Ashes 2023: চলছে ক্রিকেটের চিরন্তন প্রতিদ্বন্দ্বীতা। ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক লর্ডস মাঠে অ্যাসেজ সিরিজের (Ashes) দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের প্রথম ম্যাচে এক রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের (Pat Cummins) লড়াকু ইনিংস বৈতরণী পার করিয়ে দিয়েছিলো অজিদের। এজবাস্টনের ম্যাচের পর থেকেই ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ বা অতি আগ্রাসী টেস্ট খেলার ধরণ পড়েছে চূড়ান্ত সমালোচনার মুখে। একটি ম্যাচ হারলেও নিজেদের স্ট্র্যাটেজি পাল্টাবেন না বলেই সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছিলেন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম (Brendon McCullum) এবং অধিনায়ক বেন স্টোকস (Ben Stokes)। সেই মত লর্ডসেও ‘বাজবল’-এর স্বাক্ষর রাখতে গিয়েছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু অস্ট্রেলীয় শৌর্য্যের আঘাতে ফের বেসামাল তারা।
টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিলেন স্টোকস (Ben Stokes)। ফের শতরান করেন স্টিভ স্মিথ (Steve Smith)। তাঁর ৩২তম টেস্ট শতরানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান তোলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) খেতাবজয়ীরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে একটা সময় সুবিধাজনক জায়গাতেই ছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু পরপর উইকেট তুলে তাদের চাপে ফেলে দেন অস্ট্রেলীয় বোলাররা। ব্যাটিং-এর জন্য বিশেষ সুবিধাজনক নয় লর্ডসের পিচ। কখনও বল অনেকটা লাফিয়ে উঠছে, কখনও আবার নীচু থেকে যাচ্ছে।
একমাত্র সফল বলা চলে বেন ডাকেটকে (Ben Duckett)। ৯৮ করেন তিনি। শর্ট-বল মন্ত্রেই বাজিমাত করে ইংল্যান্ডকে ৩২৫ রানে আটকে দেয় অজিরা। উসমান খোয়াজার ৭৭ রানের সুবাদে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে তারা তোলে ২৭৯। জয়ের জন্য ৩৭১ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে চতুর্থ দিনের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। তৃতীয় আম্পায়ারের সৌজন্যে এখনও লড়াইতে টিকে ইংল্যান্ড। স্টার্কের (Mitchell Starc) হাতে ক্যাচ দিয়েও অপরাজিত রয়ে গেলেন ডাকেট (Ben Duckett)।
Read More: বিশ্বকাপের আগেই অধিনায়ক পরিবর্তন টিম ইন্ডিয়ার, এই খেলোয়াড়ের কাঁধেই উঠবে নেতৃত্বের গুরুভার !!
ক্যাচ বিতর্কের নিষ্পত্তিতে আসরে MCC-
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের বয়স তখন ২৮ ওভার ৪ বল। ক্যামেরন গ্রিনের (Cameron Green) শর্ট বল থার্ডম্যানের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন বেন ডাকেট। কিন্তু শটে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ ছিলো না তাঁর। ব্যাটের পিছন দিকে লেগে তা চলে যায় ফাইন লেগের দিকে। অনেকখানি দৌড়ে সেই বল তালুবন্দী করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক (Mitchell Starc)। ফর্মে থাকা ডাকেট’ই এখন জয় ও অস্ট্রেলিয়ার মাঝে প্রধান ব্যবধান। প্রথম ইনিংসে তিনি ৯৮ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও স্পর্শ করেছেন অর্ধ-শতক। স্বভাবতই উইকেট পেয়ে উৎসবে মাততে দেখা গিয়েছিলো ক্যামেরন গ্রিন, মিচেল স্টার্ক ও তাঁদের সতীর্থদের। তবে সবাইকে অবাক করে আম্পায়ার ডাকেটকে অপেক্ষা করতে বলেন। নো-বল কিনা তা দেখা হয় রিপ্লেতে। নির্ধারিত সীমার বাইরে যায় নি গ্রিনের পা। আবার একপ্রস্থ উৎসবে মাতে অস্ট্রেলিয়া।
তবে এই আনন্দ স্থায়ী হয় নি। এরপরেই হস্তক্ষেপ করেন তৃতীয় আম্পায়ার। তিনি ডাকেটকে (Ben Duckett) নট-আউট ঘোষণা করেন। ক্যাচ ধরার সময় স্টার্ক বল মাটিতে লাগিয়ে ফেলেছেন বলে জানানো হয়। গোটা ঘটনায় চূড়ান্ত বিরক্তি প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া দল। গ্লেন ম্যাকগ্রা (Glenn McGrath) ধারাভাষ্য দেওয়ার সময়েই বলেন, “এটা যদি আউট না হয় তাহলে ক্রিকেটের ইতিহাসে যেখানে যত ক্যাচ নেওয়া হয়েছে, একটিও আউট নয়।” বিতর্কের আবহে আসরে নামতে হয়ে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবকে। ক্রিকেটের নিয়মকানুন ঠিক করে MCC’ই।
MCC’র তরফে জানানো হয়েছে যে ক্রিকেটের নিয়মাবলীয় ৩৩.৩ ধারা ভেঙেছেন মিচেল স্টার্ক (Mitchell Starc)। সেই কারণেই আউট দেওয়া হয় নি ডাকেটকে। ধারা ৩৩.৩ অনুযায়ী ক্যাচ সম্পূর্ণ তখনই হয় তখন কোনো ক্রিকেটার বল এবং নিজের দেহের উপস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। স্টার্কের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বল ধরার পরেও তিনি অনেকখানি গড়িয়ে গিয়েছেন। এবং সেই সময় বল মাটি স্পর্শ করে। ফলে উইকেট হাতের এসেও মুঠে থেকে বেরিয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়ার। দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ৪ উইকেটের বিনিময়ে ১১৪। জয়ের জন্য চাই ২৫৭ রান। ক্রিজে রয়েছেন ডাকেট (৫০*) এবং বেন স্টোকস (২৯*)।
ক্যাচ ধরা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন গ্রিন-
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডসেই প্রথম নয়, ওভালে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও এক বিতর্কিত ক্যাচের জন্য খবরের শিরোনামে আসেন তিনি। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ৪৪৪ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে হত ভারতীয় দলকে। রোহিত শর্মা-শুভমান গিলের ওপেনিং জুটি তরতরিয়ে এগোচ্ছিলেনও কিছুক্ষণ, কিন্তু ছন্দপতন হয় শুভমানের (Shubman Gill) উইকেটে। দলের স্কোর তখন ৪১, স্কট বোল্যান্ডের (Scott Boland) লাফিয়ে ওঠা বল শুভমানের ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে উড়ে যায় গালিতে দাঁড়ানো ক্যামেরন গ্রিনের (Cameron Green) দিকে। সামনের দিকে বেশ খানিকটা ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা ধরেন তিনি। তবে তিনি বলটি আদৌ সঠিকভাভবে তালুবন্দী করেছিলেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশে থেকেই যায়।
সঠিক সময় তাঁর আঙুল বলের নীচে এসেছিলো কিনা দীর্ঘ সময় রিপ্লে দেখেও তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো স্বয়ং তৃতীয় আম্পায়ারের। সাধারণত ‘বেনিফিট অফ দ্য ডাউট’ যায় ব্যাটারের পক্ষে। কিন্তু ওভালে দেখা গেলো উল্টোটাই। শুভমানকে (Shubman Gill) আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার। ১৮ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় তাঁকে।
মুহূর্তে এই আউট নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিতর্কে মতামত জানান অনেকেই। রিকি পন্টিং (Ricky Ponting) তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরোর সিদ্ধান্ত সঠিক বললেও বীরেন্দ্র শেহবাগ, ওয়াসিম জাফররা গিল নট-আউট ছিলেন বলেই জানান। প্রাক্তন ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri) ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় বলেন, “ব্যাটারের নাম স্টিভ স্মিথ হলে এটা আউট দিতেন না আম্পায়ার।”