বর্তমানে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট। মাঠে, মাঠের বাইরে একের পর এক বিতর্ক এসে বাসা বাঁধছে পাক ক্রিকেটের অন্দরে। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে হার দিয়ে একটানা ব্যর্থতার পালা শুরু হয়েছে বাবর আজমদের (Babar Azam)। যত দিন গিয়েছে ঘরের মাঠে একের পর এক টেস্টে নাস্তানাবুদ হয়ে আরও চাপে পড়েছে পাক দল। ১৭ বছর পর ইংল্যান্ডে সিরিজ খেলতে গিয়ে বাবর-রিজওয়ানদের ৩-০ ফলে হোয়াইটওয়াশ করে এসেছে ইংল্যান্ড। পাকিস্তানকে গোটা সিরিজে মাথা তুলেই দাঁড়াতে দেন নি বেন স্টোকস (Ben Stokes), হ্যারি ব্রুকরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও দুই টেস্টে পাকিস্তান হার বাঁচিয়েছে মন্দ আলোর কারণে। প্রশাসনিক স্তরেও অবস্থা একইরকম সঙ্গীন। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ আগেই ছিলো, তার সাথে নানা রকম বেফাঁস মন্তব্য করে PCB-র অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন চেয়ারম্যান রামিজ রাজা। ভারত সম্পর্কে অহেতুক বিষোদগার, এশিয়া কাপ নিয়ে ভারতের সাথে কথার লড়াইতে জড়িয়ে পড়েছিলেন রামিজ (Ramiz Raja)। বাধ্য হয়েই তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে পাক বোর্ড। মসনদে ফিরেছেন নাজম শেঠি (Najam Sethi)। শোনা যাচ্ছে এশিয়া কাপ নিয়ে ভারতের সাথে বিবাদ মিটিয়ে নিতে চান তিনি। রাজী আছে ভারতের বোর্ড সচিব জয় শাহের (Jay Shah) সাথে মুখোমুখি আলোচনাতেও। মাসের পর মাস চলে আসা বাগযুদ্ধ বৈঠকের ফলে মেটে কি তা জানতে উদগ্রীব ক্রিকেটদুনিয়া।
জয় শাহ বনাম রামিজ রাজা,চললো কথার লড়াই-

২০২৩ সালের এশিয়া কাপ হওয়ার কথা পাকিস্তানে। কূটনৈতিক কারণে ওয়াঘা সীমান্তের ওপারে যাবে না ভারতীয় দল, জানিয়েছিলেন BCCI সচিব জয় শাহ (Jay Shah)। ভারতীয় বোর্ডের সচিব হওয়ার পাশাপাশি তিনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল(ACC)-র উচ্চপদে রয়েছেন। জানিয়ে দেন প্রয়োজনে নিরপেক্ষ কোনো দেশে হবে এশিয়া কাপ, কিন্তু পাকিস্তানে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এতেই চটে যান তৎকালীন PCB চেয়ারম্যান রামিজ রাজা (Ramiz Raja)। ভারতের বিরুদ্ধে তোপ দেগে জানান, “ভারতের যে একদিনের বিশ্বকাপ হওয়ার কথা আছে, পাকিস্তান যদি সেখানে না খেলে, তবে খেলা দেখবে কে? আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, যদি ভারত এখানে আসে, আমরাও যাবো বিশ্বকাপ খেলতে। যদি ওরা না আসে, তবে আমাদের ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে হবে ভারত’কে। আগ্রাসী নীতি নেওয়ার কথা ভাবছি আমরা।” এরপরেই কথার লড়াইতে জড়িয়ে পড়েন দুই দেশের আরও কয়েকজন প্রাক্তন খেলোয়াড়। ভারতীয় বোর্ডের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রজার বিনিকে (Roger Binny) এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বল ঠেলে দেন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে। জানান কেন্দ্রীয় সরকার যাওয়ার অনুমতি দিলে তবেই পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ভেবে দেখবে ভারতীয় দল। যত দিন এগিয়েছে জট কাটার বদলে আরও জটিল হয়েছে পরিস্থিতি।
আলোচনার টেবিলে ভারত-পাকিস্তান? রয়েছে সম্ভাবনা-

কিছুদিনের মধ্যেই দুবাইতে একটি টি-২০ লীগ শুরু হতে চলেছে। আয়োজক সংস্থা আমিরশাহী ক্রিকেট বোর্ড সকল ক্রিকেটখেলিয়ে দেশের প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে। জানা যাচ্ছে পাকিস্তান থেকে বোর্ড প্রধান নাজম শেঠি (Najam Sethi)এবং ভারতের তরফ থেকে সচিব জয় শাহ (Jay Shah) সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আবহেই দেখা হতে পারে যুযুধান দুই দেশের ক্রিকেট প্রশাসনের দুই শীর্ষকর্তাকে। এশিয়া কাপ নিয়ে জটিলতা বাড়াতে চাইছে না পাকিস্তান। সেই কারণেই দ্রুত সমাধান সূত্র বের করতে জয় শাহের (Jay Shah) সাথে দেখা করতে চাইতে পারেক পাক বোর্ডের প্রধান। আলোচনায় বসলেও নিরপেক্ষ মাঠের দাবী থেকে ভারত সরবে না বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। ২০২৩ সালে ভারতের মাটিতে বসবে একদিনের বিশ্বকাপের আসর। তার প্রস্তুতি হিসেবে এই বছর এশিয়া কাপও ৫০ ওভারের অর্থাৎ একদিনের ক্রিকেটের ফর্ম্যাটে হতে চলেছে। একান্তই যদি পাকিস্তানে খেলা না হয় তাহলে নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে প্রতিযোগিতা আয়োজন করার দায়িত্ব পেতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। প্রসঙ্গত এর আগে ২০২২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের আগেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিলো এশিয়া কাপ। সেখানে অবশ্য শেষ চারেই বিদায় নেয় ভারত। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ট্রফি জেতে শ্রীলঙ্কা।