার্সদের। রশিদ খান, মহম্মদ নবি, গুলবদন নাইব,নবীন উল হক-বিহীন আফগানিস্তের বিরুদ্ধে সহজেই ম্যাচ পকেটে পুরে ফেললো তারা। টসে জিতে প্রথমে বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদী (Hashmatullah Shahidi)। মাত্র ৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট খুইয়েছিলো বাংলাদেশ। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি নড়েচড়ে বসেছিলো অঘটনের আশঙ্কায়। কিন্তু সেই সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় নাজমুল হোসেন শান্ত’র (Najmul Hossain Shanto) ব্যাটে। গত বছর পরপর কয়েকটি ম্যাচে ব্যর্থ হয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অশান্ত হয়ে উঠলো শান্ত’র ব্যাট। প্রথম ইনিংসে তার শতরানের সুবাদেই বড় রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে বাংলাদেশ।
ব্যাট করতে নেমে অল্প রানেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। টেস্ট ক্রিকেটে সবে পথ চলা শুরু করেছে তারা। সীমিত ওভারের খেলায় নিজেদের দিনে ‘জায়ান্ট কিলার’ হয়ে উঠলেও লাল বলের লড়াইতে এখনও অনেকটা পথ যে তাদের যাওয়া বাকি তা বোঝা গেলো বাংলাদেশ ম্যাচ থেকেই। ২৩৬ রানে পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তানকে ফলো-অন না করিয়ে ফের ব্যাট করতে নামে লিটন দাসের দল। ফের জ্বলে ওঠেন শান্ত। দুই ইনিংসেই শতরান করার কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। আফগান বোলারদের নাস্তানাবুদ করেন তিনি। শান্তর (Najmul Hossain Shanto) তালে তাল মিলিয়ে শতরান মোমিনুল হকেরও (Mominul Haq)। জোড়া শতরানে বাংলাদেশ তোলে ৪২৫ রান। বিশাল রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তাসকিন আহমেদের (Taskin Ahmed) গতির জবাব খুঁজে না পেয়ে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে আফগানিস্তানের ব্যাটিং। ব্যক্তিগত ১ রানের মাথায় ইয়ামিন আহমেদজাই যখন আউট হলেন তখন আফগানদের স্কোরবোর্ডে মাত্র ১১৫। ৫৪৬ রানে জিতে একবিংশ শতকে সবচেয়ে বেশী রানে জয়ের রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ।
Read More: Asia Cup 2023: “নিজেদের জালেই জড়িয়েছে পাকিস্তান…” এশিয়া কাপ ইস্যুতে প্রাক্তনীর নিশানায় পাক-বোর্ড !!
শান্তর ব্যাটেই গুটিয়ে গেলো আফগানিস্তান-
এক টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলো আফগানিস্তান। এর আগে সীমিত ওভারের খেলায় ‘টাইগার্স’দের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের নজির রয়েছে আফগানদের। তাই টেস্টেও চমকের আশায় ছিলেন অনেকে। তবে হতাশই হতে হলো তাঁদের। প্রথম ইনিংসে নাজমুল হোসেন শান্ত’র (Najmul Hossain Shanto) কোনো উত্তর খুঁজে পেলেন না আফগানিস্তানের বোলাররা। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শান্ত করলেন ১৪৬ রান। তার সাথে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় (Mahmudul Hasan Joy) করেন ৭৬, মুশফিকুর রহিম (Mushfuqur Rahim) করেন ৪৭। ভারতের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে সেরা খেলোয়াড় হওয়া মেহদী হাসান মিরাজ (Mehidy Hasan Miraj) করেন ৪৮ রান। ১০ উইকেটের বিনিময়ে ৩৮২ রানের মাথায় ইনিংস শেষ হয় বাংলাদেশের। জবাবে এবাদত-শরিফুল বিরুদ্ধে আফগানিস্তান গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে। ৪ উইকেট নেন এবাদত (Ebadot Hossian)। ২টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম এবং মেহদী হাসান মিরাজ।
প্রথম ইনিংসের ২৩৬ রানের লিড সঙ্গী করে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসেও রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মাহমুদুল হাসান জয় আউট হন ১৭ রান করে। প্রথম ইনিংসে ১ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো খেললেন আরেক ওপেনার জাকির হোসেন। তিনি করেন ৭১ রান। শান্ত’র ব্যাটেই স্বস্তি খুঁজে নেয় টাইগার্সরা। দ্বিতীয় ইনিংসে শান্তকে (Najmul Hossain Shanto) সাথ দেন মোমিনুল হক (Mominul Haq)। শতরান করেন তিনিও। শান্তর ১২৪ এবং আনামুলের ১২১ রানের সুবাদে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে তোলে ৪২৫ রান। জয়ের জন্য ৬৬২ রানের বিশাল লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামে আফগানিস্তান। ম্যাচ কোন দিকে গড়াচ্ছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলো শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের প্রতিটি ঘাস। তাস্কিন আহমেদের (Taskin Ahmed) ৩৭ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেটের স্পেল আফগানদের যন্ত্রণা দীর্ঘস্থায়ী করে নি। মাত্র ১১৫ রানে শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। ম্যাচে নাজমুল হাসান শান্ত দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ২৭০ রান। সেখানে আফগানিস্তানের দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট রান ২৬১। বাংলাদেশী মিডল অর্ডার ব্যাটারের থেকেই ৯ রানে পিছিয়ে তারা।
রেকর্ড বইতে নাম তুললো বাংলাদেশ-
মীরপুরের মাঠে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলো বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তারা জিতলো ৫৪৬ রানে। একবিংশ শতকে এর থেকে বেশী রানের ব্যবধানে কোনো দল টেস্ট ম্যাচ জেতে নি। কেবল একবিংশ শতকে নয়, টেস্ট ক্রিকেটের এক শতাব্দীরও বেশী প্রাচীন ইতিহাসে বাংলাদেশের জয় তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবধানে। এশীয় দেশগুলির মধ্যে এক নম্বরে বাংলাদেশই। তালিকায় তাদের আগে রয়েছে কেবল ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। ১৯২৮ সালের ৩০ নভেম্বর ব্রিসবেনের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৩৭ রানে হারিয়েছিলো ইংল্যান্ড, তালিকার প্রথমে রয়েছে তারা। আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ১৯৩৪ সালের ১৮ অগস্ট ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে ইংল্যান্ডকে তারা হারিয়েছিলো ৫৬২ রানে। ৮৯ বছর পর কোনো দল টেস্টে ৫০০ বা তার বেশী রানের ব্যবধানে জয় পেলো।