পাকিস্তান ক্রিকেটের ডামাডোল অব্যাহত। গত ২০২২-এর ডিসেম্বরে রামিজ রাজা (Ramiz Raja) বোর্ড চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরার পর থেকেই চলছে অচলাবস্থা। রামিজের পর চেয়ারম্যানের কুরসীতে বসেন নাজম শেঠি। মাসখানেক দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তাঁর আমলে এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। ভারত এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) খেলতে পড়শি দেশে না যেতে চাওয়ায় বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি অবধি দিয়েছিলেন নাজম (Najam Sethi)। শেষমেশ দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আচমকাই সরে দাঁড়ান তিনি। তখন তড়িঘড়ি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়েছিলো জাকা আশরফ’কে (Zaka Ashraf)।
এশিয়া কাপের হাইব্রিড মডেল সায় না থাকলেও বিশেষ সুরে চড়ানোর সুযোগ ছিলো না জাকা আশরাফের কাছে। তবে তাঁর আমলেও পাকিস্তানের বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। ক্রিকেটারদের ভারতে পা রাখার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল’ও। প্রশাসনিক জটিলতার ছাপ পাক দলের মাঠের পারফর্ম্যান্সেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে এরই মধ্যে। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ-দুই টুর্নামেন্টেই চূড়ান্ত হতাশ করে তারা। এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে হারের পর বিশ্বকাপেও (ICC World Cup) প্লে-অফ পর্বে পা রাখতে সক্ষন হয় নি তারা। এরপরেই পারফর্ম্যান্সে উন্নতির লক্ষ্যে একঝাঁক রদবদল করা হয় দলের অন্দরে। তিন ফর্ম্যাটেই অধিনায়কত্ব থেকে সরানো হয় বাবর আজম’কে (Babar Azam)। টেস্টে নতুন অধিনায়ক হন শান মাসুদ, টি-২০তে নেতা ঘোষিত হন শাহীন শাহ আফ্রিদি। ওডিআই অধিনায়ক নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তখনই নেওয়া হয় নি।
Read More: ক্যাপ্টেন্সির দ্বিতীয় দিনেই বোর্ডের নিয়ম ভাঙলেন শুভমান গিল, পিঠ বাঁচাতে দিতে হলো জরিমানা !!
ফের বাবরের হাতের নেতৃত্ব তুলে দিচ্ছে পাকিস্তান বোর্ড-
সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটিং অস্ত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেও নেতা হিসেবে দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেন নি বাবর আজম (Babar Azam)। তাঁর নেতৃত্বে ২০২২-এর এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup 2022) ফাইনাল থেকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ২০২৩-এর এশিয়া কাপ ও ওডিআই বিশ্বকাপেও মেলে নি কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ফলতি দেশে-বিসেশে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিলো বাবর’কে (Babar Azam)। বিশ্বকাপের (ICC World Cup 2023) পর তাঁকে সরিয়ে যখন নতুন অধিনায়কদের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন সেই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী মনে হয়েছিলো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের।
এরপর কয়েক মাস কাটতে না কাটতেই ভুল ভেঙেছে তাঁদের। শান মাসুদ (Shan Masood) ও শাহীন শাহ আফ্রিদি-অধিনায়ক হিসেবে দলের পারফর্ম্যান্স উন্নত করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন দুজনেই।ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ছিলো পাকিস্তানের। শান মাসুদের দল কোনোরকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে ৪-১ ফলে সিরিজ হেরেছে শাহীন আফ্রিদি’র (Shaheen Shah Afridi) টি-২০ নেতৃত্বাধীন দল। ব্যাটিং, বোলিং হোক বা ফিল্ডিং-তিন বিভাগেই বেশ সাধারণ মনে হয়েছে টিম পাকিস্তানকে।
সামনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাঠে ৫ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ রয়েছে পাকিস্তানের। তারপর নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড সফরে যাবে তারা। সর্বোপরি জুন মাসে রয়েছে কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপ। সেখানে গ্রুপ পর্বেই মুখোমুখি হতে হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের। জাকা আশরফ ইস্তফা দেওয়া পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নয়া চেয়ারম্যান হয়েছেন মহসীন নকভি (Mohsin Naqvi)। সূত্রের খরচ পারফর্ম্যান্স সমস্যার সমাধানের উপায় হিসেবে ফের একবার নেতৃত্বে বদল আনার কথা ভাবছেন তিনি। শান (Shan Masood), শাহীনদের হাত থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে ফের বাবরের (Babar Azam) হাতেই দেওয়া হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। কেবল টেস্ট ও টি-২০ নয়, ওডিআইতেও নেতৃত্ব ফিরে পাচ্ছেন বাবর।