Asia Cup 2023: দীর্ঘ টালবাহানার পর সবুজ সংকেত মিলেছে ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) নিয়ে। মাঠের ভারত ও পাকিস্তানের দ্বৈরথের কারণে আশঙ্কার কালো মেঘে ঢেকেছিলো এশিয়া কাপের ভবিষ্যত। একটা সময় মনে হয়েছিলো প্রতিযোগিতা বাতিল করা ছাড়া কোনো উপায় খোলা নেই এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (ACC) সামনে। পাকিস্তানকে আয়োজক হিসেবে মানতে রাজী ছিলো না বিসিসিআই। দল পাঠাতে অসম্মত হন সচিব জয় শাহ (Jay Shah)। পালটা দিয়েছিলো পাক ক্রিকেটমহলও। বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি দেয় তারা। শেষমেশ বিস্তর আলাপ আলোচনা এবং বৈঠকের পর এক হাইব্রিড মডেলে সিলমোহর দেয় এশীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। পাকিস্তানের সাথে আয়োজক হিসেবে যুক্ত হয় শ্রীলঙ্কা। ৩০ অগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে প্রতিযোগিতা। চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর অবধি। ভারত রয়েছে ‘এ’ গ্রুপে। সাথে রয়েছে নেপাল এবং পাকিস্তান।
মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইতে ভারতের অভিযান শুরুই হচ্ছে ক্রিকেটের এল-ক্লাসিকো দিয়ে। প্রথম ম্যাচেই তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। খেলা ২ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে। এশিয়া কাপের (Asia Cup) পরিসংখ্যান বলছে ১৭ সাক্ষাতের মধ্যে ৯টি জিতেছে ভারত। ৬টিতে পাকিস্তান। এবং দুটি ম্যাচে কোনো ফয়সালা হয় নি। শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটি তাদের পক্ষে গিয়েছে। আশি-নব্বইয়ের দশকে মুখোমুখি লড়াইতে পিছিয়ে থাকলেও সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে এগিয়ে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়া।
হেড টু হেড পক্ষে হলেও এইবার এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে খানিক চিন্তায় ভারতীয় দল। তাদের স্কোয়াডে চোট-আঘাতের সমস্যা রয়েছে। ঋষভ পন্থ যে খেলতে পারবেন না তা নিশ্চিত। কে এল রাহুল (KL Rahul) এবং শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer) আদৌ ফিট হবেন কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। অনেক দিন পর চোট সারিয়ে মাঠে ফেরার কথা রয়েছে জসপ্রীত বুমরাহ’র। তিনি কতদূর ছন্দে থাকবেন প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। এছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ছন্নছাড়া পারফর্ম্যান্স চিন্তায় রাখছে সমর্থকদের। অনেকেই মনে করছেন ক্যান্ডিতে ভারতীয় অশ্বমেধের ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে পারে বাবর আজমের দল।
Read More: চলতি বছর ৩বার ডোপ টেস্ট রবীন্দ্র জাদেজার, ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য !!
ভারতের চেয়ে ভালো ছন্দে রয়েছে পাকিস্তান-
২০২২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজ ২-১ ফলে হেরেছিলো টিম ইন্ডিয়া (Team India)। এরপর নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলো ভারতীয় দল। শ্রীলঙ্কাকে দেশের মাঠে ৩-০ ফলে হারিয়েছিলো রোহিত শর্মার দল। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও এসেছিলো ৩-০ জয়। টানা দুই সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে ফর্মের যে সপ্তম স্বর্গে পৌঁছেছিলো ভারত, সেখান থেকে তাদের টেনে নামিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক কামিন্সকে ছাড়াই ভারতের ঘরের মাঠে তাদের ২-১ ফলে হারায় অজিরা। এর প্রায় চার মাস পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওডিআই ক্রিকেটের আঙিনায় ফেরে ভারত। কিন্তু হোঁচট খেতে হয় সেখানেও। খাতায়কলমে অনেক পিছিয়ে থাকা উইন্ডিজের বিরুদ্ধে কেনসিংটন ওভালে একটি ম্যাচে ৬ উইকেটে হারে দল। সিরিজে আসে কষ্টার্জিত ২-১ জয়।
অন্যদিকে একদিনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের ফর্ম অপেক্ষাকৃত ভালো। গত পাঁচটি একদিনের সিরিজের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে তারা। ঘরের মাঠে গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরেছিলেন বাবর আজমরা (Babar Azam)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং নেদারল্যান্ডসের মত আইসিসি র্যাঙ্কিং-এ পিছিয়ে থাকা দেশের বিরুদ্ধে যেমন জিতেছে পাক দল, তেমন অস্ট্রেলিয়াকেও তারা ২০২১-২২ মরসুমে হারিয়েছে ২-১ ফলে। মে মাসে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ৪-১ এর মত বড় ব্যবধানে জয়ের নজিরও গড়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি (Shaheen Shah Afridi), মহম্মদ রিজওয়ানরা। ফর্মের পাশাপাশি মনস্তাত্বিক যুদ্ধেও এগিয়ে থাকবে পাকিস্তান। দিনকয়েক আগে এমার্জিং এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারত-এ’কে হারিয়েছে পাকিস্তান-এ। ২০২২-এর সিনিয়র এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরেই ছিটকে গিয়েছিলো ভারত। পূর্বের এই সকল ফলাফল চাপে রাখবে টিম ইন্ডিয়াকেই।
ফর্ম সঙ্গী পাক ক্রিকেটারদের-
বাবর (Babar Azam) বনাম বুমরাহ (Jasprit Bumrah), কোহলি বনাম শাহীন-এমন অজস্র ছোটো ছোটো প্রতিদ্বন্দ্বীতা দেখা যাবে এশিয়া কাপে (Asia Cup 2023) ভারত বনাম পাকিস্তান মহাযুদ্ধে। পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে অবশ্য দেখা যাবে ভারতের থেকে এই মুহূর্তে ধারে-ভারে খানিক এগিয়ে পাকিস্তানই। টিম ইন্ডিয়া যখন এখনও প্রথম একাদশের ভারসাম্য খুঁজছে, তখন পাকিস্তান বেশ শক্তিশালী প্রথম একাদশ খুঁজে নিয়েছে ইতিমধ্যেই। ওডিআই র্যাঙ্কিং-এ দল হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। ভারত রয়েছে আরও এক ধাপ পিছনে। পাকিস্তানের রেটিং পয়েন্টস বর্তমানে ১১৬। ভারত প্রায় ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে তাদের। মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধান দুই পড়শি দেশের মধ্যে। ১১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
ব্যক্তিগত র্যাঙ্কিং-এর ক্ষেত্রেও রমরমা এখন পাকিস্তানীদেরই। গত দুই বছরেরও বেশী সময় একদিনের ক্রিকেটে আইসিসি র্যাঙ্কিং-এ ব্যাটারদের তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন বাবর আজম (Babar Azam)। পাকিস্তান অধিনায়কের রেটিং পয়েন্ট বর্তমানে ৮৮৬। ফখর জামান (Fakhar Zaman) ৭৫৫ রেটিং পয়েন্ট সঙ্গে করে রয়েছেন তিন নম্বরে। আর তা থেকে এক ধাপ নীচে অর্থাৎ চারে রয়েছেন ইমাম-উল-হক (Imam-ul-Haq)। তাঁর সংগ্রহ ৭৪৬ রেটিং পয়েন্টস। পক্ষান্তরে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে প্রথম পাঁচে কেবল রয়েছেন শুভমান গিল (Shubman Gill)। দুই ধাপ উঠে তিনি রয়েছে পাঁচে। নয় নম্বরে অবস্থান করছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। শুভমানের রেটিং পয়েন্ট বর্তমানে ৭৪৩ এবং বিরাটের ৭০৫। বোলারদের মধ্যে অবশ্য পাল্লা ভারী ভারতের। চার ও দশ নম্বরে রয়েছেন মহম্মদ সিরাজ এবং কুলদীপ যাদব। প্রথম দশে একমাত্র পাকিস্তানের প্রতিনিধি শাহীন শাহ আফ্রিদি।